একটা গোল যে কতটা আরোধ্য সেটা আরেকবার প্রমাণ করলেন দারউইন নুনেজ। শনিবার (১৮ জানুয়ারি, ২০২৫)ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে লিভারপুল ম্যানেজার আর্নে স্লট হয়ত ধরেই নিয়েছিলেন নিশ্চিত দুটা পয়েন্ট হারাতে যাচ্ছে তার দল। তবে যোগ করা সময়ে নুনেজের জোড়া গোলে ব্রেন্টফোর্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল।

একঝাক ফরোয়ার্ডে ঠাসা লিভারপুলের প্রথম একাদশে জায়গা হয় না নুনেজের। তবে বদলি হিসেবে যখনই নামেন, নিজের ছাপ রেখে দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখেন এই উরুগুয়ান। শেষ আড়াই বছরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বদলি হিসেবে নেমে সবচেয়ে বেশি গোলের সাথে জড়িত এই ২৫ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। তাইতো নায়কোচিত পারফরম্যান্স করে ম্যাচ জেতানোর পর নুনেজকে ‘শেষ ৩০ মিনিটের’ সেরা হিসেবে অ্যাখ্যা দিলেন লিভারপুল ম্যানেজার স্লট।

নুনেজের শেষ মুহূর্তে গোল করার ক্ষমতাকে লিভারপুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্লট। এই উরুগুয়ান ২০২২ সালের গ্রীষ্মে মার্সিসাইডের দলটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রেখেছেন বদলি হিসেবে। মোট ১১টি গোলে তিনি জড়িত, যার মাঝে ৭টি করেছেন নিজে এবং ৪টি করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে।

আরো পড়ুন:

হোঁচট খেয়ে আর্তেতা দুষলেন ফুটবলার স্বল্পতাকে 

ড্রয়ের পর লিভারপুল ম্যানেজার জানালেন, ‘এর বেশি চাওয়া যায় না’

নুনেজের প্রশংসা করতে গিয়ে নুনেজ বলেন, “সে (নুনেজ) যখনই মাঠে নামে সবসময় অনেক প্রভাব ফেলে। ম্যাচে শক্তি এবং তেজ এনে দেয়। তার বদলি হিসেবে গোল করার ক্ষমতা আমাদের জন্য অসাধারণ একটি সুবিধা। বেশিরভাগ ম্যাচে আমরা শেষ ৩০ মিনিটে প্রতিপক্ষের ১৮ গজের আশেপাশে বল নিয়ন্ত্রণে রাখি। নিঃসন্দেহে সে (নুনেজ) তখন সেরা।”

এই জয়ের ফলে লিভারপুল ২১ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চূড়ায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ছয় পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে। একই দিনে ঘরের মাঠে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করা আর্সেনাল ২২ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।    

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর স ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নেই: মেজবাহ

২৬ বছর চাকরি জীবনে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও কুখ্যাত খুনিসহ অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। এমন সাহসিতাপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ৬২ বার পুরস্কৃত হয়েছি। তবে এবারের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। দায়িত্ববোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করি। নাফিজ ভাটারা থানার একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

কথাগুলো বলছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ভাটারা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মেজবাহ উদ্দিন।

এএসআই মেজবাহ সমকালকে বলেন, এই কাজের জন্য আমাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) প্রদান করা হয়েছে। এটা আমার একার অর্জন না। ডিসি স্যার থেকে শুরু করে থানার ওসি স্যার পর্যন্ত সবার অর্জন এটা। স্যারদের উৎসাহে এমন কাজ করার সাহস পেয়েছি।

সোমবার বিকেল ৩টায় বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) থানার গ্রুপে পদকের কাগজ দিলে থানার অফিসার থেকে শুরু করে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজকে আমার জন্য বাহিনী গর্বিত। বাকি চাকরি জীবন এভাবেই অপরাধীদের আতঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের জন্য চাকরি করে যেতে চাই।

২০২৫ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনকে বিপিএম পদক প্রদান করা হয়। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

একটি সূত্র জানায়, এখন থেকে পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও ভালো কাজের জন্য সারা বছর বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হবে। আগে সারা বছর কাজের পর বছর শেষে এসে পদক প্রদান করা হতো। এতে অনেক ভালো কাজ করেও পদক বঞ্চিত হতেন সদস্যরা। এখন থেকে এটার সুযোগ নেই। ভালো কাজ করলেই সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বারিধারা জে-ব্লক এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী মোবারক হোসেন নাফিজকে আটক করতে গেলে তার চাকুর আঘাতে আহত হন এএসআই মেজবাহ উদ্দিন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নাফিজকে গ্রেপ্তারের পর তার বীরত্বের প্রশংসা করেন নেটিজেনরা। এরপর পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার থেকে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রশংসা করেন।

মেজবাহ বলেন, আসামি নাফিজ চাঁদার দাবিতে বারিধারা জে-ব্লকে অবস্থান করছে বলে খবর আসে। তাকে ধরতে অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যে আমি তাকে ধরে ফেলি। এর এক মিনিটের মধ্যে সে চাকু দিয়ে আমাকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপরও তাকে ছাড়েনি। এরপর হাতে কামড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় অপরাধী নাফিজ। সেদিন জীবন বাজি রেখে তাকে আটক করি।

চাকরি জীবনে ডিএমপিতে পদায়ন এই প্রথম। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা মহানগরে ছিনতাই ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আসে। থানা থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আমরা জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য আসছি, এখানে কোনো অপরাধী থাকবে না।

তিনি বলেন, বাহিনীর জন্য এমন কাজ করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পেরেছি। পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে। দেশের জন্য এমন সাহসিকতা কাজের জন্য স্ত্রী ও সন্তানরাও আজ গর্বিত।

জানা যায়, মেজবাহ ২০০০ সালে ১৯ মে কনস্টেবল পদে পুলিশে ভর্তি হয়। এরপর ২০১৭ সালে ১০ মার্চ তিনি পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন। সর্বশেষ গত বছরের ৮ নভেম্বর মেজবাহ ডিএমপির ভাটারা থানায় বদলি হয়ে আসেন। এর আগে তিনি খুলনা, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

ভালো কাজের জন্য ৬২ বার পুরস্কার পান তিনি। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানায় তার জন্ম। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মেজবাহ। এক ভাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। বাকি দুই ভাই বিদেশ থাকেন।

ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মেজবাহর এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সুপারিশে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ওই সময়ই ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী মেসবাহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ