জীবনটাই তো অন্তর্বর্তীকালীন, বললেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
Published: 19th, January 2025 GMT
“যারাই নির্বাচনে আসবেন তারা পাঁচ বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীনই বটে। আর আমাদেরকে বলে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমি বলি জীবনটাই তো অন্তর্বর্তীকালীন।”
বলেছেন, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি বলেন, “তারা যেদিন ভুলে যায় তারা অন্তর্বর্তীকালীন নয় সেদিনই তারা ভুল করে, অন্যায় করে এ কথাটি বলে। একটি নির্বাচিত সরকারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এটা মনে রাখতে হবে।”
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “জুলাই বিপ্লবে গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন যে সময়টা পেয়েছি, এই সময়টা জনগণের সেবা করার জন্য একটা আশীর্বাদ এবং বড় দায়িত্ব। আমাদের চাওয়া পাওয়ার লিস্ট অনেক বড় কিন্তু আমরা হয়তো মানুষের সবটুকু পূরণ করতে পারবো না, তবে সর্বদা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, দেশটাকে গড়তে হবে।”
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকায় হলিক্রস কলেজের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে হলিক্রস কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফাহমিদা হোসেন শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। স্মৃতিচারণ করেন কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার শেখ লেটিসিয়া গোমেজ, প্রফেসর ড.
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ হলিক্রস কলেজে তার লেখাপড়া, শ্রেণিকক্ষের পাঠদান, ক্যারেক্টার, স্কেচ ছবি আঁকা, শিক্ষকদের ভয় পাওয়া, সম্মান দেওয়া প্রভৃতি বিষয়ে গল্পের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এই স্কুলে লেখাপড়ায় আমাকে ভিত গড়ে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের একজন মানুষ গড়নে, মননে গড়ে ওঠার প্রথম জায়গাটা হচ্ছে স্কুল। মূল্যবোধ, গুছিয়ে কথা বলা, সত্যের জায়গায় যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি আমার মনে হয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো মেয়ে তাদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব গঠন, নেতৃত্ব বিকাশ ও ক্ষমতায়নে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আজকে এই কলেজের বর্ষপূর্তি উৎসবে লেকচার দেওয়ার দিন নয়, আমি বলবো অগ্রজ হতে গেলে, মানবকল্যাণে ব্রতী হতে গেলে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমি সবার কাছে প্রার্থণা চাই, আমরা একটা বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। জুলাই বিপ্লবে অনেক ছেলেমেয়েরা এখন রাস্তার বাইরে। তাদেরকে লেখাপড়ায় কলেজে ফিরিয়ে আনতে হবে, তাদেরকে সুস্থ করতে হবে।”
সকল শিক্ষকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। পরে তিনি এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এদিকে বিআইসিসি'র কার্নিভাল হলে এসডিজি বাস্তবায়ন নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪ আয়োজনে শ্বেতপত্র এবং অতঃপর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও জাতীয় বাজেটের সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে যা এসেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ধ্বংসযজ্ঞ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমাদের পাঁচ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পরিচালনা করছে।”
তিনি বলেন, “আমি আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর শত কোটি টাকার গতানুগতিক দুর্নীতি বন্ধ করেছি। সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ভাতা প্রদান অব্যাহত রেখেছি।”
তিনি আরও বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পনা করে যখন অফিসারদেরকে নিয়ে এগোচ্ছি, সেই মুহূর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে হুট করে অন্যত্র বদলি করার ফলে কাজের গতিশীলতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুনরায় নতুন অফিসারদেরকে সাথে নিয়ে ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার, মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি শ্বেতপত্র রিপোর্টের যে সুপারিশ এই সিম্পোজিয়ামে আলোচিত হয়েছে তার তত্ত্ব-উপাত্ত সঠিক পর্যায়ে সরকারের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এ সিম্পোজিয়ামে কমিটির প্রধান ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের পরিচালনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অনেক শ্রেণিপেশার মানুষ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ব তপত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের দিনটা কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না
জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে ঈদের উৎসবকে যখন রোমন্থন করি, তখন স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাই। ছোটবেলায় ঈদ ছিল এক অন্য রকম আনন্দের উৎসব। নতুন জামা বানাতে দরজির দোকানে মাপ দিতে যাওয়া, তারপর নতুন জামা হাতে পাওয়ার পর সেটি লুকিয়ে রাখা, যেন কেউ আগে দেখে না ফেলে! ঈদের দিন সইদের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, ভাই–বোনদের সঙ্গে স্টুডিওতে ছবি তুলতে যাওয়া—এসব আনন্দের মুহূর্ত আজও হৃদয়ে জাগরূক। মনে হয়, সময় যেন আটকে গেছে, আমি এখনো সেই শৈশব–কৈশোরের রঙিন দিনগুলোর মধ্যেই আছি। কিন্তু যখন বাস্তবতায় ফিরি, তখন সবকিছু বিমূর্ত হয়ে যায়, ধূসর ও বিবর্ণ মনে হয়। মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে জমে।
আমাদের ছোটবেলার ঈদ আজকের মতো জৌলুশময় ছিল না। মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, ছিল পরিমিত জীবনের শিক্ষা। দাদা–দাদার ভাইদের বিশাল পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না হতো বড় বড় পাতিলে। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হতো প্রস্তুতি। পুরোনো শাড়ির পাড় জোড়া লাগিয়ে দরজা–জানালার পর্দা বানানো হতো, সোডা দিয়ে কাপড় ধোয়ার আয়োজন চলত। মুড়ি, চিড়া ও খই সংগ্রহ করে রাখা হতো ঈদের সকালে মলিদা তৈরির জন্য। ময়দার সঙ্গে রং মিশিয়ে কাঁঠালপাতায় গোলা লেপে শুকিয়ে বানানো হতো পিঠা। এত কাজ, এত পরিশ্রমের মধ্যেও ক্লান্তি ছিল না; বরং ঈদের প্রস্তুতিই ছিল এক অন্য রকম আনন্দ।
ঈদের দিন ভোরে সাবান দিয়ে গোসল করে নতুন ছাপা থান কাপড়ের ফ্রক পরার আনন্দ আজও মনে পড়ে। তারপর পরিবারের মুরব্বিদের সালাম করে বয়সভেদে চার আনা থেকে এক টাকা পর্যন্ত ঈদের সালামি পাওয়া ছিল আমাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তি! ঈদের সকালের শুরু হতো মলিদা দিয়ে, এরপর গুড়ের পায়েস কিংবা গুড়ের সেমাই। দুপুরের খাবারে থাকত মুরগির মাংস আর আলুর ঝোল, যার স্বাদ আজও স্মৃতির পাতায় অমলিন।
তারুণ্যে পা রাখার পর ঈদের উৎসব বদলে গেল। বরিশালে পড়াশোনার সময় ঈদ পায় নতুন রূপ—সেমাই, ফিরনি, জর্দা, পোলাও–কোরমার ভিড়ে ঈদ যেন ভোজন উৎসবে পরিণত হলো। এরপর কর্মজীবন, বিয়ে ও সংসারের দায়িত্ব এসে ঈদের রং পাল্টে দিল। নারীদের জন্য ঈদ মানে তখন শুধুই স্বামী–সন্তান ও সংসারের তাগিদ।
আজকের ঈদ আর আমাদের শৈশবের ঈদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। একসময় ঈদ মানে ছিল সীমিত সম্পদের মধ্যেও অপরিসীম আনন্দ। এখন ঈদের বাহারি আয়োজন, নতুন কাপড়–গয়না, খাবারের জৌলুশ বেড়েছে; কিন্তু সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! আগে একটা সাধারণ ফ্রকেই যে আনন্দ লুকিয়ে ছিল, এখন অসংখ্য পোশাকের মধ্যেও তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, নারীদের ঈদ শুরু হয় গভীর রাতে—ফিরনি, সেমাই, হালিম, জর্দা, চটপটিসহ বাহারি রান্নার আয়োজন করে। সকালে রান্নার কাজ শেষ হতেই দুপুরের ও রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে ঈদের দিনটাই কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য কিছুই আর থাকে না।
অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা