Samakal:
2025-04-25@05:07:10 GMT

জনপ্রশাসন সংস্কার কোন পথে?

Published: 19th, January 2025 GMT

জনপ্রশাসন সংস্কার কোন পথে?

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গন্তব্য কোথায়?
মোসলেহ উদ্দিন আহমদ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ওঠে। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারণের জন্য সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত মোট ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আগামী ৩১ জানুয়ারি তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা। 


প্রাসঙ্গিকভাবে বিগত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী নানা দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত জনপ্রশাসন সংস্কার বা প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করা দরকরা। তাদের প্রস্তাবে আমরা মূলত কয়েক ধরনের অভিলক্ষ্য দেখতে পাই– ১.

‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের আকার ও পরিসর কমিয়ে বেসরকারিকরণ/আউটসোর্সিংয়ে গুরুত্ব প্রদান, ২. আর্থিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ, ৩. সরকারি আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটিয়ে জনস্বার্থ সংরক্ষণকারীতে রূপান্তর, ৪. বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তরের পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসসহ কাঠামোগত পরিবর্তন, ৫. সরকারি কর্মের অধিকতর দক্ষ ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনয়ন।


বিশ্বব্যাপী সংস্কার কমিশনের অভিলক্ষ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অভিলক্ষ্য তুলনা করলে এটি পরিষ্কার হবে যে, আমাদের কমিশনের মনোযোগ ও পরিধি তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ। এটা ঠিক যে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা ভিন্নতার কারণে একেক দেশের সংস্কার এজেন্ডা একেক রকম হওয়াই স্বাভাবিক। তথাপি আমাদের দেশের সংস্কার কমিশনের এই সংকীর্ণ মনোযোগের পেছনে রয়েছে অন্য একাধিক কমিশন, যেমন– পুলিশ সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন; যাদের লক্ষ্যের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজের তাত্ত্বিক ওভারল্যাপ আছে। পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে এবং তাদের পূর্ববর্তী কাজের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে সেটা অনুসরণের প্রবণতা থেকেও এই সংকীর্ণতার জন্ম হতে পারে।


প্রশ্ন হলো, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই ‘স্কোপ’ বা পরিধি কি কমিশন গঠনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য– বিদ্যমান বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশে রূপান্তর অর্জনে সহায়ক হবে? দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, জবাবদিহিতা ও জনকল্যাণমনস্কতার বাইরে কি আমলাতন্ত্রে আর কোনো সমস্যা আছে; যেটি কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
যেহেতু কমিশন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের রিপোর্ট দাখিল করেনি সেহেতু কমিশন গঠনের সময় প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ‘স্কোপ’-এর বাইরে আর কী কী লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে কমিশন কাজ করছে, সেটি বলা দুষ্কর। আশ্চর্যের বিষয় হলো, রিপোর্ট দাখিলের আগেই গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা কিছু সম্ভাব্য প্রস্তাবের কথা কমিশনপ্রধান ও সদস্য সচিবের মুখ থেকে জানতে পেলাম। এর মাঝে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৫০% এবং অন্যান্য ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৫০% কর্মকর্তাকে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান নিয়ে ক্যাডার কর্মকর্তারা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে শতভাগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলেন এবং তাদের বক্তব্য অনুসারে কমিশনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সরকারি কর্মে ক্যাডার বৈষম্য কমবে। অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের দাবি হলো, উপসচিব পদ শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ। ফলে তাদের মতে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের এই পদে পদোন্নতি পাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বৈষম্যমূলক।


পাল্টাপাল্টি দাবির এই ডামাডোলে যে প্রশ্নটি হারিয়ে গেছে, তা হলো ৫০-৫০ এই বণ্টন কমিশনের কোন অভিলক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত? তারপরও ৫০-৫০ বণ্টনের প্রাসঙ্গিকতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রশ্নাতীত। সেই প্রাসঙ্গিকতা ধরে এই বিতর্কের একটু ভেতরে ঢোকা আবশ্যক। বাংলাদেশ সরকারের নীতি প্রণয়ন করে মূলত মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহ যার মূল নেতৃত্ব থাকে মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর হাতে আর সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তারা সরকারের পলিসি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীকে সহায়তা করেন। যেহেতু দেশের উন্নয়ন, সরকারি সেবার মান, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে নীতি প্রণয়নের সঙ্গে উপসচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তারা যুক্ত থাকেন, সেহেতু এই পদে কর্মরতরা কেমন হবেন– এই বিষয়ে আমাদের ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।


তাই নীতি প্রণয়নে সহায়তাকারী উপসচিব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মেধা প্রাধান্য পাবে, প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা যার সাথে পলিসিমেকিংয়ের সংযোগ আছে, সেই অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পাবে, প্রাধান্য পাবে দক্ষতা। এই প্রাধান্যগুলোর পাশাপাশি সব ক্যাডারের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা গেলে তা হবে সোনায় সোহাগা। যেসব দেশে পলিসি বাস্তবায়নকারীদের মধ্য থেকেই পলিসি প্রণয়নে সহযোগীদের বাছাই করা হয়, যেমন– ভারত ও পাকিস্তান সেসব দেশে উপসচিব বা সমতুল পদে নিজ নিজ দেশের প্রশাসন ক্যাডার/সার্ভিসের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। ভারতে উপসচিব পদে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের (আইএএস), (যা বাংলাদেশের প্রশাসন ক্যাডারের সমতুল্য) সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। একইভাবে পাকিস্তানে পাকিস্তান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের (পিএএস) কর্মকর্তাদের সচিবালয়ের উচ্চ পদে প্রাধান্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিভিল সার্ভিসে স্পেশালিস্টদের জন্যও পলিসি প্রণয়নে উচ্চ পদে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ক্রমেই বাড়ছে। সেই হিসেবে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিদ্যমান ২৫% নিয়োগের যৌক্তিকতাও বিদ্যমান। এই বিবেচনা করে এই বিষয়ে করা রিট মামলায় আপিল বিভাগ ইতোমধ্যে বিদ্যমান বণ্টনকেই সাম্যমূলক ও যৌক্তিক বলে রায় দিয়েছেন।


এই হার ৫০ শতাংশ হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য, বিশেষ করে নবীন কর্মকর্তাদের জন্য একটা বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ক্যাডার অফিসারদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ৫ম (পঞ্চম) গ্রেডে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। তারা ৫ম গ্রেডে আর অন্য কোনো পদে পদোন্নতি পান না। ৫ম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদে যেতে হলে তাদের উপসচিবের পদসোপান অতিক্রম করা বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য যেমন পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫ম গ্রেডে পদোন্নতির দুটো সুযোগ থাকে, একটি পুলিশ সুপার পদে এবং অন্যটি উপসচিব পদে। ফলে সুযোগের সংখ্যা বিবেচনা করলে এখানে একটি বৈষম্য স্পষ্ট। 

অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ: লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
muslehua@du.ac.bd
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র প রণয়ন মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) লেক খনন এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৃথক দুটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন। 

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের কাছে এই স্মারকলিপি দুটি প্রদান করেন প্ল্যাটফর্মের শিক্ষার্থীরা। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর থেকে লেকগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ লেকেই পানি নেই। আর পানি না থাকায় সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে জলজ প্রাণী ও জীব-বৈচিত্রের উপর। বহু জলজ প্রাণী ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, উপকারী জলজ শ্যাঁওলাসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীরা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। কিছু লেক ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

জাবিতে অবিলম্বে নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি

জাবিতে যুক্ত হলো আরো চারটি ইলেকট্রিক কার্ট 

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জলাশয় নোংরা থাকার কারণে মশার প্রজনন বৃদ্ধির পাশাপাশি মশার প্রজননে মিউটেশন ঘটছে। ফলে আগামী দিনে মশা আরো ভয়াবহ রোগ সৃষ্টিকারী হতে বেশি সময় নেবে না।

স্মারকলিপিতে লেক কমিটির কাছে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী ১০ দিনের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া লেকগুলো চিহ্নিত করে এর সবগুলো লিজিং বাতিল করতে হবে এবং লেক খননের কাজ শুরু করতে হবে; লেক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনকে অতিসত্ত্বর মাস্টারপ্ল‍্যানের টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তাব করতে হবে; ড্রেনের নোংরা জল ও ময়লা যাতে লেকে গিয়ে না পড়ে সেজন্য ড্রেনের সঙ্গে লেকের সমস্ত কানেকশন ছিন্ন করতে হবে।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সার্বক্ষণিক লেকগুলোতে স্বচ্ছ জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে লেকের পরিচ্ছন্নতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে; লেকে জলজ প্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; প্রতি বছর অতিথি পাখি আগমনের পূর্বে লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের জন্য পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ আবাসস্থলের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। 

স্মারকলিপিতে মাস্টারপ্ল্যানের অভাবে এবং অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে দূর হচ্ছে না ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট উল্লেখ করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার আহ্বানের দাবি জানানো হয়েছে।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন নিরীক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্বেগ টিআইবির
  • আইসিটি খাতে দুর্নীতির তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রণয়নে টাস্কফোর্স গঠন
  • আইসিটি খাতের দুর্নীতি তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রণয়নে টাস্কফোর্স গঠন
  • জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
  • কারিগরি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত থেকে সরে এল
  • রাজউকের বোর্ডে আমলা থাকলে চলবে না, বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
  • কারিগরি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করলেন