বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৯ জানুয়ারি। তিনি ১৯৩৬ সালের এই দিন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি।

দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

বরিশাল:
বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলে জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বরিশাল বিভাগীয় দলনেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আউয়াল মিন্টু বলেন, ‍“গত ১৭ বছর আন্দোলন করেছি, এখনো করছি। এই আন্দোলন দেশের মানুষের সাংবিধানিক, মৌলিক, ভোটের অধিকার ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত চলবে। এসব অধিকার নিশ্চিতের প্রথম কাজ হচ্ছে নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার। সংগ্রামের প্রাথমিক বিজয় পেয়েছি। মূল লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

একই সময়ে অশ্বিনী কুমার হলের পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা করেছে মহানগর বিএনপি। এই সভাতেও প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুগ্ম-আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার।

পঞ্চগড়:
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে দলটির জেলা নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।  

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আদম সুফি, আফাজ উদ্দীন, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি লায়লা আরজুমান বানু মুক্তি, জেলা যুবদলের সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান জাপান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাই দেননি, তিনি সম্মুখসারির যোদ্ধাও ছিলেন। আজকে তার নাম সামনে আসলেই গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা আসে।” 

বিএনপি নেতারা জানান, প্রতিবছরই আমরা কেক কেটে জিউয়ার রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন করি। এবছরও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি পালনের পরিকল্পনা ছিল। তবে, এবার আমাদের দেশ নেত্রী অসুস্থ। তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এজন্য দোয়া ও আলোচনসভার মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল:
আজ বিকেলে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের পুরাতন কোর্ট মসজিদে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এই কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান জিন্নাহ, সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বপন, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এজাজুল হক সবুজ, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম বাবু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ শাফী ইথেন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদপুর:
আজ সকালে চাঁদপুরে দলীয় কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনীর চৌধুরীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, জসিম উদ্দিন খান বাবুল, দেওয়ান মো.

সফিকুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিমুছ সালাম, সহ-সভাপতি ডিএম শাহজাহান, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন বাবর, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক হযরত আলী, জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাদল।

ঢাকা/পলাশ, নাঈম, কাওছার, অমরেশ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ ত ছ ল ন ব এনপ র স ল ইসল ম র ব এনপ উপলক ষ দল র স

এছাড়াও পড়ুন:

ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে

এক পক্ষে প্রায় ৫০০ মানুষ। আরেক পক্ষে অন্তত ৭০০। চলছে পাল্টাপাল্টি গানের লড়াই। তা দেখতে জড়ো হয়েছেন আরও হাজারো নারী-পুরুষ। মধ্যচৈত্রের চামড়াপোড়া গরমে শিল্পী-দর্শনার্থী সবাই দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু বিরামহীনভাবে দুই পক্ষই পাল্লা দিয়ে গান গাইছে। কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ‘বিনা যুদ্ধে’ ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড় দিতে নারাজ!

ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন গানের লড়াই চলে সুনামগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর গ্রামের নতুন হাটিতে। সেদিন ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র। খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ২৮ মার্চ ২০২৫। খুব সকালে সিলেট থেকে রওনা দিই। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব ও সংবাদকর্মী দীপ্ত বৈষ্ণব। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি মুছাপুর। তাদের গ্রামের পাশেই ভেড়াডহর। মূলত প্রদীপের আমন্ত্রণেই সেখানে উরিগান দেখতে যাওয়া।

হিন্দুধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রাকে উপলক্ষ করে বসন্তকালে গাওয়া হয় উরিগান। এসব গান ‘হোরিগান’ বা ‘দোলের গান’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন আর নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় উরিগানের প্রচলন বেশি। এর বাইরেও হাওরাঞ্চলের নানা গ্রামে দোল উৎসবে উরিগান গাওয়া হয়। তবে বৈষ্ণব ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে এ গানের চর্চা তুলনামূলকভাবে বেশি।

কবিগান কিংবা মালজোড়া গানের মতোই উরিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। পার্থক্য কেবল এটাই, কবিগান ও মালজোড়াগানের আসর বসে গ্রামীণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য, অন্যদিকে উরিগান পরিবেশিত হয় অনেকটা হিন্দুধর্মীয় আচার-রীতির অংশ হিসেবে। অবশ্য আরেকটু পার্থক্য রয়েছে, কবিগান ও মালজোড়া গানে মাত্র দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী পাল্টাপাল্টি গান-কথায় বাহাস জমান, বিপরীতে উরিগানে একেকটি পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমসে কম কয়েক শ শিল্পী থাকেন! এমন বর্ণিল আর প্রাণবন্ত গানের ধারা সংগীত-সংস্কৃতিতে কমই আছে।

উরিগানকে সংগীতের একটি পরিচ্ছন্ন ধারা বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ গানের চারটা পর্ব রয়েছে—ঝুমুরগান, লাসগান, চাইলগান ও চলতিগান। এসব মূলত নারীবর্জিত গানের ধারা। পুরুষেরাই নৃত্যসংবলিত এ গানের শিল্পী। বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠে সমবেতভাবে কয়েক শ শিল্পী একই সঙ্গে এ গান পরিবেশন করেন। এক পক্ষের পরিবেশনার পর অপর পক্ষ একই আঙ্গিকের পাল্টা গান পরিবেশন করেন। এভাবেই দিনভর গান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি পক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীরা উরিগানে অংশ না নিলেও শ্রোতা হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ ঠিকই থাকে।

২.

ভেড়াডহর গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রামটিতে পৌঁছার আগেই প্রদীপের সুবাদে প্রাথমিক অনেক তথ্য জানা হয়ে যায়। যেমন ভেড়াডহর গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা উরিগান গাইতে ভেড়াডহরে এসেছেন। রীতি অনুযায়ী এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে উরিগান গাইতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের পুরুষদের প্রায় সবাই সাতসকালে গাইতে আসেন।

পরম্পরা অনুযায়ী কবিরপুর গ্রামের মানুষেরাও সেদিন সাতসকালে ঝুমুরগান গাইতে গাইতে নিজেদের গ্রাম থেকে ভেড়াডহর গ্রামে প্রবেশ করেন। ভেড়াডহর গ্রামে ঢুকে ঝুমুরগান গেয়ে তাঁরা মূলত নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন। দুপুরে পৌঁছার কারণে সে আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দেখা হয়নি, তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মানুষের আলাপ থেকে তা ঠিকই জেনে যাই। আমরা যখন গ্রামটিতে পা রাখি, ততক্ষণে লাসগানের পরিবেশনা শুরু হয়েছে।

হিন্দি-বাংলামিশ্রিত লাসগান মগ্ন হয়ে গাইছেন কবিরপুর গ্রামের শিল্পীরা। লাসগান শেষ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে কয়েক শ মানুষ সমবেত কণ্ঠে চাইলগান পরিবেশন করেন। চাইলগানে নৃত্যসংবলিত শারীরিক কসরতের পাশাপাশি শিল্পীরা দুই হাত ওপরে তুলে হর্ষধ্বনিসহযোগে লাফানোর মতো করে অনবদ্য এক দৃশ্যের জন্ম দেন। তাঁদের পরিবেশনার পর একই রকমভাবে ভেড়াডহরের গ্রামবাসীও গানে গানে কবিরপুরবাসীকে পাল্টা জবাব দেন।

শিল্পীরা জানান, ভেড়াডহরের লোকেরা উরিগানের আয়োজক হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁরা রাইপক্ষ, আর কবিরপুরের মানুষ আমন্ত্রিত দল হওয়ায় তাঁরা শ্যামপক্ষ। সে ধারা মোতাবেকই গান পরিবেশিত হয়।

উরিগান উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছিল দোলবেদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
  • পরিদর্শনে গিয়ে মাগুরার প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে যে কারণে ‘মডেল’ বললেন উপদেষ্টা