কবির বিন আনোয়ার ও আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা
Published: 19th, January 2025 GMT
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও তার স্ত্রী তৌফিকা আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রবিবার (১৯ জানুয়ারি) এই দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।
কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এই মামলা দুটি করা হয়েছে। বিকালে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.
মামলায় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবিরের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৯টি ব্যাংক হিসাবে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বেশি অর্থ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বিজিবিকে মেরে মহিষ ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা
বিএনপি নেতার বাড়িতে মিলল মাদক ও টাকা, স্ত্রী-ছেলে গ্রেপ্তার
পৃথক মামলায় কবির বিন আনোয়ারের স্ত্রী তৌফিকা আহমেদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ৬টি ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলায় কবির বিন আনোয়ার আসামি। স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা দখলে রাখতে সহায়তা করার অভিযোগ এনে কবিরকে আসামি করা হয়েছে।
১৯৮৮ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেন কবির বিন আনোয়ার। সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দেন এবং পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি অবসরে যান।
অবসরের পর একই বছরের ৫ জানুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলীয় নির্বাচন কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
কবির বিন আনোয়ার ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুস শহীদের নামে মামলা
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৮টি ব্যাংক হিসাবে ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগে রবিবার তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।
এছাড়া মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদের স্ত্রী উম্মে কুলসুমের বিরুদ্ধে ৩৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।যাচাই-বাছাই করতে তাকে সম্পদ বিবরণীর হিসাব দাখিলে নোটিশ দেবে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, “উম্মে কুলসুমের নামে ও বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, সেজন্য তাকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!
কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল মিলে ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা স্তরের অন্তত সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ‘কাঠখড় পুড়িয়ে’ দীর্ঘদিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়নসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কারণ ও অজুহাতে এখনও অনেক পিছে পড়ে রয়েছে।
মন্ত্রণালয়-দপ্তর-বিভাগ; এ টেবিল-ও টেবিল; বড় কর্তা-মাঝারি কর্তা-ছোট কর্তা– সবার মন রক্ষা করা কঠিন হলেও তা করার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ৮-৯ বছরেও সম্পন্ন করা গেল না! তাহলে কী লাভ হলো এমন সরকারীকরণে? এ দীর্ঘ সময়ে সরকারীকরণের কোনো সুবিধা না পেয়েই অনেকে অবসরে চলে গেছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
অনেক প্রতিষ্ঠানে এক বা দেড়-দুই বছর আগে অর্ধেক সংখ্যক (প্রতিষ্ঠানভেদে কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষক-কর্মচারীর পদায়ন হয়েছে, বাকিগুলো ঝুলন্ত।
না সরকারি-না বেসরকারি অবস্থায় তাদের রীতিমতো গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।
পদায়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্ন রকমের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া কিংবা অবসরে গিয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ম্যানেজ সংস্কৃতি’ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে বসবাস! তা ছাড়া এটি যে কতটা মানসিক পীড়ার কারণ, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে অনুমান করা কঠিন।
সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কতবার যে মূল সনদপত্র এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর কোনো হিসাব নেই। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; আমার মতো অনেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও রেহাই নেই। ফটোকপি আর ফটোকপি। চরম অস্বস্তিকর এক ব্যাপার।
একটি দপ্তরে (তা না হলে দুই জায়গায়) মূল সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে বাকিগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে ‘আন্তঃদাপ্তরিক যোগাযোগ’-এর মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত ছিল।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম, এর একটি বড় কারণ অপরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সরকারীকরণ।
সরকারি হওয়া তিন-সাড়ে তিনশ কলেজের মধ্যে কমপক্ষে দুইশ কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। কোনোটি তিন বছর, কোনোটি আবার পাঁচ-সাত বছর, এমনকি আট-দশ বছর ধরে অধ্যক্ষশূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভারে কলেজগুলো বলতে গেলে ন্যুব্জ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজগুলোয় চলা ভিন্ন রকমের খেলা এখনও শেষ হয়নি। অবসরে গেছেন কিংবা মৃত্যু হয়েছে, এমন শিক্ষকের স্থলে গত সাত-আট বছরে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন অধ্যক্ষহীন সরকারি হওয়া কোনো কোনো কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেও মাত্র দুই-চার মাস কিংবা বড়জোর এক বছরের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন– এমন উদাহরণ এক-দুটি নয়, অনেক। এক কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা লাটে উঠতে বড় বেশি বাকি বলে মনে হয় না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা ও অবহেলা। এভাবেই পার হয়েছে অন্তত আটটি বছর। এ নিয়ে ভালো কোনো আলোচনা নেই। দেশে এখন রাজনীতি, নির্বাচন আর গদি ছাড়া যেন আর কোনো বিষয়ই নেই আলোচনার।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে গেছে। শুধু হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নন, তাদের পরিবার ও নিকটজনও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিড়ম্বনার নিরসন না হলে এমন সরকারীকরণের সার্থকতা কোথায়?
বিমল সরকার: কলাম লেখক, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক