সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা থামছে না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, সুষ্ঠু ভোট হওয়ার পরও কোন্দলে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের। বৃহস্পতিবার নির্বাচন শেষে শুক্রবার ভোরে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক। নির্বাচনে ২৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৬৬ প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থি ৯, বিএনপিপন্থি ৭ এবং জামায়াতপন্থিরা ২টি পদে বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হওয়া নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। এ কারণে বিএনপিপন্থিরা নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেনি। সভাপতি পদে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ৭৭০ ভোট ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো.
বিএনপির একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, জেলা বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কয়েকজন নেতার দ্বন্দ্বে ভরাডুবি হয়েছে। জেলা বারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি সমর্থিত মশরুর চৌধুরী শওকত পরাজিত হন। এ জন্য আঙুল উঠেছে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন ও দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদ আহমদের বিরুদ্ধে।
সরকার পতনের পর পিপি হতে চেয়েছিলেন বিএনপিপন্থি অনেকে। কিন্তু সব বাদ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতা এ টি এম ফয়েজকে দেওয়া হয় পিপির দায়িত্ব। তাঁকে পিপির দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে প্রকাশ্যে বিভক্তি দেখা দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা মিলে ফয়েজকে সরাতে তালা দেন তাঁর কক্ষে।
কয়েক দিনের মাথায় পিপির দায়িত্ব থেকে ফয়েজকে সরানো হয়। দলের সিনিয়র নেতা আশিক উদ্দিনকে পিপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘এখানে কোনো টাকা নেওয়া হয় না’ বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে নতুন করে দেখা দেয় বিভক্তি। বিএনপি নেতাদের দাবি, এসব কারণে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপিপন্থিদের।
বিএনপি নেতাদের একটি অংশ ফয়েজসহ অন্য প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সম্প্রতি রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হওয়ায় জামায়াত কৌঁসুলি ভূমিকায় ছিল। যার ফল পায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট করছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ফেসবুকে লেখেন, ‘তদন্ত করলে বেরিয়ে আাসবে নোংরা গ্রুপিং, সিলেট জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আঁতাতের বিষয়টি।’
‘কোনো দ্বন্দ্ব নেই’ জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরাও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি, কেন বিপর্যয় হলো।’
অভিযোগ বিষয়ে হাসান পাটোয়ারী রিপন বলেন, ‘জাতীয়তাবদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। ফোরামের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট ফয়েজকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি। কিন্তু ফয়েজ না সরায় নুরুল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।’
কেন্দ্র থেকে নুরুল হক ও শওকতকে দিয়ে প্যানেলের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না মেনে এ টি এম ফয়েজসহ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরাজয়ের পেছনে তাঁর কোনো হাত নেই জানিয়ে রিপন বলেন, ‘বিগত সময়ে আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আমরা ফয়েজের কক্ষে তালা দিয়েছি। আমরা মধ্যম সারির নেতা হিসেবে সিনিয়রদের কথামতো দায়িত্ব পালন করেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র আইনজ ব ন ত কর আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনার মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি ২৭ বিশিষ্ট নারীর
মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ২৭ বিশিষ্ট নারী। গতকাল রোববার স্মারকলিপিটি ই-মেইলে পাঠানো হয়।
এতে মেঘনাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে তাঁর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ভাটারা থানার কর্মকর্তারা তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে আটক করেন। তাকে বাসা থেকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়। সে সময় মেঘনার ফেসবুক লাইভ থেকে বিষয়টি জেনে কয়েক নারী অধিকারকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রায় ৩০ কর্মকর্তা মেঘনাকে আটকের জন্য এসেছেন। তাঁকে আদালতে তোলা হয় আটকের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন এই নারীরা। স্মারকলিপিতে তাঁরা বলেন, এই ঘটনায় গুরুতর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তাঁরা মেঘনা আলমের মুক্তি এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্মারকলিপিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ইশরাত জাহান, তাবাসসুম মেহেনাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, আলোকচিত্রী পদ্মিনী চাকমা, লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা প্রমুখ।