বিশ্বায়নের কালে যোগাযোগ বনাম সংযোগ
Published: 19th, January 2025 GMT
যোগাযোগ ও সংযোগ শব্দ দুটোর মধ্যে আমি একটি বিভাজন করি। ইংরেজিতে যদি বলি, তাহলে আমার কাছে যোগাযাগ মানে ‘কানেকশন’; সংযোগ মানে ‘কানেক্টেডনেস’। আমি মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব ও সামাজিক মাধ্যমের বিস্তারের কারণে বিশ্বায়নের কালে পৃথিবীতে নিশ্চিতভাবে যোগাযোগ বেড়েছে। একই সঙ্গে মানুষে মানুষে সংযোগ কমেছে।
জানি, আমার এ মন্তব্যে অনেকেই ভ্রু কুঁচকাবেন। যে ত্বরান্বিত গতিতে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব এবং সামাজিক মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে কী করে আমি বলি যে, পৃথিবী আগের চেয়ে আরও বেশি সংযুক্ত নয়? যুক্তি দেখানো হবে, বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৯০০ কোটি, পৃথিবীতে ৪০০ কোটিরও বেশি মানুষের চৌকস ফোন তথা ‘স্মার্টফোন’ আছে এবং ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ আন্তর্যোগ বা ‘ইন্টারনেট’ ব্যবহার করেন।
মানব-ইতিহাসে মানুষে মানুষে কখনও কি এর চেয়ে বেশি যোগাযোগ ছিল? কথা সত্য। কিন্তু আবারও বলি, যোগাযোগ মানেই সংযোগ নয় এবং এ দুয়ের যে পার্থক্য, সেটা শুধু কথার কথা নয়
অথবা বায়বীয় কিছু নয়। পার্থক্যটি একেবারেই বাস্তব।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, বর্তমান বিশ্বে মানুষে মানুষে যোগাযোগ অকল্পনীয় গতিতে বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির নানান পন্থা ব্যবহার করে এই গোলার্ধের এক প্রান্ত থেকে একজন মানুষ চোখের পলকে অন্য প্রান্তের আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। একজন আরেক জনকে লিখতে পারেন; একজন আরেক জনের সঙ্গে সংবাদ, তথ্য, ফটো, সচলচিত্র সব সহভাগ করে নিতে পারেন। তারা পরস্পর ব্যক্তিগত সংবাদ আদান-প্রদান করতে পারেন। এই যেমন তারা কী করছেন, বন্ধুবান্ধব কে কোথায় আছেন, আকর্ষণীয় কিছু ঘটছে কিনা সংস্কৃতি অঙ্গনে। কিছুক্ষণ অবয়বপত্র তথা ফেসবুক ঘুরে আসুন। বুঝতে পারবেন, আমি কী বলতে চাইছি। সবার জন্য উন্মুক্ত এমন একটা মাধ্যম নিশ্চিতভাবে মানব-যোগাযোগ বাড়িয়েছে।
সুতরাং মানব-যোগাযোগ অবশ্যই বেড়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানান বিষয়ের ওপরে মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করেন। আপনি এসব বিষয়ের ওপরে নানান মাধ্যমে কিছু লিখুন। দেখবেন, মিনিটের মধ্যে মানুষ সেখানে এসে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। হয় তারা আপনার সঙ্গে একমত হচ্ছেন অথবা ভিন্নমত পোষণ করছেন এবং এ প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন মত, দৃষ্টিভঙ্গি, তথ্য উপস্থাপিত হচ্ছে। এর ফলে উৎসাহব্যঞ্জক ও উদ্দীপক আলাপ-আলোচনা, বিতর্ক ও মতবিনিময় শুরু হচ্ছে।
একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, সামাজিক মাধ্যম মানুষকে একত্র করেছে; তাদের কণ্ঠস্বরকে জড়ো করেছে এবং সেই সঙ্গে সামাজিক আন্দোলন প্রসারিত করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগের ‘আরব বসন্ত’ বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। টুইটারে (বর্তমানে এক্স নামে পরিচিত) টুইট এবং পুনঃটুইটের মাধ্যমে আরও সংক্ষিপ্তভাবে মানুষে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এর ফলে বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ এক নতুন মাত্রিকতায় পৌঁছে গেছে, যেখানে সামাজিক যোগাযোগের পূরক প্রভাব অভাবনীয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ সব কিছু কি মানুষে মানুষে সংযোগের বিকল্প হতে পারে? আমি মনে করি, মানব-সংযোগ শুধু সামাজিক মাধ্যম বা তথ্যপ্রযুক্তির যোগাযোগ নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। মানব যোগাযোগের ক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দূর থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে। কখনও কখনও অজ্ঞাতনামা হয়ে থাকেন, কখনও পরস্পর চাক্ষুষ দেখাও হয় না। এ রকম যোগাযোগ কখনও কখনও অস্পষ্ট, যান্ত্রিক এবং দুঃখজনকভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয় না। প্রায়ই মানুষে মানুষে যোগাযোগ করার এক পন্থা হয়ে দাঁড়ায় অর্থহীন এক ‘পছন্দ’ চিহ্ন, এবং কখনও কখনও অসংগত প্রতিক্রিয়া। যেমন– আমি দেখেছি যে, কারও প্রদত্ত পিতা-মাতার মৃত্যু সংবাদে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানান ‘পছন্দ’ চিহ্ন দিয়ে। এ যোগাযোগ সত্যিকার অর্থে কোনো যোগাযোগই নয় এবং এগুলো মানুষজনের অসংবেদনশীলতারই পরাকাষ্ঠা।
মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ একদম অন্য জিনিস। সংযোগের জন্য প্রয়োজন সশরীরে উপস্থিত হওয়া; সামনাসামনি কথাবার্তা, চাক্ষুষ যোগাযোগ। মানুষকে স্পর্শ করার মতো ব্যাপার মানব-সংযোগের জন্য অপরিহার্য, যেমন প্রয়োজন সশরীরে উপস্থিতি। এসবের মাধ্যমে আমরা অন্যের হৃদয়কে স্পর্শ করি; একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করি ও সত্যিকারভাবে একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হই। কোনো এক সহকর্মীকে একটি ই-বার্তা পাঠানো এক কথা; কিন্তু তাঁর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করা– তিনি আপনার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে যাবেন কিনা, সে একেবারে অন্য কথা। এতে সময় বেশি লাগে? সম্ভবত। কিন্তু মানব-সংযোগের জন্য সময় এক অপরিহার্য উপকরণ। কারণ, চূড়ান্ত বিচারে আমরা একে অন্যের সময়টুকুই চাই এবং আমরাও একে অন্যকে সময়ই দিতে পারি।
আধুনিক যুগে একই বাড়িতে এক ছাদের নিচে বসবাস করেও মানুষ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, কিন্তু ঘরের মানুষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে না। একটি বাড়িতে প্রায়ই দেখা যায়, সন্ধ্যার পরে বাবা টিভিতে খবর দেখছেন; যুক্ত তিনি বহির্বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে; মা পাশের বাড়ির মহিলার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তিনিও যুক্ত বহির্জগতের একজনের সঙ্গে। বাড়ির ছেলেটি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কোনো খেলা খেলছে। যুক্ত সে একটি যন্ত্রের সঙ্গে এবং বাড়ির মেয়েটি অবয়বপত্রে বার্তা চালাচালি করছে তার বন্ধুদের সঙ্গে। সেও যুক্ত বন্ধুদের সঙ্গে। পরিবারের প্রত্যেকেরই বাইরের জগতের কারও না কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু বাড়ির কারও সঙ্গে কারও সংযুক্তি নেই। একসঙ্গে একই টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার রীতি আজকের দুনিয়ায় বড়ই বিরল।
চূড়ান্ত বিচারে মানব সংযোগের জন্য মানব-যোগাযোগ একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হতে পারে, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয় কোনোমতেই। যোগাযোগ সংযোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে, কিন্তু যোগাযোগ সংযোগের বিকল্প নয়। সেই সঙ্গে ‘প্রয়োজনীয়’ এবং ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ধারণার মধ্যেও ভেদরেখা টানা দরকার। যেমন– যোগাযোগ প্রয়োজনীয় কিন্তু সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ। একটা রূপক ব্যবহার করি। সংযোগ হচ্ছে একটি ‘ঘর’, যোগাযোগ হচ্ছে সেই ঘরের ‘দরজা’। দরজাকে ঘর ভাবলে বড় ভুল করা হবে এবং একইভাবে ভুল করা হবে যদি আমরা দরজাতেই থেমে যাই, ঘরে প্রবেশ না করি।
সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং
দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, যুক্তরাষ্ট্র
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য গ র জন য কখনও কখনও কখনও ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ
চট্টগ্রামের পাঁচ থানার পুলিশ তটস্থ দুই চিহ্নিত সন্ত্রাসীর কাছে। তাদের নিজস্ব বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে দিশেহারা বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, খুলশী, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী থানার অন্তত ২০ লাখ মানুষ। সবার কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল (৩৪) ও সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৫)। খুন, অপহরণ, ছিনতাই, জমি দখল– এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তারা করেন না। কিন্তু পুলিশ তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না। ফেসবুক লাইভে গত মঙ্গলবার সাজ্জাদ হত্যার হুমকি দিলে জিডি করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার। সিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে তথ্যদাতা ও সহায়তাকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির নুরুল আমিনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৯টি মামলা রয়েছে। সাইফুলের দুই ভাই– সবুজ ওরফে বার্মা সবুজ ও মো. ফাহিমও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তিন ভাইয়ের শতাধিক সদস্যের আলাদা বাহিনী রয়েছে। সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে অন্তত ৩৫টি। অন্যদিকে সাজ্জাদ হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধেও তিন খুনসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, খুলশী থানা ও আশপাশের এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ করে তিন ভাই। গত ১১ অক্টোবর বায়েজিদ থানার শান্তিনগর এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন মোহাম্মদ ইমন (২৮)।
ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাইফুল ও সবুজকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর পর গত ২৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন সবুজ।
২০১০ সালে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অপরাধে হাতেখড়ি সাইফুলের। এর পর নানা অপরাধে কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। কিন্তু প্রতিবার জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সক্রিয় হন সাইফুল। নগরের ষোলশহর এলাকায় জুয়ার আসর ও মাদকের ডেরা খোলেন। স্থানীয়দের সহায়তায় মাদকের আখড়া ও জুয়ার আসর বন্ধ করে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা গত ১২ জানুয়ারি দিন-দুপুরে লোকজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। নাসির উদ্দিন জানান, এলাকায় জুয়া, মাদকসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কমিটি করা হয়। কমিটির তথ্যে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আখড়া বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বার্মা সাইফুলের নেতৃত্বে স্থানীয়দের ওপর হামলা চালানো হয়।
গত ২৫ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে মন্দিরের পুরোহিতসহ তিনজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে বার্মা সাইফুলের বাহিনী। পরে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন বাছির আহম্মদ ওরফে রানা। গত ১১ অক্টোবর বাছিরকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সাইফুল বাহিনীর হামলার শিকার হয় পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বায়েজিদ থানা পুলিশের সঙ্গে সাইফুলের সখ্য রয়েছে। এ জন্য অন্যান্য থানা এলাকায় অপরাধ করেও তিনি নিরাপদ আছেন নিজের এলাকায়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও সাইফুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন– তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী কি আওয়ামী দোসরদের তৈরি করা তালিকা? সেদিন ওসি ফোন করে বললেন, কয়েকজন স্থানীয় ছেলেকে রাতে পুলিশের টহল টিমকে সহযোগিতার জন্য পাঠাতে। তখন তালিকা কি পকেটে থাকে?
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘একজন সন্ত্রাসীর কাছে কেন সহযোগিতা চাইতে যাব? সন্ত্রাসীরা নিজেকে রক্ষায় অনেক কিছুই বলে। সাইফুল ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সে থাকতে পারে– এমন সম্ভাব্য সব জায়গায় হানা দেওয়া হচ্ছে। তার সহযোগীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
তিন খুনের পরও অধরা সাজ্জাদ
বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে হামলা করান। নয়তো প্রকাশ্যে চালান গুলি। বিদেশে পলাতক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের শিষ্য হিসেবে ছোট সাজ্জাদের অপরাধে হাতেখড়ি হলেও, এখন নিজেই চালান বাহিনী। গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে নগরের কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে আধিপত্যের লড়াইয়ে গুলিতে নিহত হন মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছার (৩২)। এ ঘটনায় হাটহাজারী ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুলে নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে গুলি চালান সাজ্জাদ। ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে গুলি করে হত্যা করেন ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৬)। পরে গত ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। দুই পুলিশসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই মাসেও তাঁর নাগাল পায়নি পুলিশ। অবশ্য ২৭ জানুয়ারি অস্ত্রসহ তাঁর ছয় অনুসারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় সাজ্জাদের বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত পাঁচ বাসিন্দা জানান, মানুষ সাজ্জাদের বাহিনীর কাছে অসহায়। এখানে তাঁকে চাঁদা না দিয়ে একটি ইটও সরানো যায় না। একে একে তিনটি খুনের পরও আঁতাতের কারণে সাজ্জাদকে ধরে না পুলিশ।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) রইছ উদ্দিন বলেন, সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে গেলে গুলি করে পালিয়ে যান তিনি। গ্রেপ্তার করে তাঁর কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করাই পুলিশের লক্ষ্য।