নিরলস অধ্যয়নে মেডিকেলে ভর্তিতে দেশসেরা সুশোভন
Published: 19th, January 2025 GMT
কোনো প্রাইভেট শিক্ষক বা কোচিং না করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন খুলনার সুশোভন বাছাড়। মূলত স্কুলশিক্ষক বাবার গাইডলাইন এবং বাসায় বসে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র নিরলস অধ্যয়ন করে সুশোভন এ সাফল্য অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা সুভাষচন্দ্র বাছাড়। সন্তানের এ সাফল্যে বিস্মিত এবং আবেগ আপ্লুত তিনি।
দেশসেরা সুশোভন বাছাড় খুলনা নগরীর বয়রা আজিজের মোড় এলাকার সুভাষচন্দ্র বাছাড়ের একমাত্র সন্তান। তার মা গৃহিণী।
বাবা সুভাষচন্দ্র বাছাড় রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাইজিংবিডি-কে জানান, তিনি বিকেল ৫টার দিকে অনলাইনে তার সন্তানের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফল জানতে পারেন। এ সময় মেরিট লিস্টে তার ছেলের নাম এক নম্বরে থাকায় তিনি অনেকটা বিস্মিত হন। একইসঙ্গে আবেগ আপ্লুতও হন। প্রথম দিকে বিশ্বাস করতে না পারলেও বারবার যাচাই করে নিশ্চিত হন।
আরো পড়ুন:
ছাত্রাবাসে সিট পেতে লাগবে ডোপ টেস্ট সনদ
কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
সুভাষচন্দ্র বাছাড় জানান, তিনি খুলনা মহানগরীর টিএন্ডটি স্কুলের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সুশোভন বাছাড় তার একমাত্র সন্তান। সুশোভন তারই স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। প্রতি শ্রেণিতে প্রথম স্থান এবং বৃত্তি লাভ করে। একইসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ অর্জন করে। সর্বশেষ খুলনার সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয় কৃতিত্বের সঙ্গে। এরপর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
বাবা সুভাষচন্দ্র বাছাড় জানান, স্কুল জীবন থেকে এ পর্যন্ত তার সন্তানকে কোচিংয়ে পড়াতে হয়নি। এমনকি, বাসায় কোনো প্রাইভেট শিক্ষকও ছিল না। বাবা হিসেবে তিনিই তাকে গাইড করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের বেশি বেশি বই কিনে দিয়েছেন। আর সন্তানও স্কুল-কলেজে শ্রেণিকক্ষে কম উপস্থিত না থাকলেও বাসায় বসে অধিক সময় এবং নিরলস অধ্যয়ন করেছে। তাতেই সাফল্য এসেছে।
তিনি আরো জানান, ছেলে দেশসেরা হবেন এটা তার প্রত্যাশায় ছিল না। তবে তার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ৯০ এর বেশি হবে বলে ধারণা করছিলেন। সেখানে সুশোভন ৯০ দশমিক ৭৫ নম্বর অর্জন করেছে।
একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের সাফল্যে সুভাষচন্দ্র বাছাড় গর্বিত এবং উচ্ছ্বসিত। এর পেছনে কঠোর অধ্যবসায় কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন, নিরলস পরিশ্রম এবং বেশি বেশি বই পড়লে সাফল্য আসবেই, যার দৃষ্টান্ত তার সন্তান সুশোভন বাছাড়।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ১৯টি কেন্দ্রের একাধিক ভেন্যুতে এ পরীক্ষা হয়।
এ বছর আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬১টি। কোটাসহ মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। এ হিসাবে একটি আসনের জন্য ২৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন সুশোভন বাছাড়। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ নামের এক শিক্ষার্থী এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন শেখ তাসনিম ফেরদৌস। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ ন কর ছ স ফল য কর ছ ন পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’
বাবা ইজিবাইকচালক, মা গৃহিণী। এক টুকরো ভিটে ও টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এই দারিদ্র্যও দমাতে পারেনি মেধাবী মেয়েটিকে। দারিদ্র্যকে জয় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এমন কৃতিত্বের অধিকারী নন্দিনী রানী সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
নন্দিনীর সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও এলাকার লোকজন সবাই খুশি। তবে আর্থিক টানাপড়েনে মেয়ের পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই নন্দিনীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
নন্দিনী পিএসসিতে জিপিএ ৫, জেএসসিতে জিপিএ ৪.৪৬, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান।
নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। প্রতিবেশীরা নন্দিনীর সাফল্যে তাদের বাড়িতে এসে শুভ কামনা জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে রান্না করছেন নন্দিনীর মা সীমা সরকার। মায়ের পাশে বসে রয়েছেন নন্দিনী ও তাঁর বোন বিনা।
নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ইজিবাইক চালিয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে। তাঁর দুই মেয়েই বেশ মেধাবী। মেয়েদের যে চাহিদা, সেটা বাবা হিসেবে কখনও পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের কারণে তাঁর মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে তিনি অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে পড়ানোর মতো টাকাপয়সা নাই আমার। মেডিকেলে মেয়ের পড়াশোনায় কেউ যদি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসত তাহলে চিন্তা থাকত না।’
নন্দিনীর মা সীমা রানী সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। পড়ার জন্য নাই কোনো টেবিল-চেয়ার। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়ে এতদূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’
নন্দিনী রানী সরকার একজন সফল চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছি। স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার সামর্থ্য নাই, এত টাকা দিয়ে আমাকে পড়াবেন। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন, আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁর স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি। এখন মেডিকেলে ভর্তির জন্য নন্দিনীর পাশে তার স্কুল থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা নন্দিনীর মতো অদম্য মেধাবীদের দিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। মেধাবীদের এগিয়ে নিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।