দলীয় নেতাদের সুসংগঠিত করতে ৩০ লাখ টাকা ফান্ড সংগ্রহের অভিযোগে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি পৌর শহরে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের থানায় হস্থান্তর করেছে ডিবি পুলিশ বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা।

ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ফান্ড সংগ্রহের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগে সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শিব শংকর দেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিব শংকর দেবকে সরকারি মহিলা কলেজ এলাকার একটি বাসা থেকে এবং আবুল কালাম আজাদকে তার কলেজ গেইটের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরো পড়ুন:

উচ্ছেদ আতঙ্কে তানোরের ৪০ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার

বিজিবিকে মেরে মহিষ ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা 

তিনি আরো জানান, আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শিব শংকর দেব এখনো থানায় পুলিশ হেফাজতে আছেন।

ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ গ র প ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নেই: মেজবাহ

২৬ বছর চাকরি জীবনে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও কুখ্যাত খুনিসহ অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। এমন সাহসিতাপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ৬২ বার পুরস্কৃত হয়েছি। তবে এবারের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করি। নাফিজ ভাটারা থানার একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

কথাগুলো বলছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ভাটারা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মেজবাহ উদ্দিন।

এএসআই মেজবাহ সমকালকে বলেন, এই কাজের জন্য আমাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) প্রদান করা হয়েছে। এটা আমার একার অর্জন না। ডিসি স্যার থেকে শুরু করে থানার ওসি স্যার পর্যন্ত সবার অর্জন এটা। স্যারদের উৎসাহে এমন কাজ করার সাহস পেয়েছি।

সোমবার বিকেল ৩টায় বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) থানার গ্রুপে পদকের কাগজ দিলে থানার অফিসার থেকে শুরু করে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজকে আমার জন্য বাহিনী গর্বিত। বাকি চাকরি জীবন এভাবেই অপরাধীদের আতঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের জন্য চাকরি করে যেতে চাই।

২০২৫ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনকে বিপিএম পদক প্রদান করা হয়। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

একটি সূত্র জানায়, এখন থেকে পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও ভালো কাজের জন্য সারা বছর বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হবে। আগে সারা বছর কাজের পর বছর শেষে এসে পদক প্রদান করা হতো। এতে অনেক ভালো কাজ করেও পদক বঞ্চিত হতেন সদস্যরা। এখন থেকে এটার সুযোগ নেই। ভালো কাজ করলেই সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বারিধারা জে-ব্লক এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করতে গেলে তার চাকুর আঘাতে আহত হন এএসআই মেজবাহ উদ্দিন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নাফিজকে গ্রেপ্তারের পর তার বীরত্বের প্রশংসা করেন নেটিজেনরা। এরপর পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার থেকে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রশংসা করেন।

মেজবাহ বলেন, আসামি নাফিজ চাঁদার দাবিতে বারিধারা জে-ব্লকে অবস্থান করছে বলে খবর আসে। তাকে ধরতে অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যে আমি তাকে ধরে ফেলি। এর এক মিনিটের মধ্যে সে চাকু দিয়ে আমাকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপরও তাকে ছাড়েনি। এরপর হাতে কামড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় অপরাধী নাফিজ। সেদিন জীবন বাজি রেখে তাকে আটক করি।

চাকরি জীবনে ডিএমপিতে পদায়ন এই প্রথম। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা মহানগরে ছিনতাই ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আসে। থানা থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আমরা জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য আসছি, এখানে কোনো অপরাধী থাকবে না।

তিনি বলেন, বাহিনীর জন্য এমন কাজ করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পেরেছি। পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে। দেশের জন্য এমন সাহসিকতা কাজের জন্য স্ত্রী ও সন্তানরাও আজ গর্বিত।

জানা যায়, মেজবাহ ২০০০ সালে ১৯ মে কনস্টেবল পদে পুলিশে ভর্তি হয়। এরপর ২০১৭ সালে ১০ মার্চ তিনি পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন। সর্বশেষ গত বছরের ৮ নভেম্বর মেজবাহ ডিএমপির ভাটারা থানায় বদলি হয়ে আসেন। এর আগে তিনি খুলনা, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

ভালো কাজের জন্য ৬২ বার পুরস্কার পান তিনি। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানায় তার জন্ম। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মেজবাহ। এক ভাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। বাকি দুই ভাই বিদেশ থাকেন।

ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মেজবাহর এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সুপারিশে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ওই সময়ই ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী মেসবাহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ