স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘রক্ত ঝরলেও দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’ রোববার দুপুরে তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনে বিসিএস ক্যাডার ও জুডিশিয়াল সার্ভিস কর্মকর্তাদের সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণের সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধান ও গাছ কাটা নিয়ে দুইপক্ষে সংঘর্ষে হয়েছে। এতে দুইপক্ষের লোকজনই আহত হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হয়েছে। জনগণ সরকারকে সাহায্য করছে। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আগে কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন সেটা করা হচ্ছে বলেই সমস্যা সামনে আসছে।’

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড.

মো. মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ভূমি সংস্থার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ জে এম সালাহউদ্দিন নাগরী ও ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্‌রাহিম।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমির মালিকানা নিয়ে দেওয়ানি আদালতে যুগ যুগ ধরে চলমান হাজার-হাজার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। ভূমি সেবা আরও সহজ করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন প্রক্রিয়া আরো জনবান্ধব করতে হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নেই: মেজবাহ

২৬ বছর চাকরি জীবনে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও কুখ্যাত খুনিসহ অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। এমন সাহসিতাপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ৬২ বার পুরস্কৃত হয়েছি। তবে এবারের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করি। নাফিজ ভাটারা থানার একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

কথাগুলো বলছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ভাটারা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মেজবাহ উদ্দিন।

এএসআই মেজবাহ সমকালকে বলেন, এই কাজের জন্য আমাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) প্রদান করা হয়েছে। এটা আমার একার অর্জন না। ডিসি স্যার থেকে শুরু করে থানার ওসি স্যার পর্যন্ত সবার অর্জন এটা। স্যারদের উৎসাহে এমন কাজ করার সাহস পেয়েছি।

সোমবার বিকেল ৩টায় বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) থানার গ্রুপে পদকের কাগজ দিলে থানার অফিসার থেকে শুরু করে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজকে আমার জন্য বাহিনী গর্বিত। বাকি চাকরি জীবন এভাবেই অপরাধীদের আতঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের জন্য চাকরি করে যেতে চাই।

২০২৫ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনকে বিপিএম পদক প্রদান করা হয়। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

একটি সূত্র জানায়, এখন থেকে পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও ভালো কাজের জন্য সারা বছর বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হবে। আগে সারা বছর কাজের পর বছর শেষে এসে পদক প্রদান করা হতো। এতে অনেক ভালো কাজ করেও পদক বঞ্চিত হতেন সদস্যরা। এখন থেকে এটার সুযোগ নেই। ভালো কাজ করলেই সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বারিধারা জে-ব্লক এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করতে গেলে তার চাকুর আঘাতে আহত হন এএসআই মেজবাহ উদ্দিন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নাফিজকে গ্রেপ্তারের পর তার বীরত্বের প্রশংসা করেন নেটিজেনরা। এরপর পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার থেকে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রশংসা করেন।

মেজবাহ বলেন, আসামি নাফিজ চাঁদার দাবিতে বারিধারা জে-ব্লকে অবস্থান করছে বলে খবর আসে। তাকে ধরতে অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যে আমি তাকে ধরে ফেলি। এর এক মিনিটের মধ্যে সে চাকু দিয়ে আমাকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপরও তাকে ছাড়েনি। এরপর হাতে কামড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় অপরাধী নাফিজ। সেদিন জীবন বাজি রেখে তাকে আটক করি।

চাকরি জীবনে ডিএমপিতে পদায়ন এই প্রথম। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা মহানগরে ছিনতাই ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আসে। থানা থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আমরা জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য আসছি, এখানে কোনো অপরাধী থাকবে না।

তিনি বলেন, বাহিনীর জন্য এমন কাজ করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পেরেছি। পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে। দেশের জন্য এমন সাহসিকতা কাজের জন্য স্ত্রী ও সন্তানরাও আজ গর্বিত।

জানা যায়, মেজবাহ ২০০০ সালে ১৯ মে কনস্টেবল পদে পুলিশে ভর্তি হয়। এরপর ২০১৭ সালে ১০ মার্চ তিনি পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন। সর্বশেষ গত বছরের ৮ নভেম্বর মেজবাহ ডিএমপির ভাটারা থানায় বদলি হয়ে আসেন। এর আগে তিনি খুলনা, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

ভালো কাজের জন্য ৬২ বার পুরস্কার পান তিনি। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানায় তার জন্ম। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মেজবাহ। এক ভাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। বাকি দুই ভাই বিদেশ থাকেন।

ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মেজবাহর এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সুপারিশে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ওই সময়ই ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী মেসবাহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ