পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামিদের জামিন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আজ। 

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে জামিন শুনানি হবে।

এদিকে, আসামিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন। প্রিয়জনদের জামিনের প্রার্থনায় মোনাজাত করেন। এ সময় অনেককে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়।

গত ১২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ চলবে মর্মে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ৮ জানুয়ারিও একই জায়গার মামলার বিচার চলবে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৯ জানুয়ারি ছিল মামলার ধার্য তারিখ। তবে নানা নাটকীয়তার পর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিচারকাজ চলবে মর্মে আদালত সূত্রে জানা যায়।

এদিকে, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত বন্ধের দাবিতে ৮ জানুয়ারি রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে ৯ জানুয়ারি ভোরে এজলাস কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আলিয়া মাদ্রাসার আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ভোরে বহিরাগতরা এসে আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন দিয়েছে। তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ কারণে ওইদিন মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে ১৯ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।  সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজও শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেধে দিয়েছে সরকার।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

নাটোরে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব

নাটোর সদর উপজেলায় মদন হাট গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাল, ডাল দিয়ে রান্না করা এ শিরনি খেতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের মদন হাট গ্রামে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত উৎসবে অংশ নেন শতাধিক পরিবার। অনুষ্ঠানকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে গ্রামে গিয়েছেন জামাই-মেয়ে-নাতি-নাতনীসহ স্বজনরা। 

গাঁওয়ালী শিরনিকে কেন্দ্র করে মদন হাট গ্রামে করা হয়েছে ভোজের আয়োজন। শত বছর ধরে চলে আসছে শীতকালে ঝাল শিরনি দিয়ে গ্রামবাসীর এ উৎসব। কথিত আছে এক থেকে দেড়শ বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; পরে এক ফকির এসে শিরনির আয়োজন করার পরামর্শ দেন। সেই সময় শিরনি উৎসব পালন করা হলে গ্রামবাসী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই গ্রামের লোকজন প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে আসছেন।

স্থানীয়রা জানায়, গাঁওয়ালী শিরনি অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে জামাই-মেয়ে-নাতি-নাতনিসহ স্বজনরা গ্রামে আসেন। ভোজনের আয়োজন করা হয়। ভোর থেকে দিনভর চলে এই আয়োজন। পরিবারের সদস্য ও আগত অতিথিদের সংখ্যা ভেদে ৮ থেকে ১০টি পর্যন্ত ভোজের ভাগ দেন পরিবার প্রধান। কেউ চাল কেউবা টাকা দিয়ে অংশ নিয়ে থাকেন।

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ-সহকারী মো. আব্দুল লতিফ জানান, এক সময় বছরে দুইবার এই উৎসব পালন করা হতো। শীতকালে ঝাল এবং আষাঢ় মাসে মিষ্টি শিরনি হতো। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। উৎসবে আসা আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করা হয়। 

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ সিএ মো. নুরুল ইসলাম ছোটন জানান, অনেক বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অনেক মানুষ মারা যায়। আতাব্দি ফকির নামে এক আলেমের পরামর্শে শিরনি উৎসব করা হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন আক্রান্তরা। কিছুদিন পর গবাদি পশুও আক্রান্ত হলে একইভাবে শিরনি উৎসব করা হয়। এমনটি কথা শুনেছি আমাদের মুরুব্বীদের কাছ থেকে।

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা মো. উসমান আলী বলেন, “বাপ দাদার আমল থেকেই এই শিরনি হয়। বালা, মছিবত, বিপদ আপদ, কলেরা থেকে বাঁচার জন্য এই শিরনি করতেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা।”

এর আগে (৬ জানুয়ারি) নাটোর সদর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামে হাজারো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনির উৎসব পালন করা হয়।

মদন হাট এলাকার প্রবীণ আমজাদ মীর, মীর ইসলাম, মীর ইদ্রিস জানান, পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য হিসেবে তারা এ উৎসব পালন করে আসছেন। শত বছরের বেশি সময় ধরে এ উৎসব হয়ে আসছে।

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিকুর রহমান তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনসহ প্রমুখ।

ঢাকা/আরিফুল/ইমন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব