উচ্ছেদ আতঙ্কে তানোরের ৪০ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার
Published: 19th, January 2025 GMT
উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার ৪০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার। প্রায় ৪৫ বছর ধরে তারা উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের গুড়ইল মৌজার একটি অর্পিত সম্পত্তিতে বসবাস করছেন। এই জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে পাড়ার রিপন মুর্মু নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ নিয়ে রিপন মুর্মু তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।
তানোর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আমি জমিজমার বিষয়টা দেখি না। তারপরেও অভিযোগ যখন হয়েছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরো পড়ুন:
বিজিবিকে মেরে মহিষ ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা
বিএনপি নেতার বাড়িতে মিলল মাদক ও টাকা, স্ত্রী-ছেলে গ্রেপ্তার
অভিযোগে মোসারুল হক দুখু (৬০), বাবুল মৃধা বাবু (৪০), মিজান সরকার (৩৫), মো.
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে গুড়ইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বাতা ও পলিথিন দিয়ে বাড়ির উঠোন ঘিরেছিলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের রিপন মুর্মু। আগুনে পলিথিন পুড়ে গেছে। গ্রামবাসী জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন মোসারুল হকসহ অন্যরা। তারা পাড়ার শুরুতেই থাকা রিপনের বাড়ির বেড়ায় আগুন দেন। পাড়ার সবাই একযোগে বের হয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। তখন তারা আগুন নেভান।
পাড়ার হেরা টুডু, শিবলাল মুর্মু, হরেন মুর্মু, বিশ্বনাথ সরেন, বাবুলাল সরেন, জগেন টুডু, মীরেন মার্ডি, মনোসুরি কিস্কু, রসিক মার্ডি, পাতরাজ টুডু, ফিলিপ কিস্কু, সৈনিক হাঁসদাসহ অন্যরা এই প্রতিবেদকে ঘিরে ধরেন। তারা বলেন, মৌজার ১০ একর ৩০ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন শিবদাস ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি। ষাটের দশকে রাজশাহীর দারুশা দাঙ্গার পর শিবদাস ভট্টাচার্য ভারতে চলে যান। তারপর তার জমি অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যায়। প্রায় ৩৩ বিঘা জমির মধ্যে ১০ বিঘায় তারা ৪০টি পরিবার ৪৫ বছর ধরে বসবাস করছেন।
আরএস রেকর্ডে এখনো জমির মালিক হিসেবে শিবদাস ভট্টাচার্যের নাম লেখা আছে। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটও এই সম্পত্তির মালিক হিসেবে শিবদাস ভট্টাচার্যের নাম আসে। অথচ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শরিফুল ইসলাম ভুলু এ জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলোর।
তারা জানান, তাদের বসতভিটা দখলে নিতে শরিফুল ইসলাম ভুলু আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় রায় এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পক্ষে। এরপর ভুলু আবার আপিল করেছেন। সেই মামলা এখনো চলমান। এর মধ্যেই ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড করছে না।
গ্রামের গৃহবধূ সাবিনা টুডু বলেন, “১৮ বছর আগে বিয়ের পর এই গ্রামে এসেছি। কয়েকবছর ধরে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে মাঝেই লোকজন এসে অস্ত্রপাতি দেখায়। গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। আমরা ব্যাপক অত্যাচারের মুখে আছি। কখন না জানি তুলে দেবে সেই চিন্তা করছি।”
রিপন মুর্মু বলেন, “এই চক্রটা শিবদাস ভট্টাচার্যের ফেলে যাওয়া প্রায় ২০ বিঘা ধানি জমি দখল করে আছে। অথচ ওই জমিও তাদের না। ওটা খাস জমি, ভূমিহীনদের অধিকার। ওরা এখন আমাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বাকি ১০ বিঘা জমিও দখলে নিতে চায়।”
তিনি বলেন, “গত পরশু (শুক্রবার) রাতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তারপর সকালে থানায় অভিযোগ করি। সারাদিনেও পুলিশ আসেনি। সন্ধ্যায় একজন পুলিশ এসে দেখে গেছে। কিন্তু তারপর মামলা রেকর্ড করেনি। আমাদের কাছে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক মনে হচ্ছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম ভুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আরেক অভিযুক্ত মোসারুল হক দুখু বলেন, “শরিফুল ইসলাম ভুলু ভালো লোক। আমরা তার মাঠের জমি চাষাবাদ করি। আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মিথ্যা অভিযোগ।”
তিনি দাবি করেন, “সব জমির মালিক এখন শরিফুল ইসলাম ভুলু।” ভারতে যাওয়া ব্যক্তির অর্পিত সম্পত্তি তার নামে কীভাবে হলো জানতে চাইলে মোসারুল বলেন, “শিবদাস ভারতে যাওয়ার আগে বিনিময় করেছিলেন। যার সঙ্গে তিনি বিনিময় করেন, তার কাছ থেকে শরিফুল জমি কিনেছেন। ভুল করে জমি অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র কর ড ত রপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিলীন হওয়ার পথে চার গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি
যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন বিদ্যালয়ের ভবনের কাছে চলে এসেছে। দুই দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি এখন যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে ভাঙন চললেও ২৮ মার্চ থেকে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে। নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়টির আশপাশে অর্ধশত বসতঘর ও বিস্তীর্ণ জনপথ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় বিদ্যালয়টির আশপাশের লোকজন বসতভিটা ভেঙে নিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
চর ডাকাতিয়াপাড়া এলাকার কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী শোয়েব হোসেন বলেন, চর ডাকাতিয়াপাড়া, মাগুরিহাট, ফারাজিপাড়া ও কিসের মোড় গ্রামের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টি এটি। চারটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করে। ভাঙন বিদ্যালয়ের পাকা ভবন থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে আছে। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ পর পর নদীর পাড় বিশাল আকার ধরে পানিতে ভেঙে পড়ছে। তাই ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের তিন শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খোলাবাড়ি থেকে চরডাকাতিয়া হয়ে বড়খাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। ওই অংশের মধ্যে খোলাবাড়ি, হাজারী, মাগুরিহাট, চর মাগুরিহাট, খানপাড়া, মাঝিপাড়া, ডাকাতিয়া গুচ্ছগ্রাম, চরডাকাতিয়া ও চর ডাকাতিয়াপাড়ার গ্রামের কয়েক হাজার বসতভিটা ও শত শত একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। মাঝেমধ্যে কয়েকটি স্থানে পাউবো শুধু তীব্র ভাঙনের সময় কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই সব গ্রামের অবশিষ্ট বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চর ডাকাতিয়াপাড়া বাসিন্দা হামিদুল হকের বসতবাড়ি গত বুধবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি এখন ওই এলাকার এক আত্মীয়য়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, সব কৃষিজমি অনেক আগেই নদীর মধ্যে গেছে। শুধু বাড়ির ভিটাটুকুই ছিল। তা–ও নদী হয়ে গেল। নদীভাঙনে সব শেষ। এখন থাকার জায়গাও নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিয়ারসহ সুন্দর একটি পাকা ভবন নির্মাণ হয়। ভবনে অফিসসহ চারটি কক্ষ আছে। বিদ্যালয়ে ১০২ শিক্ষার্থী পড়ে। নদীভাঙনের আগে বিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন ৬ জন শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, নদীর ভাঙন বিদ্যালয় থেকে অনেক দূরেই ছিল। কয়েক মাস ধরে ভাঙতে ভাঙতে একদম বিদ্যালয়ের কাছে চলে আসে। বিদ্যালয়ের আশপাশে বহু বসতবাড়ি ছিল। সেসব বসতবাড়িও বিলীন হয়েছে। ভাঙন এখন বিদ্যালয়ের ভবনের একদম কাছে। মনে হচ্ছে না বিদ্যালয়টি ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনরোধে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষায় সেখানেও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, যাতে বিদ্যালয়টি রক্ষা পায়।