‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিজের নিরাপত্তার জন্য মরিচের গুঁড়াসহ বিভিন্ন কিছু সঙ্গে রাখতাম। কিন্তু সেদিন (১৫ জানুয়ারি) আমার সঙ্গে কিছুই ছিল না। কারণ, আমি হামলার শিকার হবো, এটা কখনোই ভাবিনি। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, তারা আমার ওপর হামলা করেছে।’
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখাকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জানুয়ারি দু’পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হামলার ঘটনায় তিনিসহ অনেকে আহত হন। রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পরে শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন শ্রেষ্ঠা। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিনি হাসপাতালটির ১২ তলার সাধারণ ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নেন। বেলা ১১টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেষ্ঠার মাথার সামনের অংশে ১২টি সেলাই করা। পাশে টুলে বসে আছেন বাবা স্বাক্ষ্য মিত্র তঞ্চঙ্গ্যা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ-সংবলিত গ্রাফিতি সরানোর দাবিতে ১২ জানুয়ারি স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির কিছু লোক এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করল। তারা কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এর প্রতিবাদ জানাতে আমরা ঘেরাও কর্মসূচি দিই। আমরা মূলত দেখতে চেয়েছি, এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়।’
হামলার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘১৫ জানুয়ারি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষ করে আমরা মিছিল নিয়ে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করতে যাই। মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের কাছে পৌঁছালে পুলিশ থামিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা তাদের বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করি। ওখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেন। একদল পুলিশ বলে, আরেক পক্ষ (স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি) চলে গেলে আমরা যেতে পারব। আরেক দল পুলিশ মিছিলটি নিয়ে ফিরে যেতে বলে। এ সময় তাদের বাধা উপেক্ষা করে এগোতেই সভরেন্টির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তারা প্রথমে একজনকে আঘাত করে, এর পর আমার ওপর হামলা চালায়। সেখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক।’
দীর্ঘদিন থেকেই এই সংগঠনের টার্গেটে ছিলেন অভিযোগ করে শ্রেষ্ঠা বলেন, ‘হামলার পর তাদের অনেক ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টে দেখেছি, তারা আমাকে মারার জন্য খুঁজছে। এসব তথ্য-উপাত্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরবরাহ করা হবে।’
সড়কে পড়ে আছে দু’জন, তাদের চারপাশে লাঠিহাতে মারমুখী লোকজন দাঁড়িয়ে– এমন একটি ছবি দেখিয়ে শ্রেষ্ঠা বলেন, ‘ওই দিন ডন না থাকলে ওরা আমাকে মেরেই ফেলত। আমি ওদের হামলায় রাস্তার ওপরে পড়ে গেলে সে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। তখন তারা ওকেও বেদম মারধর করে।’
শ্রেষ্ঠা ডন নামে যার কথা বলছিলেন, তিনি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকাস্থ গারো সম্প্রদায় সংগঠনের সভাপতি ডন জেত্রা। একই হাসপাতালের ১২ তলার সাধারণ ওয়ার্ডের সাত নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ডন শুয়ে আছেন। তাঁর মাথা ও দুই হাতে ব্যান্ডেজ। গতকাল রাত ৯টায় হাতে অস্ত্রোপচারের কথা ছিল বলে জানান আদিবাসী ছাত্র ফোরামের সভাপতি অলিক মৃ।
তিনি বলেন, ‘ডনের সারা শরীরে ব্যথা। তিনি নড়তে পারছেন না। চিকিৎসক বেশি কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তবে আর কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে, এ বিষয়ে চিকিৎসক কিছুই জানাননি।’
শ্রেষ্ঠার বাবা স্বাক্ষ্য মিত্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। জীবনে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী হয়েছি। কখনও এভাবে হামলা করতে দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্রেষ্ঠার মাথায় আঘাত গুরুতর না। তবে স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। মস্তিষ্কে আঘাত না লাগায় বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। এ ছাড়া ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
চার দিন চিকিৎসা নিয়ে গতকাল বিকেলে মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায় ফিরেছেন শ্রেষ্ঠা। এখনও চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে। তাদের গ্রামের বাড়ি রাঙামাটিতে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস ট ব
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ