Samakal:
2025-03-30@19:41:40 GMT

সুশাসনে নাহি ছাড়

Published: 19th, January 2025 GMT

সুশাসনে নাহি ছাড়

বেসরকারি সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় দখল ও ‘ফোকলা’ করিবার যেই অভিযোগ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে উঠিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক হইলেও বিস্ময়কর নহে। রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের ক্ষমতাবলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পূর্বেকার ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙিয়া তথায় বসানো হয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের। পেশিশক্তি ব্যবহার করিয়া আরও অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে ঢুকিয়া কয়েক শত কোটি টাকা লুটিয়াছেন তাহারা। আমরা জানি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয়ের সম্পূর্ণ অংশই আসে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি হইতে। বিগত আমলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের উপর বর্ধিত বেতন ও ফি চাপানো হইয়াছে একাধিকবার। ঐরূপ পদক্ষেপের সহিত গোষ্ঠীগত স্বার্থের সংযোগ এখন স্পষ্ট হইল।

ইহাও স্পষ্ট, আলোচ্য দখলদারিত্বে সরাসরি ক্ষতির শিকার হইয়াছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডসমূহের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত মানহীন শিক্ষকদের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মানের অবনমনও নিশ্চয় ঘটিয়াছে। এমনকি তৎকালে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে সনদ বিক্রয়ের যেই সকল অভিযোগ উঠিয়াছিল, উহাও এইরূপ অনিয়মেরই ধারাবাহিকতা। মোদ্দা কথা, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিতে আসিয়া উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে প্রতারণার শিকার। বলা বাহুল্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু সচ্ছল পরিবারের সন্তানই পড়ে না; অনেক অসচ্ছল পরিবারও সর্বস্ব বাজি রাখিয়া সন্তান ভর্তি করাইয়া থাকেন। বেতন-ফি সংগ্রহ করিতে ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চ সুদে ঋণ এবং জমিজমা বিক্রয়ের দৃষ্টান্ত বিরল নহে। এইরূপ অর্থ কাহাদের ভোগে যাইতেছিল, আলোচ্য প্রতিবেদনে উহার খণ্ডচিত্র উঠিয়া আসিয়াছে।  

বিগত আমলে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের ঘটনা একদিক হইতে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নহে। যেইখানে দুর্নীতি-অনিয়মই ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ম; প্রশাসনসহ সর্বত্র ছিল ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে দলীয়করণের জয়জয়কার, সেইখানে বিশ্ববিদ্যালয় ঐ সকল অপরাধ হইতে মুক্ত থাকিতে পারে না। তদুপরি বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাত্রই ছিল আঘাতযোগ্য, তাহাদের সম্পত্তিও ছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর নিকট সহজলভ্য। আমরা দেখিয়াছি, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক নহে, এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীমাত্রই তাহাদের মালিকানাধীন ব্যাংক-বীমা বা অন্য প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের দখলদারদের নিকট হারাইয়াছিল। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভও এহেন দখলদারিত্ব ঠেকাইতে পারে নাই। 

আমরা জানি, একদিকে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা, অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতুলতার কারণে নব্বই দশকের প্রথম ভাগে যখন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি মিলে, উহার পর হইতেই উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাত দ্রুত বিকশিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক হইতে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছাড়াইয়া যায়। ইহাও স্বীকার্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপযুক্ত নজরদারির অভাব এবং কর্তৃপক্ষের মুনাফাপ্রিয়তার কারণে বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশিত মান অর্জন করিতে পারে নাই। তাই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খাতটির প্রতি সরকারের যথাযথ নজর প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রতিবেদন অনুসারে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধাক্কায় শেখ হাসিনার পতনের পর হইতে উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের দখলদাররাও লাপাত্তা। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানসমূহের মূল মালিকগণ কর্তৃত্ব বুঝিয়া লইতেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আইন মানিয়া প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাদের মাধ্যমে কার্যক্রম চালু রাখুক। পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ায় সুরাহা হউক। এতৎসত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সজাগ না থাকিলে মূল অংশীজনরূপে শিক্ষার্থীদের বঞ্চনা ঘুচিবে না। তাই সরকার এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। শুধু উহা নহে, ভবিষ্যতে যাহাতে এহেন দখলদারিত্বের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই বিষয়েও আইনিসহ উপযুক্ত পদক্ষেপ কাম্য।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র ব সরক র দখলদ র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই

ফতুল্লার রূপায়ন টাউনে আধিপত্য বিস্তার করে জোর পূর্বক রুপায়ন টাউন জামে মসজিদের খতিবকে অপসারণকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত এম এ হোসাইন রাজ ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী।

আসামিদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর ভুক্তভোগী এম এ হোসাইন রাজ আবেদন করেন। শুক্রবার (২৮ মার্চ)  বাদ জুম্মা পুলিশ সুপার বরাবর এ আবেদন দায়ের করেন। 

আবদনে এম এ হোসাইন রাজ উল্লেখ করেন, তিনি স্ব-পরিবারে দীর্ঘদিন যাবৎ ভূইগড় রূপায়ন টাউন সোসাইটিতে ফ্ল্যাট মালিক হয়ে বসবাস করছেন। তিনি রূপায়ন টাউনের একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক এবং রূপায়ন টাউন সোসাইটির প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক। 

রূপায়ন টাউনবাসী গত ৫ আগষ্টের পর হতে রূপাউন টাউনের ভিতরে বহিরাগত স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা আধিপত্য বিস্তার, হুকুমজারী, চাঁদাবাজী, রাহাজানি এবং দখলদারিত্বের স্বীকার হয়ে আসছে।

এ এ ঘটনায় এম এ হোসাইন রাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসী তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময় তাকে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে । 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুযারি এম এ হোসাইন রাজ বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং বিষয়টি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকে অবহিত করি। 

এর জের ধরে গত ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সন্ত্রাসীদের নেতা কাজী মাজিদুল হক, তোফায়েল হোসেন লিটন এর পক্ষে ৩ জন এম এ হোসাইন রাজ এর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়।

চাঁদা নেয়ার বিষয়টি গোপন না রাখলে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে কাউকে কিছু জানান নাই। 

গত ২০ মার্চ রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদের ভিতরে তারাবির নামাজ শেষে মসজিদের খতিবকে অপসারণের অযুহাতে ওই সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চাঁদার দাবিতে এম এ হোসাইন রাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।

এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করার পরও উক্ত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। 

সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ দুুপুরের দিকে রূপায়ন টাউন ২৫নং বিল্ডিংয়ে এম এ হোসাইন রাজ এ অফিসে এসে সন্ত্রাসীরা পূর্বের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। 

তিনি দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিবাদীরা আমাকে মারধর করার জন্য উদ্যত হয়ে অফিসের ড্রয়ারে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে বলে দাবিকৃত বাকী চাঁদার টাকা রাত্র ১০টার মধ্যে না দিলে তাকেসহ তার পরিবারের লোকজনকে প্রাণে শেষ করিয়া ফেলিবে।  অথবা এছাড়াও রূপায়ন হইতে জোর পূর্বক তাদেরকে বাহির করে দিয়ে ফ্ল্যাট দখল করে নিবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হওয়ায় তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রম, হুকুমজারী, চাঁদাবাজী, রাহাজানি এবং দখলদারিত্ব সহ আধিপত্য বিস্তার করে আসিতেছে।  যার পরিপ্রেক্ষিতে রূপায়ণ টাউনবাসী সারাক্ষণই জান-মালের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে।

তাই রুপায়ন টাউনবাসী ও মুসুল্লিদের নিয়ে পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও আমাদের নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ দায়ের করি। এসপি সাহেব আমাদের অভিযোগ আমলে নেন এবং তৎক্ষনাৎ ফতুল্লা মডেল থানার ওসি সাহেবকে ফোন করে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন এবং এবিষয় তিনি নিজে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। 

উল্লেখ্য,  গত ২০ মার্চ  ফতুল্লার রূপায়ন টাউনে আধিপত্য বিস্তার করে জোর পূর্বক রুপায়ন টাউন জামে মসজিদের খতিব সায়েখ জামাল উদ্দিন (৫০) কে অব্যাহতি ও লাহ্নিত করাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় খতিবসহ তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- খতিব সায়েখ জামাল উদ্দিন (৫০), এম এ হোসাইন রাজ (৩৬) ও আঃ হান্নান (৪০)।  

এ ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে অভিযুক্ত করে শুক্রবার সকালে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন হামলায় আহত এম এ হোসাইন রাজ।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব মিসর-কাতারের
  • যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা বর্বর হামলা অব্যাহত
  • কাজলা নদীর বুকে ফসলের ঢেউ
  • ফতুল্লায় মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই