বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “পাহাড় কেটে পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু নেই। যদি জাদু না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার বিষয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর চলবে না। আমি আসব-যাব, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। কাল আবারো পাহাড় কাটা হবে। ওরা রাতেও পাহাড় কাটে। রাতের বেলা পাহাড় পাহারা দিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন।”

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আয়োজিত পলিথিন বিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন চসিক মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন। 

আরো পড়ুন:

‘মানুষকে শাস্তি দিতে চাইলে বলতে পারেন, তুমি সন্দ্বীপ যাও’ 

ওষুধের ভ্যাট কমানো হবে বলে আশা করছি: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

রিজওয়ানা হাসান পলিথিনের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন, “পলিথিন শপিংব্যাগের বিরোধিতা আমাদের সময়ে শুরু হয়নি। এটি ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হয়েছে। আজ ২০২৫ সালে এসে এটি বাস্তবায়নের কথা আমরা বলছি। কতটা দুর্ভাগ্য আমাদের। জনগণের স্বার্থেই পলিথিন বন্ধ করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে লাগাতার অভিযান করে পলিথিনের ব্যবহার প্রায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ বিকল্পের কথা তোলেনি। বিকল্প আপনার-আমার সবারই আছে। এই ধোঁয়াগুলো তোলা হয়, প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। আপনার দাদা পর্যন্ত যাব কেন? আপনার বাবা কি নিয়ে বাজারে যেতেন? চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন।”

পলিথিনের অপকারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন বাজারে গেলে গাজরের জন্য, শসার জন্য, ফুলকপির জন্য, কাঁচা মরিচের জন্য একটা করে পলিথিন।  মাছ-মাংসের জন্য পলিথিন তো আছেই। এটা আসলে সরকার আইন করেছে বলে আপনাকে মানতে হবে না। আপনাকে এজন্য মানতে হবে, আপনার ভবিষ্যৎ এবং সরকারের জন্য খারাপ। আমাদের দূষিত বাতাস ইনহেইল করেও আপনার বাচ্চা অসুস্থ হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগে খাবার রেখে খাওয়া চরম অনিরাপদ। প্লাস্টিকের গ্লাসে গরম চা-কফি দেওয়া হলে মাইক্রোপ্লাস্টিক লিকেজ হয়ে সিস্টেমে ঢুকে যাচ্ছে। এটা কেন আপনার সন্তানকে খাওয়াবেন?  আপনার মনে রাখতে হবে, এটা খারাপ জিনিস এবং এটির বিকল্প আছে।”

পলিথিন সস্তা নয় উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, “অনেকে সস্তার কথা বলেন। পলিথিন নাকি সস্তা। এটা কেমন করে সস্তা হল? আপনি পলিথিনের জন্য আলাদা টাকা দিচ্ছেন না। পলিথিন যারা বানাচ্ছে তারা কি বিদ্যুৎ ছাড়া বানাচ্ছে? তারা কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে আনছে। আমরা যখন পলিথিন বন্ধের কাজ শুরু করলাম তখন শ্রমিক পুনর্বাসনের ধোঁয়া তুললো। প্লাস্টিক যে তাপমাত্রায় পোড়ানোর কথা তার চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তারা শপিংব্যাগ তৈরি করছে। এতে শ্রমিকদের ডায়োক্সিনের মুখোমুখি করছে, ফলে ক্যান্সার হচ্ছে। তখন প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা বলে না কেন আমার শ্রমিককে ক্যান্সার হতে দেব না?”

পলিথিন কারখানা বন্ধ হলে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দেবে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “গার্মেন্টস বন্ধ হলে মালিক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। তাহলে পলিথিন কারখানা বন্ধ হলে আমরা কেন ক্ষতিপূরণ দেব? ক্ষতিপূরণ মালিক দেবে। কারণ সে তার শ্রমিককে অনিরাপদ কর্মস্থলে কাজ করিয়েছে।”

“যে পাটের দাম ছিল ২৮ টাকা; যেই বললাম পলিথিন বন্ধ, পাট আসবে অমনি হয়ে গেল ৪০ টাকা। এটাতো বাংলাদেশ। আমাদের দেশটাকে তো আমরা চিনি। জিনিসগুলো প্রশ্রয় দিলে কিন্তু পলিথিন ব্যবসায়ীরাই সামনে আসবে। তাই এগুলোকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। পলিথিন ব্যাগ পুনর্ব্যবহার করা যায় না। একটা চটের ব্যাগ অনেকবার ব্যবহার করা হয়।” যোগ করেন তিনি।  

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতা এবং পলিথিন-প্লাস্টিক এগুলো একটার সঙ্গে একটা সম্পৃক্ত। আমাদেরকে পলিথিন-প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটাকে আইন করে তা বন্ধ করতে হবে। যেভাবে ২০০৫ সালে করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে প্রতিটি কারখানা এবং বিপণন স্থানগুলোতে আইন প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে একটা সুফল আমরা পেতে পারি।”

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র ব যবহ র উপদ ষ ট র জওয় ন র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার করালো রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (৩ মার্চ) দ্বিতীয় রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে এবং মসজিদ সংলগ্ন বাগানে তারা ইফতারির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসেন। এ ছাড়াও নারীদের জন্য মসজিদের বাগানে আলাদাভাবে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এতে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

ইফতারে অংশগ্রহণ করতে আসা ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আজকের আয়োজন অনেক ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে ইফতার করতে এসে খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা দিন মনে হচ্ছে ঈদের মতো। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকের আয়োজন অনেক ভালো। কাল সব এলোমেলো ছিল। কিন্তু আজকের আয়োজন গোছালো হয়েছে। এত মানুষের সঙ্গে আগে কখনো ইফতার করিনি। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখানে মেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমখ।

সার্বিক বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতার আয়োজন করেছি। যা গতকালের তুলনায় তিনগুণ। আমরা আশা করছি আজ সব ঠিকঠাক মতো হবে। এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন, যাতে কোন উশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।”

প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোজার প্রথমদিন রবিবার (২ মার্চ) ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় অধিক রোজাদার উপস্থিত হওয়ায় ইফতারে সঙ্কট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ