একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন ইশতিয়াক আহমেদ। সংসারে রয়েছে তাঁর স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে। সামান্য আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা। 
এর মধ্যে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম নগরের  একটি বেসরকারি স্কুলে ছোট মেয়েকে ভর্তি করাতে গিয়ে ইশতিয়াকের চোখ কপালে ওঠে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি বাবদ দিতে হবে ৬ হাজার টাকা, প্রতি মাসে বেতন দেড় হাজার এবং ডায়েরি, খাতা ইত্যাদি বাবদ লাগবে ১ হাজার ৮০০ টাকা। দুই রঙের কাপড়ে সেলাই করতে হবে স্কুল পোশাক; খরচ পড়বে ৪ হাজার। এর সঙ্গে লাগবে জুতা-মোজা। বাইরে থেকে কিনতে হবে ছয়টি বই; দাম পড়বে দেড়  থেকে দুই হাজার টাকা। এসব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েকে ভর্তি না করেই বাসায় ফেরেন এই অভিভাবক।
এ অবস্থা শুধু ইশতিয়াক আহমেদের নয়, তাঁর মতো অনেক অভিভাবক নতুন বছরে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। এর বড় কারণ, গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে প্রায় শিক্ষা উপকরণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ থেকে ১৫ পৃষ্ঠার একটি ছোট বই কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। খাতা, কলম, পেন্সিল, রাবার, শার্পনার, জ্যামিতি বক্সসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। একটু ভালোমানের ছোট থেকে মাঝারি সাইজের একটি স্কুলব্যাগের দাম এক হাজার টাকার ওপরে। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সব মিলে এক শিক্ষার্থীর পেছনে খরচ পড়ছে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার 
টাকা; যা অনেকের পক্ষেই বহন করা অসম্ভব। শিক্ষা খরচের এমন বাড়তি চাপে দিশেহারা  নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। 
চট্টগ্রামে শিক্ষাসামগ্রী বিক্রির প্রধান তিনটি মার্কেট নগরের আন্দরকিল্লা, রেয়াজউদ্দিন বাজার ও চকবাজার। এসব মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, এবার সবই বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। গত বছর যেসব পেন্সিল প্রতি ডজন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এবার সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। প্লে-ওয়ান ও প্রথম শ্রেণির একটি ১০ থেকে ১২ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, যা গতবার ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ৩০ থেকে ৩৫ পৃষ্ঠার একটি খাতার দাম পড়ছে ৪০ টাকা, যা গতবার ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। কয়েক পৃষ্ঠা বাড়লেই দাম পড়ছে অনেক বেশি। মানভেদে প্রতি ডজন কলমের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি দিস্তা (খুচরা পৃষ্ঠা) খাতার দাম পড়ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা। গতবার মাঝারি আকারের জ্যামিতি বক্সের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা থাকলেও, এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
চকবাজার মোড়ের শাহেনশাহ মার্কেটের নিউ একাডেমিক লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারি দোকানে মেয়ের জন্য বই কিনতে আসা শামীম আহমেদ বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ের জন্য বই কিনতে এসেছিলাম। সামান্য কয়েক পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম নাকি ২০০ টাকার ওপরে! গত বছর ছয়টি বই কিনেছিলাম ৩৫০ টাকায়। এখন সেসব বইয়ের দাম পড়ছে প্রায় দুই হাজার টাকা। এত টাকা খরচ করে সন্তানদের কীভাবে পড়াবে কম আয়ের মানুষ?’
আরেক অভিভাবক পাপিয়া ইসলাম বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলসহ ভোগ্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস। সেখানে শিক্ষা উপকরণের বাড়তি দাম মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।’ 
নিউ একাডেমিক লাইব্রেরির মালিক রাজীব দে বলেন, ‘গতবার ছয় থেকে সাত প্রকারের এক সেট বই ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কেনা গেলেও, এবার একই বইয়ের দাম পড়ছে দুই হাজারের বেশি। অনেকে এত দাম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে, তাই দামও বেশি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বাড়তি ব্যয়ের চাপ সামলাতে না পেরে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য কম টাকায় শিক্ষার্থী ভর্তির পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে সরকারসহ দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সন্তানকে স্কুল ভর্তি করা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বাড়তি ব্যয়ের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। লাগামহীনভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়লেও তা নজরদারিতে উদাসীন প্রশাসন, যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।’ 
আন্দরকিল্লা প্রিন্ট অ্যান্ড প্রিন্টিং সমিতির এক নেতা বলেন, ‘শিক্ষার প্রায় সব উপকরণের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এতে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে যেতে একটি বড় অংশের মানুষ বেশি কষ্টে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। তবে কেন দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে সরকার বা প্রশাসন নীরব।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইয় র দ ম র দ ম পড়ছ উপকরণ র বই ক ন সরক র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

হঠাৎ অতিথি আপ্যায়নে

আগে থেকে না জানিয়ে হঠাৎ করে বাসায় অতিথি এলে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কীভাবে তাদের আপ্যায়ন করা যায় সেটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতি এড়াতে ফ্রিজে কিছু ফ্রোজেন স্ন্যাকস রাখা যেতে পারে। রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী জিনিয়া ইসলাম

হাফ মুন পাই 
উপকরণ: চিকেন কিমা ১ কাপ, আদা ও রসুন বাটা ১ চা চামচ করে, লবণ পরিমাণমতো, তেল ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি হাফ কাপ, কাঁচামরিচ কুচি ২ চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া হাফ চা চামচ, গাজর কুচি হাফ কাপ, ময়দা দেড় টেবিল চামচ, দুধ ১ কাপ, ধনেপাতা ২ টেবিল চামচ। পাইয়ের ডো: পানি দেড় কাপ, চিনি দেড় চা চামচ, বাটার দেড় টেবিল চামচ, ময়দা দেড় কাপ। ডিপিংয়ের জন্য: ডিম ফেটানো ২টি, ব্রেড ক্রাম্বস, ভাজার জন্য তেল ১ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি: তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজুন। নরম হলে আদা, রসুন বাটা, কাঁচামরিচ কুচি, লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া দিন। পরে চিকেনের কিমা দিয়ে ভেজে নিন। গাজর দিন। এখন ময়দা চেলে ছিটিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে, যেন ময়দা দলা হয়ে না যায়। দুধ ঢেলে নাড়তে থাকুন। চিকেন দুধে মিশে ঘন হলে ধনেপাতা দিয়ে নামান। প‍্যানে পানি নিন। গরম হলে তাতে বাটার-চিনি দিন। ময়দা চেলে ঢেলে দিন এবং নাড়ুন। ঢেকে 
রাখুন ১০ মিনিট। ডোটা হাত দিয়ে ভালো করে মথে নরম করুন। এখন ডো নিয়ে পাতলা রুটি তৈরি করে লুচি সেপে কেটে নিন। তার মধ‍্যে চিকেনের ফিলিং দিয়ে হাফ মুন সেপে পাই তৈরি করুন। সব বানানো হলে ব্রেড ক্রাম্বসে গড়িয়ে হাফ মুন ফ্রিজে রেখে দিন। পরে তেল গরম করে তাতে ভেজে নিন। 

বিফ পানতারাস   
উপকরণ: বিফ কিমা সেদ্ধ ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি হাফ কাপ, কাঁচামরিচ কুচি ১ চামচ, টমেটো সস ৩ চা চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ ১চা চামচ, আদা বাটা হাফ চা চামচ, রসুন বাটা হাফ চা চামচ, জিরা গুঁড়া হাফ চা চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ। পান্তারাসের ব‍্যাটার: ময়দা ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ২ চা চামচ, লবণ হাফ চা চামচ, ডিম ১টি, ধনেপাতা কুচি ১ চা চামচ, পানি দেড় কাপ। ডিপিংয়ের জন্য: ডিম ১টি, ব্রেড ক্রাম্ব ভাজার জন্য তেল হাফ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি: তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ ও মরিচ কুচি দিন। হালকা ভাজা হলে লবণ, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা গুঁড়া দিন। নেড়ে কষিয়ে সেদ্ধ বিফ কিমা দিন। একটু ভেজে টমেটো সস দিন। সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে গেলে কর্নফ্লাওয়ার পানিতে গুলে ঢেলে দিন। ঘন হলে নামিয়ে নিন। একটি বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, লবণ, ধনেপাতা নিন। পানির সঙ্গে ডিম ভালো করে ফেটে নিন। এখন ময়দার মধ‍্যে পানি ঢালুন অল্প অল্প করে। খুব ঘন বা খুব পাতলা হবে না ব‍্যাটার। মাঝারি হবে। একটি প‍্যান চুলায় দিয়ে গরম করে তেল ব্রাশ করে নিন। এখন ময়দার ব্যাটার প‍্যানে সামান‍্য ঢেলে প‍্যান ঘুরিয়ে নিন; যাতে প‍্যানের চারপাশে ব্যাটার না লেগে যায়। ঢেকে দিন। এক-দুই মিনিট পর ঢাকনা খুলে পানতাসের সিট তুলে নিন। এখন কিমা ওই সিটের মাঝখানে দিন। চারপাশ থেকে মুড়িয়ে নিন। শেপ ইচ্ছামতো করতে পারেন। রোলের মতো বা চারকোনা করে বানিয়ে নিন সব পানতারাস। ফেটানো ডিমে ডিপ করে ব্রেড ক্রাম্ব দিয়ে গড়িয়ে নিন। এভাবে ডিপে সংরক্ষণ করতে পারেন।

বিফ চাপালি কাবাব   
উপকরণ: বিফ কিমা ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ৩ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, গোলমরিচ গুঁড়া হাফ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি মাঝারি ১টা, কাঁচামরিচ কুচি ২-৩টি, বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, টমেটো কুচি ২ টেবিল চামচ, ডিম ১টি, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ। টমেটো স্লাইস ৬টি, তেল হাফ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি: বিফ ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কিমা করুন। তেল ছাড়া সব উপকরণ মিশিয়ে মাখান। কাবাবের জন্য কিমা ১৫ থেকে ২০ মিনিট মথে নিতে হয়। ১০ মিনিট রেস্টে রেখে দিন ম্যারিনেশনের জন্য। এরপর কিমা হাতের তালুতে নিয়ে চেপে চেপে গোল চ‍্যাপটা করে কাবাব বানিয়ে নিন। এভাবে বানিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে ফ্রোজেন করে রাখতে পারেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিভাবকের স্বার্থ দেখবে কে?
  • হঠাৎ অতিথি আপ্যায়নে