রাবির ভেটেরিনারি বিভাগের তালা দিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, January 2025 GMT
স্বেচ্ছাচারিতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আসন্ন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগে তালা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন ওই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পরীক্ষা নিয়ে গড়িমসি, চলবে না চলবে না’, ‘বিসিএস নিয়ে গড়িমসি, চলবে না চলবে না’, ‘সিনিয়ররা সুযোগ পেলে, আমরা কেন পাব না?’, ‘সব ক্যাম্পাস সুযোগ পেলে, আমরা কেন পাব না?’, ‘পরীক্ষার অনুমতি, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.
তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বিভাগ আমাদের কোন সমাধান দিতে পারেনি। কোন উপায় না পেয়ে আমরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান নিয়েছি।”
আলামিন মোল্লা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “সারা বাংলাদেশের যত ভেটেরিনারি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট আছে, সব জায়গায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আমাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রুটিন প্রকাশ করে লেভেল ফাইভ সেমিস্টার-২ পরীক্ষা নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।”
শিক্ষার্থী হেমা আক্তার ইভা বলেন, “শুধু ব্যাক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে ৪৭ জন শিক্ষার্থীর জীবন এখন হুমকির মুখে। আমরা আমাদের দিক থেকে অনেক চেষ্টা করেছি। ২০১৮-১৯ সেশনের আমরা ৪৭ জন বাদে সবাই বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারছে, শুধু আমরাই পারছি না। যতক্ষণ পরীক্ষার রুটিন হাতে না পাব, আমরা থামব না।”
এ বিষয়ে জানতে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ময়জুর রহমানকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গত সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন করে আসছেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। গত ১৩ জানুয়ারি) ইন্টার্নশিপ থেকে কর্মবিরতি দিয়ে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।
দাবি আদায় না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। কিন্তু প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো সমাধান না পেয়ে আজ বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।
আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।
নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।
আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।