আজ রোববার সকাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হতে যাচ্ছে বহুলাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এই যুদ্ধবিরতির আগেও গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বর্বর ইসরায়েল। হামলায় আরও ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জনে পৌঁছেছে। চলমান এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ২৩ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন।অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ইসরায়েলের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে। যার মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, ইসরায়েল প্রথম ধাপে কারাগারে আটক সমস্ত ফিলিস্তিনি নারী ও ১৯ বছরের কম বয়সী শিশুদের মুক্তি দেবে। বন্দিদের সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১,৬৫০-এর মধ্যে হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৫১টি ট্রাক প্রবেশ করছে।  

এই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি সফল হলে তা কেবল সংঘাত থামাবে না, বরং মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে গাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হবে।

চুক্তিতে কী কী বিষয় থাকছে

১। চুক্তির প্রথম ধাপে শিশু, নারী, বয়স্ক এবং আহত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

২। ১৬ দিন পর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় বাকি জীবিত জিম্মি এবং মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৩। ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজা থেকে সরে দাঁড়াবে।

৪। নিরস্ত্র বাসিন্দাদের উত্তর গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ রাসেলের ছোট্ট মেয়ে এখনও বাবা ফিরে আসার অপেক্ষায়

রাজধানীর গু‌লিস্তা‌নে এক‌টি জুতার কারখানার কাজ কর‌তেন জ‌হিরুল ইসলাম রা‌সেল। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবি‌রোধী ছাত্র আ‌ন্দোলন চলাকা‌লে পুলি‌শের গু‌লি‌তে নিহত হন ‌তি‌নি। এরপর অ‌ভিভাবকশূন্য হ‌য়ে প‌ড়ে রা‌সে‌লের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর ছোট্ট মে‌য়ে জুমা। রা‌সেল না থাকায় ঈ‌দের আনন্দও নেই প‌রিবার‌টি‌তে।

রাসেলের মা মোরশেদা বেগম জানান, রাসেলের সা‌ড়ে তিন বছ‌রের মেয়ে জুমা এখ‌নও অ‌পেক্ষায় আ‌ছে তার বাবা ফি‌রে আস‌বে। তার জন্য ঈ‌দের নতুন জামা নি‌য়ে আস‌বে, সেই জামা প‌রে সে বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাবে। অথচ অবুঝ জুমা জা‌নে না যে, তার এই অ‌পেক্ষার প্রহর ফুরাবার নয়। কথাগু‌লো বল‌তে গি‌য়ে কান্নায় ভে‌ঙে প‌ড়েন রাসেলের মা।

ঈদের দিন সোমবার দুপু‌রে শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেলের পরিবারের খোঁজ-খবর নি‌তে তার বা‌ড়ি‌তে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ম‌হেশপুর গ্রা‌মে রা‌সে‌লের বা‌ড়ি‌তে গে‌লে এমন হৃদয়বিদারক মুহূর্তের সৃ‌স্টি হয় সেখা‌নে।

রাসেলের শিশু মেয়ে জুমাকে কোলে নিয়ে ‌বেশকিছু সময় ব‌সে থা‌কেন হাসনাত। রাসেলের মা মোর্শেদা বেগম ও স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌসের সঙ্গে নানা বিষ‌য়ে কথা বলার সময় তাদের হা‌তে নগদ অর্থ সাহায্য তুলে দেন হাসনাত।

জহিরুল ইসলাম রাসেল ম‌হেশপুর গ্রা‌মের মৃত শাহ আলম সরকারের একমাত্র ছেলে। সে ছৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার ফাযিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবার অবর্তমা‌নে সংসা‌রের খরচ জোগা‌তে ঢাকায় একটি জুতার কারখানায় কাজ করতেন। বৈষম্যবি‌রোধী আ‌ন্দোলন চলাকা‌লে ৪ আগস্ট সকা‌লে গু‌লিস্তান এলাকায় পু‌লি‌শের গু‌লি‌তে শহীদ হন তি‌নি। সোমবার হাসনাত আব্দুল্লাহ তার নিজ গ্রাম উপ‌জেলার গোপালনগরে ঈদুল ফিতরের নামাজের পর শ‌হীদ রা‌সে‌লের বা‌ড়ি‌তে যান।

এর আগে তি‌নি উপ‌স্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে ঈ‌দের শু‌ভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ঈদগাহের পাশে গোপালনগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জিয়ারত ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নামাজের পূর্বে হাসনাত আবদুল্লাহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

এসময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলা‌দে‌শে আমার এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করতে পেরে ভাল লাগ‌ছে। গ্রামের মানুষ যে আমাকে এতো ভালোবাসেন ঈদগাহে না আসলে বুঝতে পারতাম না। জুলাই বিপ্লবে সারাদেশের মতো এই দেবিদ্বারেও অসংখ্য মানুষ ফ্যাসিস্টদের হাতে নির্মমভাবে খুনের শিকার হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। সরকার এ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন কর‌তে কাজ করছে।’

তিনি ঐক্য ও সাম্যের দেবিদ্বার গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তি‌নি একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত ক‌রেন। এসময় হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন থেকে হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মা-বাবা বেঁচে নেই এখনও জানে না আরাধ্যা 
  • ২০১২ সালেও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে একই কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস: খলিলুর
  • পদত্যাগ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ওয়াল্টার
  • তাপসের দখল করা জমি ফেরত পাচ্ছে না জেলা পরিষদ
  • ঋণের অর্থছাড় নিয়ে আলোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল
  • শহীদ রাসেলের ছোট্ট মেয়ে এখনও বাবা ফিরে আসার অপেক্ষায়
  • স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন বাবা-মায়েরা
  • ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা
  • স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা
  • বিধ্বস্ত স্কুলে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা