মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের নাম থাকায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গতকাল শনিবার মোংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী। ১৯ জানুয়ারি সুন্দরবন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনে ভোট বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

সুন্দরবন ইউনিয়ন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা জানান, অগঠনতান্ত্রিকভাবে ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপি সেজে যারা দলে ঢুকে পড়েছে, সেসব আওয়ামী লীগ কর্মীকে প্রতিহত করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কথা ছিল ৫১ সদস্যের ভোটার তালিকা করা হবে, সেখানে প্রতি ওয়ার্ডে অনিয়ম করে ২০০-২৫০ জনকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। দলীয় কোন্দলে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করে ফের কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুন্দরবন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী ফজলু খান, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী  ওয়াজেদ আলী শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম শেখ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ.

ওয়াদুদ শেখ প্রমুখ।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন ইউনিয়নে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্বরত কমিটির দু’জনের সঙ্গে সমকালের কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফকরুল দাবি করেন, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করার সঙ্গে জড়িত নন তিনি। 

খোকন মোছল্লী ভোটার তালিকায় কিছু বিতর্কিত নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা কমিটির অন্য সদস্যরা ভালো বলতে পারবেন। কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ন ত কর ম ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো

সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।

আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।

নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র‍্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।

আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরাপদ থাকুক বনের প্রাণীরা
  • এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো