বেসরকারি সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় দখল ও ‘ফোকলা’ করিবার যেই অভিযোগ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে উঠিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক হইলেও বিস্ময়কর নহে। রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের ক্ষমতাবলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পূর্বেকার ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙিয়া তথায় বসানো হয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের। পেশিশক্তি ব্যবহার করিয়া আরও অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে ঢুকিয়া কয়েক শত কোটি টাকা লুটিয়াছেন তাহারা। আমরা জানি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয়ের সম্পূর্ণ অংশই আসে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি হইতে। বিগত আমলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের উপর বর্ধিত বেতন ও ফি চাপানো হইয়াছে একাধিকবার। ঐরূপ পদক্ষেপের সহিত গোষ্ঠীগত স্বার্থের সংযোগ এখন স্পষ্ট হইল।
ইহাও স্পষ্ট, আলোচ্য দখলদারিত্বে সরাসরি ক্ষতির শিকার হইয়াছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডসমূহের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত মানহীন শিক্ষকদের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মানের অবনমনও নিশ্চয় ঘটিয়াছে। এমনকি তৎকালে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে সনদ বিক্রয়ের যেই সকল অভিযোগ উঠিয়াছিল, উহাও এইরূপ অনিয়মেরই ধারাবাহিকতা। মোদ্দা কথা, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিতে আসিয়া উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে প্রতারণার শিকার। বলা বাহুল্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু সচ্ছল পরিবারের সন্তানই পড়ে না; অনেক অসচ্ছল পরিবারও সর্বস্ব বাজি রাখিয়া সন্তান ভর্তি করাইয়া থাকেন। বেতন-ফি সংগ্রহ করিতে ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চ সুদে ঋণ এবং জমিজমা বিক্রয়ের দৃষ্টান্ত বিরল নহে। এইরূপ অর্থ কাহাদের ভোগে যাইতেছিল, আলোচ্য প্রতিবেদনে উহার খণ্ডচিত্র উঠিয়া আসিয়াছে।
বিগত আমলে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের ঘটনা একদিক হইতে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নহে। যেইখানে দুর্নীতি-অনিয়মই ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ম; প্রশাসনসহ সর্বত্র ছিল ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে দলীয়করণের জয়জয়কার, সেইখানে বিশ্ববিদ্যালয় ঐ সকল অপরাধ হইতে মুক্ত থাকিতে পারে না। তদুপরি বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাত্রই ছিল আঘাতযোগ্য, তাহাদের সম্পত্তিও ছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর নিকট সহজলভ্য। আমরা দেখিয়াছি, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক নহে, এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীমাত্রই তাহাদের মালিকানাধীন ব্যাংক-বীমা বা অন্য প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের দখলদারদের নিকট হারাইয়াছিল। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভও এহেন দখলদারিত্ব ঠেকাইতে পারে নাই।
আমরা জানি, একদিকে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা, অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতুলতার কারণে নব্বই দশকের প্রথম ভাগে যখন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি মিলে, উহার পর হইতেই উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাত দ্রুত বিকশিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক হইতে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছাড়াইয়া যায়। ইহাও স্বীকার্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপযুক্ত নজরদারির অভাব এবং কর্তৃপক্ষের মুনাফাপ্রিয়তার কারণে বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশিত মান অর্জন করিতে পারে নাই। তাই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খাতটির প্রতি সরকারের যথাযথ নজর প্রদান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদন অনুসারে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধাক্কায় শেখ হাসিনার পতনের পর হইতে উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের দখলদাররাও লাপাত্তা। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানসমূহের মূল মালিকগণ কর্তৃত্ব বুঝিয়া লইতেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আইন মানিয়া প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাদের মাধ্যমে কার্যক্রম চালু রাখুক। পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ায় সুরাহা হউক। এতৎসত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সজাগ না থাকিলে মূল অংশীজনরূপে শিক্ষার্থীদের বঞ্চনা ঘুচিবে না। তাই সরকার এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। শুধু উহা নহে, ভবিষ্যতে যাহাতে এহেন দখলদারিত্বের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই বিষয়েও আইনিসহ উপযুক্ত পদক্ষেপ কাম্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র ব সরক র দখলদ র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সেনা প্রত্যাহার ছাড়া যুদ্ধবিরতি নয়: হামাস
গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার না হলে যুদ্ধবিরতি হবে না বলে জানিয়েছে হামাস। হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অবশ্যই গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। গতকাল বুধবার ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবটি বিবেচনা করার পর প্রথম মন্তব্যে এ বার্তা জানায় হামাস।
আলজাজিরা জানায়, হামাস জানিয়েছে, যতক্ষণ ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে পুরোপুরি সরে না যাবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে তারা মুক্তি দেবে না। ফিলিস্তিন এবং তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলি সেনাদের তাদের ভূমিতে অবস্থানকে সামরিক দখলদারিত্ব হিসেবে বিবেচনা করে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
এদিকে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার কথিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সেনা মোতায়েন থাকবে। তাঁর এ ঘোষণার কারণে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির আলোচনা আরও কঠিন হয়ে পড়ল। গত মাসে চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর গাজার বিস্তৃত অঞ্চল (প্রায় অর্ধেক) দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনারা। বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, অতীতের মতো ইসরায়েলি সেনারা যেসব অঞ্চল পরিষ্কার অথবা দখল করেছে, সেসব অঞ্চল থেকে সরে যাচ্ছে না।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মাখোঁ বলেছেন, গাজায় মানুষের দুর্দশা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়। একমাত্র যুদ্ধবিরতি হলেই বাকি পণবন্দিরা মুক্তি পাবেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে এসব কথা বলেন তিনি।
গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে কমপক্ষে আরও ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিরল সফর করেছেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তিনি এ সফর করেন বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়। উপত্যকাটিতে নির্বিচারে ইসরায়েলি বাহিনী হামলার মধ্যেই সফর করলেন নেতানিয়াহু। এ সময় হামলা আরও জোরদারের কথা বলেন তিনি।
এএফপি জানায়, চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) বলেছে, ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গাজাকে কার্যত ফিলিস্তিনি ও তাদের সাহায্যে আসা মানুষের কবরস্থানে পরিণত করেছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লাখো মানুষ চরম বিপদে পড়েছেন। এমএসএফের সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরোলে বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনি ও তাদের সাহায্যে আসা ব্যক্তিদের গণকবরে পরিণত হয়েছে।’