এহসান হক। বিজ্ঞানী ও গবেষক। তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সিয়াল পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল আর্লি ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ড ফর সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স’ অর্জন করেছেন। ১৪ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫ সালে এ পদকে সম্মানিত ৪০০ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর নাম ঘোষণা করে হোয়াইট হাউস। লাল-সবুজের এই তরুণ বিজ্ঞানী ও গবেষককে নিয়ে লিখেছেন জসীম উদ্দিন আকাশ
যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানসূচক পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল আর্লি ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ড ফর সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স’ অর্জন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষক এহসান হক। ১৪ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছর এ পদকে সম্মানিত ৪০০ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর নাম ঘোষণা করে হোয়াইট হাউস। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে এ পদক পাচ্ছেন এহসান হক। এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশি কম্পিউটার বিজ্ঞানী সাঈফ সালাহউদ্দিন এ পদক অর্জন করেছিলেন। নির্বাচিত বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস থেকে শিগগিরই এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এখনও পুরস্কার তুলে দেওয়ার দিন-তারিখ জানানো হয়নি।
একটু পেছনে ফিরে…
১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অসাধারণ সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সম্মান জানাতে এ পদক চালু করেন। হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এ পুরস্কারের লক্ষ্য হলো উদ্ভাবনী এবং সুদূরপ্রসারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের স্বীকৃতি প্রদান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ক্যারিয়ার সচেতনতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বকে তুলে ধরা। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে এ পদক পাচ্ছেন এহসান হক। ২০১৬ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে এ পদক পান কম্পিউটার বিজ্ঞানী সাঈফ সালাহউদ্দিন।
যে গবেষণায় এলো সাফল্য
মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স–এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। বিশেষ করে স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার, অটিজম ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য এ সম্মাননা পেয়েছেন।
বর্তমান ব্যস্ততা
সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশি এ বিজ্ঞানী ও গবেষক। এর আগে তিনি সৌদি আরবের জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সৌদি সরকারের তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাকেন্দ্র–সৌদি ডেটা অ্যান্ড এআই অথরিটি বা সাডায়ায়ও কাজ করেছেন এহসান হক।
জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে
১৯৮১ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম এহসান হকের। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার উদয়ন স্কুলে। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এ কলেজের সায়েন্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এহসান হক। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে স্নাতকের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ভর্তি হন পেন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে মাস্টার্স করেন ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে। এরপর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির মিডিয়া ল্যাব থেকে পিএইচডি ও গবেষণা সম্পন্ন করেন।
মায়ের অনুপ্রেরণা
নিজের উঠে আসা এবং সাফল্যের জন্য মাকে অনুসরণীয় মনে করেন এ বিজ্ঞানী ও গবেষক। তাঁর মা সমাজের বিভিন্ন ধরনের কানাঘুষা উপেক্ষা করে পড়াশোনাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সন্তানদের অনুপ্রাণিত করেছেন। পুরান ঢাকার ছোট্ট গলিতে ১৪ বছরের নববধূ হওয়া সত্ত্বেও তিনি বড় স্বপ্ন দেখতে পিছপা হননি কখনও। মা অকালে চলে গেলেও মায়ের স্বপ্নগুলো রয়ে গেছে সন্তানদের মাঝে।
আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন!
এইচএসসির পর দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনার জন্য মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবরণী একসঙ্গে পড়তেন। মা-ই তাঁকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা ভাবতে বলেন।
এত প্রতিষ্ঠান থাকতে এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন? মায়ের কাছে জানতে চাইলে মা বলেন, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কন্যা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। যদি কোনোভাবে তাঁর সন্তানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে, তাহলে হয়তো কোনো সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে দাওয়াত মিলতে পারে। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টের বাসায় বা অফিসে প্রবেশ করতে পারা যেন বিশাল ব্যাপার ছিল মায়ের কাছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সেই হোয়াইট হাউস থেকে সন্তান পেলো সর্বোচ্চ সম্মাননা। আহ, আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন– এই আক্ষেপ সন্তানের!
উদ্ভাবন ও অর্জন
এমআইটির মিডিয়া ল্যাব থেকে পিএইচডি ও গবেষণা সম্পন্ন করে উদ্ভাবন করেন ম্যাক ও লিসা নামের দুটি কম্পিউটার সিস্টেম। যেগুলো মুখভঙ্গি দেখে মানুষের কথা বুঝতে পারে। ২০১৬ সালে এমআইটি টেক রিভিউ ৩৫ বছরের কম বয়সী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে ভূষিত করে তাঁকে। ২০১৭ সালে সায়েন্স নিউজ তাঁকে ‘টেন সায়েন্টিস্ট টু ওয়াচ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়াও এহসান হক ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গুগল ফ্যাকাল্টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন তাঁকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একজন উদীয়মান পথপ্রদর্শক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ন এ পদক
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিতে থাকা পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের কড়োগ্রাম এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এনাম ফকির, সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল করিম আলাল।
জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান জানান, মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সিনএজি অটো রিকশায় থাকা ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
উদ্ধারকৃতদের মধ্য এনাম ফকির স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এনামের বাবা আমজাদ ফকির গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এখান থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।”
ঢাকা/শোভন/এস