গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী খান ইউনিসের ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাস করেন আবির আল-আওয়াদির। সেখান থেকে যতদূর চোখ যায়, দেখা যায় উপত্যকাটির যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ছবি। তবুও আবির প্রতি মুহূর্তে বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতির ক্ষণগণনা করতে থাকেন। কারণ, এর ওপর নির্ভর করছে তাঁর মেয়ে হানার জীবন।

আবির যখনই তাঁর ১৫ বছর বয়সী মেয়ে হানার মুখের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে দেন, তখনই সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। কারণ, সামান্য আলোর ঝলকও সে সইতে পারে না। আলো পড়লেই তার ফোলা চোখে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। চোখের সামনে মেয়ের ভয়ানক কষ্ট সহ্য করতে হয় আবিরকে। এ ছাড়া আর কিছুই করার উপায় নেই তাঁর। হানার শরীর ক্যান্সার গ্রাস করেছে। তিন মাস ধরে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই রয়েছে সে। তাই যুদ্ধবিরতিই তার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে যেতে পারে হানাসহ আহত অনেক ফিলিস্তিনি।

রোববার প্রথম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়। আবির বলেন, আমি জানি না, হানা আর কতদিন বেঁচে থাকবে। তবে তার চিকিৎসা তো শুরু হবে। তার মতো হাজারো ফিলিস্তিনি যুদ্ধবিরতি ও রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। চুক্তির অংশ হিসেবে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ায় আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য সেখানে যেতে পারবেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার হাজারো ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস করছেন। কেউ নেমেছেন যুদ্ধবিরতি উদযাপন করতে, কেউ প্রিয়জনের কবর জিয়ারত করতে, আবার কেউ ফিরে যাচ্ছেন তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িতে। আর আহতরা আছেন তাদের সুচিকিৎসা হবে কিনা, সে চিন্তায়।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে উপত্যকাটির স্বাস্থ্যসেবা খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবসম্পদের অবক্ষয় হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনেও সাহসী ভূমিকা পালন করা চিকিৎসকদেরও সামান্যই বেঁছে আছেন।

সিএনওয়াই গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের অধ্যাপক কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জামন ফন ডেন হোক স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে গাজার ক্ষয়ক্ষতির পরিসর যাচাই করেছেন।

১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণে তারা অনুমান করেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং কিছু অবকাঠামোতে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টারের (ইউএনওস্যাট) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরুতে গাজার ৬৯ শতাংশ ভবন ও স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সঙ্গে গাজার রাস্তাঘাটের ৬৮ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। অনেক হাসপাতাল এবং এর আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একাধিক উদাহরণ পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, গাজার ৫০ শতাংশ হাসপাতাল এখন বন্ধ আছে। বাকি হাসপাতালগুলোতে আংশিকভাবে কাজ চলছে। যার মানে হলো, হাসপাতালগুলো খোলা আছে ঠিকই, কিন্তু তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং জটিল আঘাতের কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। ইসরায়েল শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, হামাস হাসপাতাল এবং এর আশপাশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা না থাকায় ব্যাপক সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে অন্তত ১ হাজার ৬০ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

গাজার ছয়টি পাবলিক কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একমাত্র ইনপেশেন্ট সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালও এখন আর চালু নেই বলে সেভ দ্য চিলড্রেন বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন, যা মোকাবিলা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। অনেক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা এখন দক্ষ কর্মী এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া চলছে। এ পরিস্থিতিতে গাজায় বেঁচে থাকা আহতদের চিকিৎসাসেবা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। খবর আল জাজিরার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু

হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।

মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ