অভিমান, প্রেম, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক অস্থিতায় ভুগে গেল বছর ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথে হেঁটেছেন। এর মধ্যে ৪৬.১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, এ হার ৬১ শতাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সহজে হতাশায় ডুবে এ পথে পা বাড়াচ্ছে।

২০২৪ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের করা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ভার্চুয়ালি আয়োজিত ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সহায়তার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।

পারিবারিক চাপ, সমাজের প্রত্যাশা, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তুলছে। প্রতিটি আত্মহনন শুধু একটি পরিবার বা শিক্ষাঙ্গনের জন্য শোকের কারণ হলেও এটি শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় ধরনের ফাঁকফোকরকে ইঙ্গিত করে। 

২০২৩ সালে ৫১৩ আর ২০২২ সালে আত্মহত্যা করে ৫৩২ শিক্ষার্থী। সে তুলনায় গেল বছর আত্মহননের ঘটনা কম ঘটার তথ্য মিলেছে। এ ব্যাপারে আঁচল ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে বলে আমাদের গবেষকরা মনে করছেন।

জরিপে দেখা গেছে, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ ছেলে। তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল স্কুলগামীদের মধ্যে, এ হার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭ দশমিক ৭৪ এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

আর শিক্ষার স্তর অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৯ দশমিক ৪ ও স্নাতক পর্যায়ের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ দশমিক ৯, ডিপ্লোমা পর্যায়ের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকার দশমিক ৬ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী, ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। পরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী, ২৪ শতাংশ। আর আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বয়স ১ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, গত বছর ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ২৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে। খুলনায় ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহী ও বরিশালে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ করে, রংপুরে ৭ দশমিক ৭, ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৫ ও সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার করেছে।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বলেছে, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমানে, এ হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৩৯ দশমিক ১ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ৩৮ দশমিক ৪৬, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পড়ালেখার চাপে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ছিল স্কুল পর্যায়ে ৫৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ২৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে মানসিক অস্থিরতার কারণে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ধারণা কম। বিষয়টি নিয়ে তারা সচেতনও নয়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক সায়্যেদুল ইসলাম বলেন, সফলতা উদ্‌যাপন করা হলেও ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সমাজে শেখানো হয় না। তিনি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, হতাশা ও বিষণ্নতার অশুভ চক্র থেকে বের হতে না পেরে তারা বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। আত্মহত্যা হলো ইচ্ছা করে নিজের জীবন শেষ করার একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ। মানুষের মানসিক যন্ত্রণা, হতাশা এবং অসহায়ত্বের এক মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ এটি।

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী নওফেল জামির বলেন, শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করা জরুরি। একজন শিক্ষার্থী যেন তাঁর মনের কথা খুলে বলার জায়গা পান। তিনি যেন নিজেকে বঞ্চিত ও বিচ্ছিন্ন মনে না করেন। পড়াশোনার বাইরে শিক্ষার্থীর ইতিবাচক নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের মধ্যে এই বার্তা ছড়াতে হবে যে জীবন মূল্যবান এবং জীবন একটাই।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে আঁচল ফাউন্ডেশনের বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাম্বাসাডর প্রোগ্রাম, বন্ধু সহযোগিতা গ্রুপ, লাইফ স্কিলস ওয়ার্কশপ, গেমিফিকেশন টেকনিক, ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম চালু, পারিবারিক কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, সৃজনশীল থেরাপি ক্লাস এবং ডিজিটাল মেন্টাল হেলথ ক্যাম্পেইন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল বছর বয়স ক পর য য় পর য য় র দশম ক ৮ ৬ দশম ক দশম ক ১ ৭ দশম ক দশম ক ৫ ৫ দশম ক দশম ক ৭ সবচ য় র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কোম্পানির পর্ষদ সভা স্থগিত

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা স্থগিত করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো— রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড, কে অ্যান্ড কিউ বাংলাদেশ লিমিটেড ও লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রিং শাইন টেক্সটাইল: এ কোম্পানির পর্ষদ সভা বুধবার ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। পর্ষদ সভায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর, ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ এ প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

লভ্যাংশ দেবে না প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড

কে অ্যান্ড কিউ: বুধবার ২৯ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। পর্ষদ সভায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর, ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ এ প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি।

লুব-রেফ: এ কোম্পানির পর্ষদ সভা বুধবার ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। পর্ষদ সভায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর, ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ এ প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুমার নামাজের পর তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ 
  • ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন’ প্রতিবেদন প্রকাশ
  • পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ লেখকের
  • পুরস্কার তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ লেখকের
  • তিন কোম্পানির পর্ষদ সভা স্থগিত
  • ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত ফাইন ফুডস
  • এমবিবিএস ভর্তি : প্রমাণ নিয়ে আসেনি মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৪৯ শিক্ষার্থী
  • মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ ৫৬ শতাংশই দিয়েছেন ভুয়া তথ্য
  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ তালিকা চূড়ান্ত
  • গত বছর লোকসান করেছে সিঙ্গার বাংলাদেশ