হিমালয় অভিযান বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। শীতকালে তুষারপাত ও বৈরী আবহাওয়ায় তা আরও বেড়ে যায়। সাধারণত এ সময়ে হিমালয়ে অভিযান থেকে বিরত থাকেন পর্বতারোহীরা। এ চ্যালেঞ্জটাই গ্রহণ করেন বাংলাদেশের পাঁচ নারী। এবারই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নারী অভিযাত্রী দল নেপালে অভিযান চালায়। ল্যাংটাং হিমালয়ের তিনটি চূড়া– ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন ইয়ালা শৃঙ্গ, ৫ হাজার ১৪৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুরিয়া শৃঙ্গ এবং ৪ হাজার ৭৪৭ মিটার উঁচু গাঁসাইকুণ্ড শৃঙ্গ জয় করেন নারী অভিযাত্রীরা। প্রতিটি চূড়ায় দাঁড়িয়ে গর্বের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন তারা। 
তীব্র ঠান্ডার মধ্যে দুর্গম হিমালয় অভিযান সম্পন্ন করা নারীদের মধ্যে রয়েছেন– এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। তাঁর নেতৃত্বে অভিযানে আরও অংশ নেন ইয়াসমিন লিসা, তহুরা সুলতানা রেখা, প্রশিক্ষণার্থী ট্র্যাকার এপি তালুকদার এবং অর্পিতা দেবনাথ। 
তবে এই পাঁচ নারী পর্বতারোহীর গল্প এটুকুই নয় শুধু। তাদের পেছনে শক্তির আধার হয়ে রয়েছেন নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত বেগম রোকেয়া। গত বছরের মে মাসে ইউনেস্কোর ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রিজিওনাল রেজিস্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক’ তালিকায় স্থান করে নেয় এই নারীবাদী কথাসাহিত্যিকের উপন্যাস ‘‘সুলতানা’জ ড্রিম’’। এই নারীবাদী সাহিত্যকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘‘সুলতানা’জ ড্রিম আনবাউন্ড’’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত’ স্লোগানে এ অভিযানের আয়োজন করে পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’। মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় শীতকালীন এ পর্বতাভিযানে সহযোগী হিসেবে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
গত ২৮ ডিসেম্বর অভিযাত্রী দলটি ৪ হাজার মিটার উচ্চতাসম্পন্ন লিরুং লেকে পৌঁছায়। শীতের কারণে লেকের পানি জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। বিকেলের দিকে আবার তীব্র তুষারপাত শুরু হয়। এ অবস্থায় পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর ইয়ালা পর্বতের বেসক্যাম্পে (৪৮৪০ মিটার) পৌঁছায় অভিযাত্রী দল।
তিন পর্বতারোহী শৃঙ্গের উদ্দেশে অভিযানে যাবেন বলে বেসক্যাম্পে রয়ে যান। বাকি দুজন নবীন ট্র্যাকার বেসক্যাম্প থেকে ফিরে যান কেয়াঞ্জিং গ্রামে। ৩০ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় নিশাত মজুমদার, ইয়াছমিন লিসা ও তাহুরা সুলতানা রেখা ইয়ালা পর্বতের চূড়ায় পৌঁছান। এটি ছিল ‘‘টিম সুলতানা’জ ড্রিম’’-এর প্রথম সফল পর্বতারোহণ।
জানা যায়, নয়া কাংগা আর ব্যাডেন পাওয়েল একই উচ্চতার। ব্যাডেন পাওয়েলের তুষার এবং বরফের যে অবস্থা নয়া কাংগার একই অবস্থা ছিল। এ দুটি পিক আরোহণ করার জন্য আরও সময় এবং সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল। এই অভিযাত্রী দলের তা ছিল না। এ কারণে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। দুই হাজার মিটার নিচে নেমে দলটি আবার দলবদ্ধ হয়।
নিশাত মজুমদার বলেন, ‘আমরা ব্যাডেন পাওয়েল শৃঙ্গের ৪ হাজার ৬০০ মিটারে একটি বেসক্যাম্প স্থাপন করে ৫ হাজার ৪০০ মিটার পর্যন্ত পথ খুলে দিয়েছিলাম। ফাটলগুলো আমাদের অবসর থাকতে দেয়নি। হাল ছাড়ার পরিবর্তে, আমরা পুনর্গঠিত হয়ে মোট তিনটি চূড়ায় আরোহণের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করি।’
অভিযাত্রী দল ক্যায়াঞ্জিং থেকে চলে যায় গোঁসাইকুণ্ডে। নবীন দুই অভিযাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গোঁসাইকুণ্ড শৃঙ্গে আরোহণ করে অভিযাত্রী দল। তারা সুরিয়া শৃঙ্গেও আরোহণ করেন। সব অভিযান সফলভাবে শেষ করে অভিযাত্রী দল ১২ জানুয়ারি কাঠমান্ডু পৌঁছায়।
প্রথমবারের মতো এমন অভিযানে গিয়েছেন ট্র্যাকার অর্পিতা দেবনাথ। তিনি জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের সময় ইয়ালা বেসক্যাম্পে যাওয়ার পথে তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি হন। চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার পর, অভিযানটি জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে জানিয়ে অর্পিতা আরও বলেন, ‘‘আমাকে স্যার এডমন্ড হিলারির এ কথাগুলো অনুপ্রাণিত করে– ‘আমরা যে পাহাড় জয় করি তা নয়, বরং নিজেদেরই জয় করি’।’’
আরেক পর্বতারোহী তহুরা সুলতানা রেখা জানান, পর্বতারোহণের পথ বেছে নেওয়ার সময় তাঁকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘মানুষ সবসময় কটূক্তি করে, ‘এতে দেশের কী লাভ?’ ‘কেন একজন নারী পাহাড়ে উঠবে?’ কিন্তু পাহাড় আমার কাছে মায়ের মতো; আর যা-ই হোক না কেন, আমি আমার স্বপ্ন এবং পাহাড়ের প্রতি আমার ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দেব।’’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ড.

সুসান ভাইজ বলেন, ‘‘এই অভিযান ‘সুলতানা’জ ড্রিম’-এর চেতনা বহন করে এবং লিঙ্গীয় সমতা, শিক্ষা এবং টেকসই উগ্রগতিতে বেগম রোকেয়ার কাজের কালজয়ী প্রাসঙ্গিকতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।’’ v

ছবি: তহুরা সুলতানা রেখার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো কথা না বলেও অনেক কথা বললেন সুনেরাহ্

লিখনের মুখে কোনো কথা নেই। তবে চোখ আর অভিব্যক্তিতে হাজারও কথা। কথা বলতে না পারা চরিত্রটিকে কড়ায়–গন্ডায় পড়তে পেরেছেন দর্শক। চরিত্রটির নির্বাক চাহনিতে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। পর্দা থেকে দর্শকের হৃদয়জুড়ে মায়া ছড়িয়েছেন লিখন; কখনো হাসিয়েছেন, কখনো ভাবিয়েছেন।

লিখন চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন সুনেরাহ্। ক্যারিয়ারে প্রথমবার বাক্প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, প্রথমবারই লেটার মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, চরিত্রটির মায়ায় পড়ে গেছেন তাঁরা।

প্রস্তাবটা পাওয়ার পর ভাবতে সময় নেননি সুনেরাহ্। লিখনের জন্যই যেন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি, ‘ক্যারিয়ারে এমন কিছু চরিত্র করে যেতে চাই। ফলে ভাবতে সময় নিইনি। চলচ্চিত্রের গল্পটাও দারুণ।’

‘ন ডরাই’–এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! চলচ্চিত্রে আয়েশা চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ্। ‘অন্তর্জাল’ চলচ্চিত্রে প্রিয়াম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’-তেও অভিনয় করেছেন। বরাবরই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নজর কেড়েছেন তিনি।

‘দাগি’ চলচ্চিত্রে বাক্‌প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ্

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো কথা না বলেও অনেক কথা বললেন সুনেরাহ্