Samakal:
2025-03-03@14:24:54 GMT

গাজায় ৫০ শতাংশ হাসপাতাল বন্ধ

Published: 19th, January 2025 GMT

গাজায় ৫০ শতাংশ হাসপাতাল বন্ধ

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী খান ইউনিসের ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাস করেন আবির আল-আওয়াদির। সেখান থেকে যতদূর চোখ যায়, দেখা যায় উপত্যকাটির যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ছবি। তবুও আবির প্রতি মুহূর্তে বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতির ক্ষণগণনা করতে থাকেন। কারণ, এর ওপর নির্ভর করছে তাঁর মেয়ে হানার জীবন।

আবির যখনই তাঁর ১৫ বছর বয়সী মেয়ে হানার মুখের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে দেন, তখনই সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। কারণ, সামান্য আলোর ঝলকও সে সইতে পারে না। আলো পড়লেই তার ফোলা চোখে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। চোখের সামনে মেয়ের ভয়ানক কষ্ট সহ্য করতে হয় আবিরকে। এ ছাড়া আর কিছুই করার উপায় নেই তাঁর। হানার শরীর ক্যান্সার গ্রাস করেছে। তিন মাস ধরে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই রয়েছে সে। তাই যুদ্ধবিরতিই তার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে যেতে পারে হানাসহ আহত অনেক ফিলিস্তিনি।

রোববার প্রথম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়। আবির বলেন, আমি জানি না, হানা আর কতদিন বেঁচে থাকবে। তবে তার চিকিৎসা তো শুরু হবে। তার মতো হাজারো ফিলিস্তিনি যুদ্ধবিরতি ও রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। চুক্তির অংশ হিসেবে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ায় আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য সেখানে যেতে পারবেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার হাজারো ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস করছেন। কেউ নেমেছেন যুদ্ধবিরতি উদযাপন করতে, কেউ প্রিয়জনের কবর জিয়ারত করতে, আবার কেউ ফিরে যাচ্ছেন তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িতে। আর আহতরা আছেন তাদের সুচিকিৎসা হবে কিনা, সে চিন্তায়।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে উপত্যকাটির স্বাস্থ্যসেবা খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবসম্পদের অবক্ষয় হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনেও সাহসী ভূমিকা পালন করা চিকিৎসকদেরও সামান্যই বেঁছে আছেন।

সিএনওয়াই গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের অধ্যাপক কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জামন ফন ডেন হোক স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে গাজার ক্ষয়ক্ষতির পরিসর যাচাই করেছেন।

১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণে তারা অনুমান করেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং কিছু অবকাঠামোতে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টারের (ইউএনওস্যাট) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরুতে গাজার ৬৯ শতাংশ ভবন ও স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সঙ্গে গাজার রাস্তাঘাটের ৬৮ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। অনেক হাসপাতাল এবং এর আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একাধিক উদাহরণ পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, গাজার ৫০ শতাংশ হাসপাতাল এখন বন্ধ আছে। বাকি হাসপাতালগুলোতে আংশিকভাবে কাজ চলছে। যার মানে হলো, হাসপাতালগুলো খোলা আছে ঠিকই, কিন্তু তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং জটিল আঘাতের কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। ইসরায়েল শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, হামাস হাসপাতাল এবং এর আশপাশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা না থাকায় ব্যাপক সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে অন্তত ১ হাজার ৬০ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

গাজার ছয়টি পাবলিক কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একমাত্র ইনপেশেন্ট সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালও এখন আর চালু নেই বলে সেভ দ্য চিলড্রেন বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন, যা মোকাবিলা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। অনেক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা এখন দক্ষ কর্মী এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া চলছে। এ পরিস্থিতিতে গাজায় বেঁচে থাকা আহতদের চিকিৎসাসেবা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। খবর আল জাজিরার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করে ইইউ: হাদজা লাহবিব

ইইউ’র সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার হাদজা লাহবিব বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের পাশে আছি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল ভিত্তি।

ইইউ কমিশনার গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কে ‘বাংলাদেশ ৩৬ জুলাই ২০২৪’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

ভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে: প্রধান উপদেষ্টা

আবরার ফাহাদকে দেওয়া হচ্ছে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক

ঢাকার ইইউ মিশন বইটি প্রকাশ করেছে। এতে রাস্তার চিত্র ও গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হয়েছে যা জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের সময়ের দমন-পীড়ন এবং একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এ সময় লাহবিব বাংলাদেশের প্রতি ইইউ’র প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তাদের অংশীদারত্বের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য মানবিক, উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ-ইইউ অংশীদারত্ব আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি কৌশলগত অবস্থান। আপনারা আমার সমর্থনের ওপর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারেন।

তিনি জনসাধারণের প্রতিরোধ এবং পরিবর্তনের দাবির প্রতিফলন ঘটাতে শিল্পকর্মের তাৎপর্য তুলে ধরেন। ইইউ কমিশনার গত বছর বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের কথা স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, গত বছর, আমরা সকলেই জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখেছি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বাসস

ঢাকা/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ