চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আগে প্রতি মাসে অন্তত একটি নাটক হলেও মঞ্চায়িত হতো। শীত-বসন্তসহ বিভিন্ন উৎসব মৌসুমে হতো নাট্য উৎসবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। গত মে মাসেও পাঁচটি ও জুনে এখানে চারটি নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর যেন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। নাটক মঞ্চায়ন যেমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কমেছে, তেমনি কমেছে অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও। আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়িত হয়েছে মাত্র চারটি নাটক। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে কোনো নাটকই মঞ্চায়িত হয়নি।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র বলছে, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে সংগীত, নৃত্য, নাটক মিলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে প্রায় ৪৫টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪টি, মার্চে একটি, এপ্রিলে ২টি, মে মাসে ১০টি, জুনে ৬টি, জুলাই ও আগস্টে ৩টি, সেপ্টেম্বরে ৫টি ও অক্টোবরে ৮টি সংগীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে হয়েছে ১২টি সংগীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফেব্রুয়ারিতে তিনটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেছিল প্রিয়প্রাঙ্গণ, শিল্পী শুভাশীষ ও চট্টগ্রাম আর্ট স্কুল। মার্চ মাসে স্কেচ গ্যালারি ও শিল্পী রিগানের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। গত অক্টোবরে ইসলামী ছাত্রশিবির সেখানে আয়োজন করে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। নভেম্বর মাসে দুটি ও ডিসেম্বর মাসে তিনটি চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। 

অভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটেও। আগস্ট-পূর্ববর্তী ছয় মাসে সেখানে ১৫টি নাটক মঞ্চায়িত হলেও পরের ছয় মাসে হয়েছে মাত্র ৪টি। উচ্চাঙ্গ, রবীন্দ্র, নজরুল এবং লালনভিত্তিক বিভিন্ন সংগীতের অনুষ্ঠান নিয়মিতই হতো থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। ৫ আগস্টের পরে সেই চিত্র একেবারে বিপরীত। চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য নাট্যদল তীর্যক, নান্দিকার, মঞ্চমুকুট, কথক নাট্য সম্প্রদায়, অনন্য, অরিন্দমসহ সক্রিয় সংগঠনগুলোকে গত পাঁচ মাসে নাটক মঞ্চায়ন করতে দেখা যায়নি থিয়েটার ইনস্টিটিউটে।

থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ক্ল্যাসিক্যাল, উচ্চাঙ্গ সংগীত, রবীন্দ্র ও নজরুল এবং লালনভিত্তিক বিভিন্ন সংগীতের অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়ে থাকে। গত বছরের প্রথম তিন মাসে সেখানে পাঁচটি সংগীতানুষ্ঠান হয়েছে। অন্যদিকে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে হয়েছে প্রায় ২০টি সংগীতানুষ্ঠান।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জুলাই, আগস্ট মাসে কোনো সংগীতানুষ্ঠান হয়নি। সেপ্টেম্বরে একটি, অক্টোবরে তিনটি, নভেম্বরে তিনটি ও ডিসেম্বরে পাঁচটি সংগীতভিত্তিক অনুষ্ঠান হয়েছে। 

অক্টোবরের রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে অনুষ্ঠান 
আয়োজিত হলেও, লালনভিত্তিক কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। সাধারণত অক্টোবর, নভেম্বর ও  ডিসেম্বরে এখানে লালনভিত্তিক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে।
শুধু নগরী নয়; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক বছরের অনুষ্ঠান তালিকা পর্যালোচনা  করেও পাওয়া গেছে এমন চিত্র। মঞ্চ নাটক,  নৃত্য ও সংগীতের মতো অনুষ্ঠানের সংখ্যা  সেখানেও কমে গেছে। বেড়েছে সভা-সেমিনার। আবার বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীতে এতদিন যারা নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছে তাদের উপস্থিতিও এখন কমে এসেছে। 
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘বছরের এই সময়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যে পরিমাণ সক্রিয় থাকত, এ বছর তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। নিয়মিত যারা অনুষ্ঠান করত তাদের অনেকে এখন নিষ্ক্রিয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তাদের সক্রিয় হতে হয়তো সময় লাগছে।’

থিয়েটার ইনস্টিটিউটের শৈল্পিক পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার একটা প্রভাব আছে সর্বত্র। আমার উপলদ্ধি বলছে, করোনা-পরবর্তী সময় থেকেই নাটক মঞ্চায়নের সংখ্যা কমেছে। নতুনদের মধ্যে আমরা আগ্রহ তৈরি করতে পারছি না ঠিকভাবে। এটির নানা কারণও রয়েছে।’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি যত স্থিতিশীল হবে সংস্কৃতির অঙ্গন তত মুখর হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বেড়েছে আবৃত্তি ও সভা-সেমিনার
থিয়েটার ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন বেড়েছে। এই দুই মাসে তিনটি করে আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে দুটি, ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে একটি করে আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়। সাধারণত শীত মৌসুমে নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য শিল্পকলা একাডেমি, থিয়েটার ইনস্টিটিউটের হলগুলো সভা-সেমিনারের জন্য পাওয়া কঠিন হতো। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় সেখানে সভা-সেমিনারের সংখ্যা বেড়েছে।

আগে মাসে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয়টি আলোচনা সভা হতো থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। অক্টোবর থেকে এখানে সাত থেকে দশটি আলোচনা সভা হয়েছে প্রতি মাসে। 

সরব হওয়ার প্রহর গুনছে চবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে অধিকাংশ সাংস্কৃতিক সংগঠন যেন থেকেও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আবৃত্তি মঞ্চ, অঙ্গন, উত্তরায়ণ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ, বারোমাসি, লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন, রঁদেভু শিল্পীগোষ্ঠী, আবৃত্তি সংসদ, ভিন্নষড়জসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে পাঁচটি জোট গঠন করলেও বাকিগুলো আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে তাদের নেতারা বলেছেন, অতীতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সরব ছিল, তা গত দশ বছরে কমে গেছে। আগস্টের পর আরও কমেছে কার্যক্রম। বিশ্বদ্যালয়ের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক দল বারোমাসির প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা ভিন্নধর্মী সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে সরব আছি। প্রশাসনের সহায়তা পেলে আরও সরব হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।’

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম মহাজন বলেন, ‘সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও বিভাজন আছে। আমাদের পরস্পরকে আরও একত্র হতে হবে। পাঁচ আগস্টের আগেও আমরা অনেক বাধা মোকাবিলা করেছি; এখনও করতে হচ্ছে। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া কম থাকার কারণে কিছু সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন আরও সরব হয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ত ক স গঠন ন ষ ঠ ন হয় ছ শ ল পকল এক ড ম আগস ট বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) রাজনীতি করা নয়টি ছাত্র সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে পরিচিতি সভা করেছে নবগঠিত ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’।

শনিবার (১ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাবি শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ জিহাদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন খালিদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।

আরো পড়ুন:

রাজধানীর লোকাল বাসে মারধরের শিকার ঢাবি শিক্ষক

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ 

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, মুখপাত্র আশরেফা খাতুন, ঢাবি সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, সদস্য সচিব মহির আলম প্রমুখ।

সভায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “জুলাইয়ে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। জুলাইয়ের পর এখনো আমরা সহাবস্থানের রাজনীতির চর্চা করছি। আশা করি, সহাবস্থানের এ ধারা বিরাজমান থাকবে। বাংলাদেশের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবো।”

তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে নয় দফার সপ্তম দফায় লেজুড়বৃত্তির বিরোধিতা করেছি। আমরা সামনেও লেজুড়বৃত্তির বিপক্ষে থাকব। ডাকসু এবং সব ছাত্র সংসদ অতিদ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া চাই। এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে বসে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করা প্রয়োজন।”

ঢাবি সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “জুলাইয়ের আগে ছাত্র সংগঠনগুলো একসঙ্গে এক জায়গায় বসার কথা আমরা কেবল স্বপ্নে কল্পনা করতাম। আজ তা বাস্তবে দেখছি। সবাই মিলে শহীদদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কাজ করে যাব। সব রকমের দখলদারিত্ব ও বিভাজনের অবসান করে ঐক্যের বাংলাদেশের আহ্বান জানাই। আমরা রাজনৈতিক সহাবস্থানের ভিত্তিতে সন্ত্রাসকে দূরে রেখে মধ্যমপন্থি রাজনীতি করব।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভা