সীমান্তে দু’দেশের মানুষের সংঘর্ষ সাউন্ড গ্রেনেড
Published: 19th, January 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চৌকা-কিরণগঞ্জ সীমান্তে গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকার ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিজিবির কড়া প্রতিবাদের মুখে পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। এর পর সীমান্ত থেকে বিএসএফের অতিরিক্ত সদস্যদের সরানোর পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ ভেতরে নেওয়া হয়। এতে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
ভারতীয়দের ছোড়া পাথর ও হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার মেসবাহুল হক, বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো.
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সীমান্তে দুই বাংলাদেশি ভারত ভূখণ্ডে ঘাস কাটতে যান। এ সময় তারা মাঠের গমও কাটেন। বিষয়টি বিএসএফ সদস্যদের নজরে এলে কাঁটাতারের বেড়ার করিডোর দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা দল বেঁধে ঢুকে ওই দু’জনকে ধাওয়া করে। স্থানীয় বাংলাদেশিরা পাল্টা প্রতিহত করতে শূন্য রেখায় জড়ো হন। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে বাংলাদেশের নাগরিক রনি আহত হন। দুপুর ২টার দিকে ভারতীয়রা হাঁসুয়া নিয়ে কাঁটাতারের বেড়াহীন জায়গা দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে অন্তত ২০টি মাঝারি আমগাছ এবং অর্ধশত বরইগাছ কেটে ফেলে। বিশ্বনাথপুর গ্রামে মসজিদের মাইকে সীমান্ত রক্ষার আহ্বান জানানো হলে গ্রামবাসী দল বেঁধে লাঠিসোটা ও হাঁসুয়া নিয়ে সীমান্তে জড়ো হন। এ সময় ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ফারুক নামে একজন আহত হন।
কালীগঞ্জ ঘোনটোলা গ্রামের রবু জানান, ফারুক মোটরসাইকেলে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য অবস্থান করলে ভারতীয়দের ছোড়া পাথর তাঁর মাথায় লাগে। একই এলাকার মিঠুন জানান, জমির ফসল রক্ষার জন্য বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ১০ ভারতীয় বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে রনির ওপর আক্রমণ করে।
মকবুল হোসেন জানান, তাঁর আম ও বরইগাছ কেটেছে। এর বিচার দাবি করেন তিনি। পেয়ারা বেগম বলেন, ছেলেকে খুঁজতে এসে দেখলাম আমার সরিষার ক্ষেত নষ্ট করেছে ভারতীয়রা। একজন বাংলাদেশির ভারতে গিয়ে গম কাটার অপরাধে বিচার করা যেত। পতাকা বৈঠকে এ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যেত। কিন্তু এভাবে ভারতীয়রা ঢুকে সব নষ্ট করবে, তা মানা যায় না।
স্থানীয় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. বাদশা বলেন, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
বিজিবি-বিএসএফের বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের কৃষক সীমান্ত এলাকায় ঘাস কাটতে যান। এ সময় তারা গম কেটে ফেলেন। এর পর সীমান্তের ভারতের বাসিন্দা আমাদের কিছু আমগাছের ডাল কেটে ফেলেছিল। এটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে দুটি অনুরোধ ছিল। একটি অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্যদের সরিয়ে ফেলা। আরেকটি শূন্য রেখায় জড়ো হওয়া তাদের নাগরিকদের সরানো। অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএসএফের তরফ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের শূন্য রেখা থেকে সরানোর অনুরোধ করা হয়। ৬টার মধ্যে আমরা তাদের সরিয়ে নিয়েছি।
বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে– এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। আর বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি হয়েছে। পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি এখন শান্ত।
আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের কাছে আহতের তেমন পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজনকে (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে তারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আশা করছি, বিজিবি ও বিএসএফ সদরদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে কথা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এসএফ র ব এসএফ স পর স থ ত এল ক র র পর স র জন য স ঘর ষ এ সময় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ ব্যাপারে বিজিবির দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিহত যুবক হলেন কসবার পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে আল আমীন (৩২)।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কসবার পুটিয়া সীমান্তের ওপারে কয়েকজন যুবককে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুঁড়ে বিএসএফ। এতে আল আমীন নামে এক যুবক আহত হয়। পরে বিএসএফ সদস্যরা তাকে ভারতের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শুক্রবার রাত ৯টায় মারা যান তিনি। মরদেহ বিএসএফ ক্যাম্পে রয়েছে।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদির ও কসবার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তারা আল আমীন নামের ওই যুবকের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাটি স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে বিজিবির সুলতানপুর ৬০ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।