মাত্র ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে ইলিশ! অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও এই দামেই ইলিশ বিক্রির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। আজ রোববার দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ‘স্বল্পমূল্যে’ ইলিশ বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করার পর বিএফডিসিতে দুপুর ২টা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়। 

আগে থেকেই ঘোষণা ছিল ৪৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের সমুদ্রের ইলিশ প্রথম লটে বিক্রি হবে ৮৫০ কেজি। কিন্তু ২টা ৪০ মিনিটিই বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আজ ইলিশ কিনতে এসে ফির গেছেন বহু মানুষ। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১০০ কেজি মাছ।

ইলিশের দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মানুষ যাতে ইলিশের স্বাদ পেতে পারেন সেজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়-ইলিশ কিনে হোন ধন্য’। কিন্তু আজ স্বাদ নিতে এসে অনেকই হতাশ হয়েছেন। 

বিএফডিসির আউটলেটের বিক্রেতা নাজমুল বলেন, আমাদের ২টা ৪০ মিনিটের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। আজকে ১০০ কেজি বিক্রি করেছি। আজ আর বিক্রি করব না। তবে স্টক থাকা সাপেক্ষে বিক্রি চলবে। ক্রেতারা আবার পরদিন এসে কিনতে পারবেন।

রাজধানীর বাংলা মোটর থেকে মাছ কিনতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, কারওয়ান বাজার এসে এখানে ভিড় দেখতে পাই। পরে এসে দেখি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছর ধরে ইলিশ কিনিনি। কিন্তু এখানে এসেও কিনতে পারিনি। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এত অল্প মাছ বিক্রির কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া সাগরের মাছ এমনিতেই বাজারে দাম কম। নদীর মাছের স্বাদ অন্য রকম, ফলে দামও বেশি। তারপরও কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যারা ইলিশ কিনেছেন তাদের মধ্যে অনেক সরকারি কর্মকর্তাকেও দেখেছি। স্বল্প মূল্যের উদ্যোগটি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই থাকল। 

মো.

মোস্তফা নামে নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ইলিশ খাওয়া আমাদের জন্য দুর্লভ। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে শুনছি এখানে কম দামে বিক্রি হবে। এসে খালি হাতে ফিরে গেলাম। 

যারা ইলিশ কিনতে পেরেছেন তারা জানান, বাজারে অনেক বেশি দাম হওয়ায় সবশেষ কবে ইলিশ কিনেছেন তাদের মনে নেই। তবে এখন কম দামে ইলিশ কিনতে পেরে তারা খুশি। 

রাজধানীর ফার্মগেটের বাসিন্দা আতিকুর রহমান দেড় কেজির দুটির ইলিশ কিনেছেন। তিনি বলেন, এত কম দামে ইলিশ কিনতে পারব কল্পনা করিনি। তবে সরকার চাইলে স্বল্পমূল্যের এই কার্যক্রমের আওতা আরও বাড়াতে পারে। তাতে বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ নয়, এর সঙ্গে স্বাদ, রান্না, জীবনযাপন অনেক কিছু জড়িত। ক্রয়সীমার মধ্যে রেখে বাংলাদেশের মানুষের ইলিশ খাওয়ার অধিকার আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা হয়তো সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। আমরা শুধু এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। আরও বেশি কীভাবে মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পারি সেই চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। 

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান বলেন, ইলিশ হবে স্বস্তির মাছ- এটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। প্রথম দিন আমরা মাত্র ১০০ কেজি মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছি। ফলে অনেকেই কিনতে পারেননি। আমরা সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। তবে দুই লটে আমরা ১৭০০ কেজি মাছ বিক্রি করব। আমাদের মূল লক্ষ্য বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। জনসাধারণ যেন ইলিশ খেতে পারে, সেটা যেন তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা যায় এ ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এটা খুবই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। আরও বেশি কি করে দিতে পারি সেই চেষ্টা করব। আমরা বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই।

মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী বলেন, ইলিশ খুব দুর্লভ হয়ে গেছে। আমরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরি। দেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ইলিশ বিক্রির এই উদ্যোগ প্রথম। এর মাধ্যমে সুলভ মূল্যে ইলিশ দিতে পারব। এই মাছটা আমিষের বিরাট উৎস। আমাদের লক্ষ্য থাকবে এই উদ্যোগ যেন দেশব্যাপী পৌঁছে দিতে পারি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১০০ ক জ মৎস য আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।

এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ