পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকলে বন্দি পুরুষ
Published: 18th, January 2025 GMT
পুরুষ মানুষ পরিবারের সবার জন্য নিজের ব্যক্তিগত সব সুখ বিসর্জন দিয়ে দেবেন। তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে মা-বাবা, ভাইবোন সবার। দায়িত্ব নিতে হবে তাঁর স্ত্রী, সন্তান এবং শ্বশুরবাড়ির। একজন পুরুষ অবশ্যই তাঁর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাঁকে অবশ্যই ব্যক্তিগত সব সুখ-দুঃখ ভুলে একজন ‘শক্ত পুরুষ’ হতে হবে, যিনি শত কষ্টেও ভেঙে পড়বেন না। যিনি পরিবারের সবার আনন্দ নিশ্চিত করতে নিজের জীবনের সব সুখ কোরবানি দিতে পর্যন্ত দ্বিধা করেন না। এমনকি জীবনসঙ্গীকেও বিসর্জন দিতে পারেন।
এ রকম অনেক ঘটনা এ সমাজে অহরহ ঘটছে। যেখানে বাড়ির বড় ছেলে বা দায়িত্বশীল ভাইটি পরিবারের সবার কথা ভাবলেও তিনি নিজের সবচেয়ে কাছের প্রিয় মানুষটি, এমনকি নিজের সঙ্গিনীকে রেখে দেন দ্বিতীয় প্রায়োরিটিতে আর নিজেকে রাখেন সবার শেষে। পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ হওয়ার পর বাবা তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসটি কেনেন; কখনও হয়তো সেটিও কেনেন না। পুরুষ মানুষের কাঁদতেও মানা। তাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় তাঁর ‘মেল ইগো’ আঘাতপ্রাপ্ত হবে যদি নিজের ভেতর একটি শক্ত দেয়াল তৈরি করতে না পারে। যদি তাঁর দুর্বলতা বাইরের কেউ বুঝে ফেলে, তবে তো সেটি তাঁর জন্য ভীষণ লজ্জাকর। একজন পুরুষকে হতে হবে খুবই দৃঢ় এবং শক্ত। এই দৃঢ়তা প্রমাণ করতে অনেক পুরুষ জলাঞ্জলি দেন তাঁর স্বপ্নের সঙ্গীকে পর্যন্ত। একতরফা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কত নিরপরাধ মেয়ের কপালে জোটে তালাকনামার তকমা। বউয়ের কথা মতো চললে এই সমাজ তাঁকে বলে ‘বউপাগলা’; আবার সেই ছেলেই যদি মায়ের কথামতো চলেন তখন তাঁকে বলা হয় ‘মাম্মাস বয়’। একজন পুরুষের জন্য তাঁর জীবনে এই দুই নারীর প্রভাব অপরিসীম। অথচ কখনও কখনও পুরুষকে বেছে নিতে হয় যে কোনো একটি। এটি যে একজন পুরুষের জন্য কতটা কষ্টকর, কতটা যন্ত্রণার, সেটি যারা এই শাখের করাতের ভেতর দিয়ে গেছেন এবং এখনও যাচ্ছেন তারাই বুঝবেন।
আমরা সবসময়ই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার শিকার নারীকেই ভাবি অথচ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকার একজন পুরুষও। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একজন পুরুষকে ‘পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ’ বা ‘বেডা’ হিসেবেই দেখতে চায় এবং সেই ‘বেডাগিরি’ প্রমাণ করার জন্য একজন পুরুষকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হয়। তা ধরে রাখার যুদ্ধে কখনও কখনও সে পুরুষটিরও ক্লান্তিবোধ হয়, সেই পুরুষটিরও একটি ভরসার কাঁধ প্রয়োজন হয়, কখনও বা সেই পুরুষটিরও মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তিনি সেটি পারেন না। এ না পারাটাই জোর করে তাঁর আবেগ এবং মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে চেপে রাখতে রাখতে একটা সময় হয় সেই পুরুষটি মানসিক রোগী হয়ে যান অথবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাছের মানুষগুলো হয়তো তাঁকে ভালোবাসে; অথচ তাঁর হাসি মুখের আড়ালে কষ্টগুলোকে বুঝতেও পারেন না।
অনেক ভালোবেসে বিয়ে করে ঘরে এনেছিলেন রাহাত (ছদ্মনাম) কলিকে (ছদ্মনাম); অথচ বিয়ের এক বছরের মাথায় সামান্য এক পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির জেরে কলিকে ডিভোর্স দেন রাহাত। একসময় রাহাত বুঝতে পারেন ভুল তাঁরই। তারপর তিনি সারাজীবন এই অপরাধে ভুগতে থাকেন, তিনি একটি নিরপরাধ মেয়েকে শুধু সমাজ ও পরিবারের কথা ভেবে ভুল বুঝে জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। রাহাতের মুখের সেই উজ্জ্বল হাসি তাঁর পরিবার আর কখনও দেখেনি। তিনি সারাটি জীবন কলিকে ভুলতে পারেননি।
আসিফ (ছদ্মনাম) স্ত্রী ও মায়ের দ্বন্দ্ব মেনে নিতে না পেরে আত্মহননকেই বেছে নেন। কেননা, তারা দু’জনেই যে কোনো একজনকে বেছে নিতে বলেছিলেন। সেটি আসিফের পক্ষে ছিল অসম্ভব। কেননা, তিনি তো দু’জন নারীকেই ভালোবাসেন। অথচ অবাক ব্যাপার– এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একজন পুরুষকে ভাবতে বাধ্য করেন, তিনি শক্তিশালী এবং তাঁকে পরিবারের পক্ষেই দাঁড়াতে হবে, না হলে লোকে বলবে– দেখেছ, তিনি কেমন বউ পাগল। অথচ তিনি তখন ‘বেডাগিরি’ দেখানোর মোহে ভুলে যান, তাঁরও একটি হৃদয় আছে এবং সেই হৃদয়ের কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে, তাঁরও কষ্ট আছে, ভালো লাগা আছে, তাঁরও এক টুকরো বারান্দায় চাঁদ দেখতে দেখতে প্রিয়জনের সঙ্গে চা খাওয়ার অধিকার আছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফাঁদে পড়ে জীবনের অনেক বড় খুশি বিসর্জন দিতে হয় পুরুষকে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা শুধু নারীকেই ক্ষতবিক্ষত করে তা নয়; একজন
পুরুষের জীবনকেও ভেতর থেকে দুমড়েমুচড়ে দেয়। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন দ একজন প র ষ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
প্রখ্যাত ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর প্রকাশ করেছে।
মারিয়ানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার মুখপাত্র বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে ঘোষণা করছি, গায়িকা, গীতিকার ও অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল মারা গেছেন। আজ সকালে লন্ডনে মারা যান তিনি। কোম্পানি এবং পরিবার তার অভাব বোধ করবে।”
ষাটের দশকে মিক জ্যাগারের সঙ্গে মারিয়ান প্রেমের সম্পর্ক ছিলেন। শিল্পীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছেন জ্যাগার। তাতে তিনি বলেন, “মারিয়ান ফেইথফুলের মৃত্যুর খবর শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। এতদিন সে আমার জীবনের অংশ ছিল। সে আমার চমৎকার একজন বন্ধু ছিল। সে একাধারে একজন সুন্দরী গায়িকা, দুর্দান্ত অভিনেত্রী ছিলেন। সে সবসময়ই মনে থাকবে।”
আরো পড়ুন:
অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান: কাঁদলেন সেলেনা
জেনিফারের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, ওবামার সংসার ভাঙার খবর কতটা সত্য
বিবিসির তথ্য অনুসারে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনবার বিয়ে করেন এবং বিবাহবিচ্ছেদ হয় মারিয়ানার। ১৯৬৫ সালে জন ডানবারকে বিয়ে করেন। কিন্তু এক বছর পরই ভেঙে যায়। ১৯৭৯ সালে বেন ব্রিয়ারলির সঙ্গে ঘর বাঁধেন। সাত বছর পর এ সংসারও ভেঙে যায়। ১৯৮৮ সালে অভিনেতা জর্জিও ডেলা টেরজাকে বিয়ে করেন। ১৯৯১ সালে এ সংসারেরও ইতি টানেন এই গায়িকা। মৃত্যুকালে নিকোলাস ডানবার নামে একটি পুত্রসন্তান রেখে গেছেন মারিয়ান।
১৯৪৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেডে জন্মগ্রহণ করেন মারিয়ান। ১৯৬৪ সালে গানের ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রখ্যাত ব্যান্ড দ্য রোলিং স্টোনের ম্যানেজার অ্যান্ড্রু লুং ওল্ডহ্যাম তাকে আবিস্কার করেন।
মারিয়ানের তুমুল জনপ্রিয় ‘আ টিয়ার্স গো বাই’ গানটি ছিল রোলিং স্টোনের দুই সদস্য মিক জ্যাগার ও কেই থ রিচার্ডসেরই লেখা। আলোচিত এ গান ছাড়াও মারিয়ানের আরো দুটি আলোচিত গান রয়েছে। সেগুলো হলো— ‘কাম অ্যান্ড স্টে উইথম মি’ ও ‘দ্য লিটল বার্ড অ্যান্ড সামার নাইটস’। ‘দ্য গার্লস অব আ মোটরসাইকেল’ ছাড়াও ‘ঘোস্ট স্টোরি’, ‘হ্যামলেট’, ‘শপিং’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।
ঢাকা/শান্ত