সারাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে সোমবার। এ কার্যক্রমে ৬৫ হাজার মানুষ কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত যে সময়সীমা সেটিকে মাথায় রেখেই কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।

আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে রোববার সকালে ইউএনডিপি কর্তৃক ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সরঞ্জাম প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রাথমিকভাবে ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০ ডকুমেন্টস স্ক্যানার ও ৪৩০০ ব্যাগ দিয়েছে ইউএনডিপি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এ কার্যক্রমে ইউএনডিপি আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াতেই হয়তো আমরা তাদের সমর্থন চাইব।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এই ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। নিবন্ধন কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দেশব্যাপী এ কার্যক্রমে অংশ নেবেন নির্বাচন কর্মকর্তা, সুপারভাইজার ও মাঠ কর্মকর্তারা। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

হালনাগাদ কার্যক্রমে ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ব্যাগসহ অন্যান্য উপকরণ বা সরঞ্জাম দিয়ে ইসিকে সহায়তা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি। আজ রোববার সকাল ৯টায় সরঞ্জাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অংশ নিতে ৬৬ হাজার লোকবল প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এ ছাড়া উপজেলা অথবা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারের নাম বাদ ও নতুন ভোটারের তথ্য সফটওয়্যারের সাহায্যে ডেটা এন্ট্রি ও ডেটা আপলোড করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের বাদ দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি নতুন ভোটারদের তালিকায় যুক্ত করা হবে। এরপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ওই বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা করবে ইসি।

সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯৩২ জন।

আগে থেকেই ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করাই বর্তমান কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। ভোটার হওয়ার যোগ্য, বিশেষ করে নারী ও তরুণ প্রজন্মের কেউ যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। তথ্য গোপন করে একাধিক স্থানে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। কমিশন মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গোপনে ভোটার হওয়া সম্ভব নয়।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউএনড প

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: বৃষ্টি-গরমে বেড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে বৃষ্টিপাত ও গরম আবহাওয়া। গতকাল শনিবার ও আজ রোববার দেশটিতে বৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাহত হয়েছে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সরবরাহ। এরই মধ্যে দেশটিতে ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭১।

২৮ মার্চ মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৪ হাজার ৬৭১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ২১৪ জন। এ ছাড়া ভূমিকম্পে ৫ হাজার ২২৩টি ভবন, ১ হাজার ৮২৪টি মন্দির ও প্যাগোডা, ১৬৭টি হাসপাতাল, ১৬৯টি সেতু, ১৯৮টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর মান্দালয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট বৃষ্টি হয়। শহরটিতে এখনো মানুষ ভয়ে ঘরে ফেরেননি। খোলা আকাশের নিচে তাঁদের অনেক তাঁবু বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে ভেঙে গেছে। পর্যাপ্ত ত্রিপলের অভাবে অনেক মানুষকে তাঁদের জিনিসপত্রসহ বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে।

এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহগুলো বের করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। এমন শঙ্কার মধ্যে আজ সকালে আবারও মান্দালয়ে বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠবে এবং আরও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপির কর্মকর্তা টান টান বলেন, আবহাওয়া চরম রূপ ধারণ করেছে।

বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড গরমের কারণে খোলা আকাশের নিচে গড়ে তোলা সাময়িক আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আজ জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান টন ফ্লেচার বলেছেন, উপদ্রুত এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মেরামত করা দরকার। অনেক মানুষ এখনো থাকার মতো কোনো আশ্রয় পাননি। তাঁদের জন্য তাঁবু প্রয়োজন।

২৮ মার্চের ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই নিহত হয়েছেন রাজধানী ব্যাংককে ৩৩ তলা একটি ভবন ধসে। ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ৭৭ জন আটকা রয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে জান্তা

আগে থেকেই মিয়ানমারের অবস্থা বেহাল। ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। তখন থেকে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র যোদ্ধাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর লড়াই চলছে। চার বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকার ৫ কোটির বেশি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো জটিল হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ২ এপ্রিল থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে জান্তা সরকার। তবে নিজেদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে এখন পর্যন্ত বিদ্রোহীদের ওপর অন্তত ১৬টি হামলা চালিয়েছে তারা। এরই মধ্যে শনিবার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা টম ফ্লেচার। মিয়ানমারে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ‘জোরদার, সমন্বিত ও সামষ্টিক’ পদক্ষেপ নিতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিয়ানমারে ভূমিকম্প: বৃষ্টি-গরমে বেড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা