টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাক ও তামাকজাত পণ্য চাষের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার আইনগত বিধান থাকলেও তার তোয়াক্কা না করেই অধিক লাভের আশায় প্রতিবছর নতুন নতুন ফসলি জমি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছে। 

কৃষকরা দীর্ঘ মেয়াদে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বেশি লাভ ও বহুজাতিক কোম্পানির অর্থায়ন এবং প্রলোভনে প্রতিবছর যুক্ত হচ্ছে তামাক চাষে। তামাক চাষে ‘কারগিল’ নামক সার প্রয়োগের ফলে চাষি ও তার পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, ফসলি জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া জেলায় কমছে ফসলি জমির পরিমাণ।
এদিকে তামাক চাষ নিয়ে উদাসীন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাদের কাছে জেলার তামাক চাষের কোনো ধরনের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, জগৎপুরা, বামনহাটা, চর নিকলা, নিকরাইল, পালিমা, আমুলা, কালিহাতী উপজেলার সল্লা, দেউপুর, চর হামজানী, কদিম হামজানী, পটল, বেরী পটল, জোকারচর, গোহালিয়াবাড়ী, কুর্শাবেনু, গোবিন্দপুর, ধলাটেঙ্গর, টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মামুদ নগর, চর পৌলী, দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন, দেউলী, লাউহাটি, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা, বেকরা, আটাপাড়া, সলিমাবাদ, ধুবুরিয়া, মোকনা, বনগ্রাম, শাহজানী প্রভৃতি অঞ্চলে ঢালাওভাবে তামাক চাষ হচ্ছে।

এর মধ্যে ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর উপজেলায় তামাক চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা তৈরির প্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। 

সরেজমিনে কালিহাতী উপজেলার চরাঞ্চল দুর্গাপুর ইউনিয়নের চরহামজানী, কদিমহামজানী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কৃষকই তামাক চাষের সাথে যুক্ত।

তামাক চাষি আমির আলী, হারেছ মিয়া, শুকুর মামুদসহ অনেকেই জানান, কোম্পানি (তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান) থেকে তাদের বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপল ও কাগজসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। আবার কোম্পানিগুলোই তামাক পাতা কিনে নেয়। টাঙ্গাইল জেলায় মূলত ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানি তামাক চাষে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে বলে জানান তারা।

তামাক চাষি জব্বার মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তামাক চাষ করছেন। তামাক চাষে অন্য ফসলের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ হয়। তার মতে, এতে শরীরের ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও লাভের অংক অনেক বেশি। তাই তামাক চাষ করেন। পাতার আকার ও সংরক্ষণের প্রকারভেদে কোম্পানি দাম কমবেশি নির্ধারণ করে। কোম্পানির লোক ছাড়া বাইরের কেউ তামাক কেনে না- বিক্রি করারও সুযোগ নেই।

টাঙ্গাইল জেলায় তামাক চাষে লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা কোম্পানির দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকেন বলে জানান।

টাঙ্গাইলের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী জানান, তামাক চাষে জড়িত চাষি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তামাক মারাত্মক নিউরো-টক্সিক ইফেক্ট তৈরি করে। শরীরের দীর্ঘদিন এর প্রভাব থাকে। এছাড়া তামাক চাষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তামাক চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সার ও কীটনাশক জমির উর্বরতা হ্রাস করে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাক চাষের পূর্বে অনুমতি নিতে হয়।

তিনি বলেন, “আমি যতদূর জানি, টাঙ্গাইলে তামাক চাষের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয় না। এছাড়া তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান দাদন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের অসহায় কৃষক না বুঝে তাদের জমি ও জীবনের চরম ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গণসচেতনতা এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা দরকার।”

তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ডা.

জিল্লুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে ক্যানসার, পেটের পীড়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, চর্ম, বুক ও ঘাড়ে ব্যথাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া তামাক চাষিদের সন্তানদের ‘গ্রিন টোবাকো সিন্ড্রম’ নামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, “তামাকজাত দ্রব্য এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইন প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।”

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ জানান, তামাক চাষের বিষয়ে সরকারিভাবে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে তারা কোনো মতামত ও তামাক চাষে হস্তক্ষেপ করেন না। তবে তামাক চাষ রোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

ঢাকা/কাওছার/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ালো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির একদিন আগে এ ঘোষণা এলো। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের জয় পাচ্ছে। দেশের অনেক এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে জান্তা বাহিনী এ বছর নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একটি প্রহসন হতে পারে এ নির্বাচন। কারণ, সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে বহুবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মেয়াদ বাড়ানো পরিস্থিতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রচার করে বলেছে, সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখনো আরও অনেক কাজ বাকি আছে। বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রয়োজন।

নির্বাচনের জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে জান্তা সরকার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যদিও তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে ক্লান্ত। কারণ, তারা একাধিক ফ্রন্টে সশস্ত্র বিদ্রোহকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মিয়ানমারের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিশ্রুতিশীল শক্তি হিসেবে দেখা হলেও এখন তা ব্যাপক চাপে রয়েছে। সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং দেশটির জনগণের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ