বাঁশ-কাঠ ও টিন দিয়ে পাচঁটি মাচাং ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ছাত্রাবাস, একটি ছাত্রী নিবাস,  একটি অফিস কক্ষ ও অন্যটি রান্নাঘর। এর পাশেই করা হয়েছে পাঠদানের ঘর। ‘ম্রো’ ভাষা পাঠদানের জন্যই এই ঘরগুলো বানানো হয়েছে। ছাত্রাবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরুং আনৈই’। এটি ম্রো ভাষার শব্দ। ‘আরুং’ এর অর্থ হল ঊষা এবং ‘আনৈই’ শব্দের অর্থ আলো।

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ৫ নম্বর টংকাবতী ইউনিয়নের ব্রিকফিল বাজার এলাকায় ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গায় এই ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। ক্রামা ধর্মের ধর্মীয় গুরু সিংলক ম্রো, ম্রো জনগোষ্ঠীর ব্যাম্বো ব্যাংক (ম্রো জুমচাষী সমবায় সমিতি) ও টংকাবতী এলাকাবাসী এই ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করেছেন।

আরো পড়ুন: কেমন আছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা?

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ক্রামা ধর্মের ধর্মীয় গুরু লেংইয়াং ম্রো প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এই ছাত্রাবাসটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো, দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পারিং ম্রো, ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো, টংকাবতী ইউপি সদস্য য়ংঙি ম্রোসহ ম্রো জনগোষ্ঠীর শতাধিক নারী-পুরুষ। 

এই ছাত্রাবাসে রয়েছে বাংলা-ইরেজি শিক্ষক দুই জন ও ম্রো ভাষার শিক্ষক দুইজন। প্রথম বছরেই ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই ছাত্রাবাস। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ জন ছাত্রী রয়েছেন। এসব শিক্ষার্থী আলীকদম, থানচির বড় মোদক, নাইক্ষ্যংছড়িসহ দূরদূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ম্রো মাতৃভাষার পাঠদান করানো হয়। সন্ধ্যায় বাংলা-ইরেজি ভাষার পাঠদান করানো হয়।

আরো পড়ুন: ভিন্ন ভাষায় পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচনি প্রচার

রাকলাম পাড়ার মেনপং ম্রো তার ছেলেকে এই ছাত্রাবাসে রেখেছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আমাদের পাড়া থেকে স্কুল অনেক দূরে। তাই পড়ালেখা করানোর জন্য ছেলেকে এই ছাত্রাবাসে রেখেছি। এখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি মাতৃভাষার পড়ালেখা করতে পারবে সে।”

ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো এই ছাত্রাবাস নির্মাণের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, “বাংলা-ইংলিশ পড়তে গিয়ে ম্রো মাতৃভাষা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এটাকে কেন্দ্র করে আমরা ম্রো মাতৃভাষার ছাত্রাবাস চালু করেছি। ছাত্রাবাসের পাশেই একটি সরকারি জুনিয়র ইাই স্কুল রয়েছে। সেখানে বাংলা-ইংরেজি পড়বে আর এই ছাত্রাবাসে ম্রো মাতৃভাষায় লেখাপড়া করবে শিক্ষার্থীরা। এভাবে কিছুটা হলেও নিজেদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।” 

আরো পড়ুন: ‌‘আমি মরে গেলে আমাদের ভাষাও মরে যাবে’

দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পারিং ম্রো ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গা এই ছাত্রাবাসের জন্য দান করেছেন। তিনি বলেন, “বান্দরবানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস। তার মধ্যে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এজন্যই ম্রো অধ্যুষিত এলাকায় ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়েছে। ম্রো জনগোষ্ঠী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া ও নিজস্ব মাতৃভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই ছাত্রাবাস করা হয়েছে।”

আরো পড়ুন: রেংমিটচ্য ভাষার স্কুলে পানির ট্যাংক ও শিক্ষা সামগ্রী দিলো ওয়ালটন প্লাজা

টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো বলেন, “বান্দরবান জেলা ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ম্রো দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে। এরকম ছাত্রাবাস আরো বেশি বেশি হওয়া দরকার। সরকার যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এরকম সরকারিভাবে ছাত্রাবাসের নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরো বেশি অগ্রসর হবে। এই ছাত্রাবাসের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।” 

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ছ ত র ব স জনগ ষ ঠ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ