গত ১৭ বছর ধরে অন্যায়ভাবে জেলে আটক থাকা বিডিআর সদস্যদের মুক্তিসহ সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে জাস্টিস ফর বিডিআর নামের একটি প্লাটফর্ম। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এসব দাবি মেনে না নেওয়া হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা। 

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাত পৌনে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান জাস্টিস ফর বিডিআর এর পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার।

মাহিন সরকার বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে বিডিআর জওয়ানদের ন্যায়বিচার পেতে দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, এ নতুন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন রাখবে। নতুন গঠিত কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে স্বাধীন ও সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। যারা এখনো মুক্তি পাননি, তাদের সবাই মুক্তি পাওয়ার অধিকার রাখেন। নতুন কমিশনের তদন্তের পর যারা অপরাধী তাদের শাস্তি এবং নিরপরাধীদের যথাযথ সম্মান, আত্মমর্যাদা ও কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে হবে। 

তিনি বলেন, “আজ কেন তাদের মুক্তি দেওয়া হলো? ৫ আগস্টের পরপরই কি তাদের মুক্তি দেওয়া সম্ভব ছিল না? আজ আমরা তাদের মুক্তিসহ ছয় দফা দাবি সরকারের কাছে রেখে যাচ্ছি। দাবিগুলো আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মেনে না নেওয়া হলে রাজপথে এর সমাধান করা হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহমুদা হৃদি বলেন, “আজ ২৫৬ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে আমাদের তৎপরতা চালিয়ে যাব। যতদিন পর্যন্ত এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন না হয় ততদিন আমরা থামব না।”

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কাজ করে যাওয়া ব্যারিস্টার পারভেজ হোসেন বলেন, “আজ অনেক ভালো লাগছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা দরজা এখন উন্মুক্ত হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে কি পরিমাণ ষড়যন্ত্র ছিল তা বলার বাইরে। সেদিন দরবার হলে এত বড় ঘটনা ঘটল, যা গোয়েন্দা সংস্থা জানতই না। মূলত এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সরকারি নির্দেশনায়। ফলে সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি এবং মূল পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।” 

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরে নতুন তদন্ত শুরু হলে এর পেছনের মূলহোতাদের খোঁজা শুরু হয়। পরে মহামান্য হাইকোর্ট জানান, আগের সব রায় ছিল মিথ্যা। এখন নতুন করে তদন্তের স্বার্থে ২৫৬ জনকে মুক্ত করা হয়। আমরা বলতে চাই, এ ভুল দণ্ডের মাধ্যমে যাদের জেলে রাখা হয়েছে, তাদের শাস্তি স্থগিত করে দ্রুত জামিন দেওয়া হোক। তদন্তের পর তারা দোষী সাব্যস্ত হলে আবার তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে। কিন্তু একজন নির্দোষকে এক দিনও আটকে রাখা না হোক।”

তিনি আরও বলেন, “আজ কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে, তথাকথিত রায়ের উপর ভিত্তি করে তাদের ১৭ বছর ধরে জেলে রাখা হয়েছিল। আজ আমরা একটু হলেও সুবিচার পেয়েছি। এ ধারা অব্যাহত রেখে আমরা সবাইকে মুক্ত করতে পারব বলে প্রত্যাশা রাখি।”

এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আয়াতুল্লাহ বেহেস্তী, সহ-সমন্বয়ক কানিজসহ ষড়যন্ত্রের শিকার বিভিন্ন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- খুনি হাসিনার ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায় বাতিল করে আগামী ৩০ জানুয়ারির কর্মদিবসের মধ্যে ঢালাওভাবে আটককৃত বিডিআর সদস্যদের সিআরপিসি ৪০১ ধারায় মুক্তি দিতে হবে; গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ‘ব্যতীত’ শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) নং ধারা বাদ দিতে হবে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত এবং ষড়যন্ত্রের শিকার দেশপ্রেমিক বিডিআর সদস্যদের কমিশনে যুক্ত করতে হবে; পিলখানার ভেতরে এবং বাইরে শহীদ হওয়া ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং জেলের ভেতর মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন সাপেক্ষে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তাদের বাকি দাবিগুলো হলো- স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে নির্দোষ প্রমাণিত সব বিডিআর সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; বিজিবি আইন ২০১০ বাতিল করে পূর্বের বিডিআর আইন পুনর্বহাল করতে হবে এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করা বিজিবির নামকে পরিবর্তন করে বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে; পিলখানার ভেতরে ও বাইরে সব শহীদের স্মরণে জাতীয় দিবস চালু করতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব ড আর ক ত কর সরক র তদন ত ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শহরের ভায়না মোড়ে ঢাকা যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, মাগুরাসহ নতুন ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মাগুরা মেডিকেল কলেজ অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটি মেডিকেল কলেজে যেসব স্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার প্রায় শতভাগ এখানে রয়েছে। তাই মাগুরার জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে মাগুরা মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে।’

মাগুরা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়া ধর বলেন, ‘আমাদের মাগুরা মেডিকেল কলেজে বড় মেডিকেল কলেজগুলোর মতো প্রায় সব সুবিধা থাকার পরও শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকার কারণে এটি বন্ধের অনেক অপচেষ্টা চলছে। যে কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে এবং মাগুরার মানুষের জনস্বার্থে এখানে আমরা আজ অবরোধ করেছি, যাতে এই মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়।’

মানববন্ধনের কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান খান বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ মাগুরার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান। এটা কোনোভাবেই বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সামনে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।’

জানতে চাইলে মাগুরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হবে, এমন আনুষ্ঠানিক চিঠি বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নতুন মেডিকেল কলেজগুলো নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা বক্তব্যে হয়তো শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শুনেছি, শিক্ষার্থীরা সেই উদ্বেগের জায়গা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন বিলম্ব হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে: সালাহউদ্দিন
  • নির্বাচন দেরিতে হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ
  • মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
  • চাঁদা না দেওয়ায় পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী নেতার বিরুদ্ধে