স্বেচ্ছাচারিতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আসন্ন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগে তালা দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকাল‌ সাড়ে ১১টায় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন ওই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পরীক্ষা নিয়ে গড়িমসি, চলবে না চলবে না’, ‘বিসিএস নিয়ে গড়িমসি, চলবে না চলবে না’, ‘সিনিয়ররা সুযোগ পেলে, আমরা কেন পাব না?’, ‘সব ক্যাম্পাস সুযোগ পেলে, আমরা কেন পাব না?’, ‘পরীক্ষার অনুমতি, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এ বিষয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.

জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের মূল দাবি হলো, লেভেল ফাইভ সেমিস্টার-২ দ্রুত সময়ে নিয়ে আসন্ন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। বারবার বিভাগের আবেদন করেও আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ পাইনি। এর আগে আন্দোলন করলে প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করি।”

তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বিভাগ আমাদের কোন সমাধান দিতে পারেনি। কোন উপায় না পেয়ে আমরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান নিয়েছি।”

আলামিন মোল্লা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “সারা বাংলাদেশের যত ভেটেরিনারি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট আছে, সব জায়গায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আমাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রুটিন প্রকাশ করে লেভেল ফাইভ সেমিস্টার-২ পরীক্ষা নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।”

শিক্ষার্থী হেমা আক্তার ইভা বলেন, “শুধু ব্যাক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে ৪৭ জন শিক্ষার্থীর জীবন এখন হুমকির মুখে। আমরা আমাদের দিক থেকে অনেক চেষ্টা করেছি। ২০১৮-১৯ সেশনের আমরা ৪৭ জন বাদে সবাই বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারছে, শুধু আমরাই পারছি না। যতক্ষণ পরীক্ষার রুটিন হাতে না পাব, আমরা থামব না।”

এ বিষয়ে জানতে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ময়জুর রহমানকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গত সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন করে আসছেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। গত ১৩ জানুয়ারি) ইন্টার্নশিপ থেকে কর্মবিরতি দিয়ে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায় না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। কিন্তু প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো সমাধান না পেয়ে আজ বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান ও ঢাকা উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগপত্র পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামি ডা. তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মৃত তফছির উদ্দিনের ছেলে। অপর আসামি মো. শাহীনুর রহমান মাগুরা জেলা সদরের কাদিরাবাদ গ্রামের একেএম ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।

আরো পড়ুন:

সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নড়াইলে গ্রাম আদালতে ৬৪১ মামলা নিষ্পত্তি

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজিতে (নলতা) ইকুইপমেন্ট সামগ্রী, আসবাবপত্র , বইপত্র সাময়িকী ও খেলাধুলার সামগ্রী কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালীন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজির সাবেক অধ্যক্ষ ডা. তৌহিদুর রহমান। অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত নলতা আইএইচটিতে চাহিদা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই খেলাধুলা সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠন করে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করেন ডা. তৌহিদুর রহমান। 

২০১৮ সালের ১৫ মে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ঢাকার উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ১০টি ফুটবল, ২৫টি ক্রিকেট ব্যাট, ২১টি ক্রিকেট বল, ২০টি ক্রিকেট প্যাড, ১১টি ক্রিকেট হেলমেট, ১০টি ক্রিকেট গ্লাভস, ১৫টি ক্রিকেট স্টাম্প, পাঁচটি ২০ কেজি ওজন সেট, পাঁচটি ৫ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৪ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৩ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ১৪ কেজি ডাম্বেল, একটি ট্রিসেফ বার, ৫৬ পিস মাল্টি জাম, পাঁচটি চায়না আপ মেশিন, পাঁচটি ট্রেড মিল, চারটি সিট আপ বেঞ্চ, ছয়টি টিটি বোর্ড, ১০টি বাস্কেট বল, ১০টি ব্যাডমিন্টন সেট, পাঁচটি দাবা সেট, ১৫টি হ্যান্ডবল, ১০টি ভলিবল, ক্লাইন চেষ্ট প্রেস-এর চারটি স্মিথ মেশিন, কেবল ওয়ারের ২০টি লাফ দড়ি, পাঁচটি হ্যামার স্ট্রেনথ, পাঁচটি ইলেকট্রিকাল ট্রেনার এক্সসারসাইজ বাইক ও পাঁচটি ৫৬ ইঞ্চি ক্যারাম বোর্ড সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালের ২৪ মে মালামাল সরবরাহ করে ওই বছরের ১০ জুন ৫০ লাখ টাকার বিল দাখিল করে। ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীনুর রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ জুন বিল পাশ করে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর পাঠান। সে অনুযায়ী, হিসাবরক্ষণ অফিস সরকারি কর্তণ বাদে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ২০১৮ সালের ১৪ জুন ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ইস্যু করে। পরে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর রহমান টাকা তুলে নেন।

অভিযোগ অনুসন্ধানকালে কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর সঠিক মূল্য একটি টিমের মাধ্যমে যাচাই করার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালককে অনুরোধ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর নলতা আইএইচটি ও ম্যাটস এর কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুদকের তদন্তকারী টিম ১০ অক্টোবর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাচার টাকা কেটে নিয়ে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এক্ষেত্রে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ও মো. শাহীনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা আত্মসাৎ করে অপরাধ করেছেন। 

আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, “গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমানের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রটি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মো. নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়ে ১৬ মার্চ শুনানির ধার্য দিন নির্ধারণ করে দেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা