৭৩ ঘরের মধ্যে খালি ৫০ সুপেয় পানির সংকট
Published: 18th, January 2025 GMT
‘আশপাশে কাজ করে খাওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করার মতো প্রতিষ্ঠানও নেই। বাড়ি-জমিওয়ালারা অনিয়ম করে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। তাদের অনেকে এখানে থাকছেন না।’ কথাগুলো ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী তাহের মোড়লের (৭০)। অন্য বাসিন্দা আছির উদ্দিনের ভাষ্য, তাঁর নামে কোনো ঘর নেই। বিউটি নামে একজনের নামে বরাদ্দ ঘরে থাকেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা থাহে না, তারা ঘর পাইছে। আমি থাহি, আমার নামে ঘর নাই।’
এ ধরনের নানা সংকটে চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে বলে জানা গেছে। বাসিন্দারা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও কাজের ব্যবস্থা না থাকায় প্রকল্পটিতে এখন অনেকে বসবাস করছেন না। বরাদ্দে অনিয়মের কারণে অনেক ঘর শুরু থেকেই
তালাবদ্ধ রয়েছে। যারা থাকছেন, তাদের অনেকের নামে বরাদ্দ নেই।
উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে এসব ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত এ প্রকল্পে ঘর রয়েছে ৭৩টি। প্রতিটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এসব ঘরে গৃহহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় পরিবারের বসবাস করার কথা। ২০২২ সালের ২১ জুলাই ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই দিন প্রকল্পের আঙিনায় জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বরাদ্দপ্রাপ্তদের হাতে ঘরের দলিল ও চাবি তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তদারকির অভাবে প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, ৭৩টি ঘরের মধ্যে মাত্র ২৩টির মতো ঘরে লোকজন বসবাস করছেন। বাকি ঘরগুলোয় তালা দেওয়া। যেসব ঘরে বসবাস আছে, সেগুলোর কয়েকটির বরাদ্দ অন্যদের নামে। যাদের নামে বরাদ্দ, তারা শুরু থেকেই থাকেন না।
প্রকল্পটি ঘুরে ৪০টির বেশি ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এসব ঘরের প্রকৃত মালিক বসবাস করেন না। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা ভালো। গ্রামে তাদের নিজস্ব ঘরবাড়ি ও জমিজমা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭৩ নম্বর ঘরের বরাদ্দ কামাল হোসেনের নামে। কিন্তু গ্রামে তাঁর জমাজমি ও পাকা বাড়ি রয়েছে। আবু হানিফার নামে বরাদ্দ ৪৩ নম্বর ঘর। অথচ গ্রামে তাঁর বাড়িসহ দুই একর জমি রয়েছে।
আবু হানিফা বলেন, ‘সুযোগ পেয়েছি তাই নিয়েছি। প্রকল্পের খাস জায়গা আমাদেরও কিছু জায়গা ছিল। হয়তো এ কারণে দিয়েছে।’ কামাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। আশ্রয়ণে আব্দুল কদ্দুসের নামে ঘর বরাদ্দ নেই। তিনি শাকিল নামে একজনের ঘরে থাকেন। শাহিনুর নামে একজন বলেন, তিনি জসিম উদ্দিনের ৬ নম্বর ঘরে থাকছেন। কিন্তু যার নামে বরাদ্দ, তাঁকে তারা কখনও দেখেননি।
আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, প্রকল্পের শুরুতে ১১টি নলকূপ বসানো হয়েছিল। সেগুলো অকেজো পড়ে আছে। নিজেদের চেষ্টায় দু-একটি নলকূপ চালু রাখলেও তা দিয়ে ঘোলা পানি ওঠে। রাতে চারটি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা থাকলেও একটিও জ্বলে না। এ কারণে সন্ধ্যার পর সেখানে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, ১৫ টাকা কেজির চাল বা টিসিবির পণ্য তাদের ভাগ্যে জোটে না। মন চাইলেই তাদের উদ্বাস্তু বলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রকল্পের সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, একটি নালা নির্মাণ ও নলকূপগুলো সচল করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। চর বেতাগৈর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনের ভাষ্য, প্রকৃত অসহায় মানুষ বরাদ্দ পায়নি বলেই ঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকে। আশ্রয়ণে থাকা বেশির ভাগ ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা এখানে নয়। নিয়ম অনুযায়ী, তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য না।
নান্দাইলে সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।
স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’
তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।