চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় আছেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের জন্য। তাঁর সঙ্গে থাকা চারজনই নারী। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে তারা বসার জায়গা খুঁজছিলেন। না পেয়ে প্ল্যাটফর্মের মেঝেতেই বসে পড়লেন। 

রাজবাড়ী রেলস্টেশনে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে থাকায় যাত্রীকে ট্রেনে ওঠানামা করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। কারও ভারী কোনো লাগেজ থাকলে তাদের আরও সমস্যায় পড়তে হয়।

শনিবার রাজবাড়ী রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাজবাড়ী এক্সপ্রেস ট্রেন ভাটিয়াপাড়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ১০টা ১০ মিনিট। বেলা পৌনে ১১টায় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন এবং প্রায় একই সময়ে ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন রাজবাড়ী এসে পৌঁছানোর কথা। এ কারণে ট্রেনটি ক্রসিংয়ের অপেক্ষায়। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আন্তঃনগর মধুমতি এবং ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সুন্দরবন ট্রেনের যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। অনেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে নিচেই বসে পড়েছেন। কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে, কেউ ব্যাগপত্র কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সুন্দরবন ট্রেন রাজবাড়ী এসে থামার পর দেখা যায়, ট্রেনের তিনটি বগি প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে। এসব বগির যাত্রীদের উঠতে ও নামতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

রাজবাড়ী রেল সূত্র জানায়, সকাল ৬টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত রাজবাড়ী রেলস্টেশনে প্রতিদিন ছয়টি ট্রেন মোট ১৫ বার চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীর ভিড় থাকে। বিশেষ করে শাটল, আন্তঃনগর মধুমতি ও মেইল ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হয়ে থাকে। নানা কারণে মাঝে মধ্যে কোনো কোনো ট্রেন দেরি করে আসে। রেলস্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। একটি প্রথম শ্রেণির, অপরটি দ্বিতীয় শ্রেণির। দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার সবসময় খোলা থাকলেও প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। সাধারণ যাত্রীদের বসার জন্য ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রয়েছে মাত্র চারটি ছোট লোহার বেঞ্চ। যেখানে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ জন বসতে পারেন। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে যে পিলার রয়েছে, এর সঙ্গে কয়েকটি বসার জায়গা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ কিছু মানুষ সবসময়ই সেখানে থাকেন। এ ছাড়া আন্তঃনগর সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির বগির সংখ্যা ১৩টি করে। রাজবাড়ী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সীমা ছাড়িয়ে তিনটি বগি বাইরেই থেকে যায়। 
যাত্রী শহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী বেড়াতে এসেছিলেন। যাবেন চুয়াডাঙ্গা। শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে রাজবাড়ী স্টেশনে আসেন। তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মে বসার কোনো জায়গা নেই। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে তাঁর স্বজনরা নিচেই বসে পড়েছেন। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গার বাসিন্দা নিজামুল হক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায়। সঙ্গে রয়েছে ছোট দুই নাতি নাতনি। জানালেন, তাঁর মেয়ে চিকিৎসক নাহিদা ইসলাম ঢাকা থেকে আসছেন। এ কারণে তাঁকে নেওয়ার জন্য প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গা থাকলে বসতে পারতেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য তিনি বসার জায়গার দাবি জানান।

রাজবাড়ী শহরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন শেখ জানান, তাঁর স্বজনরা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে যাবেন যশোরে। ‘ঠ’ কোচের টিকিট পেয়েছিলেন। যেটা প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক দূরে। ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ওঠা খুবই দুষ্কর। একজনের সাহায্য ছাড়া ওঠা সম্ভব নয়। 
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারটি সবসময় খোলা থাকে। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার প্রথম শ্রেণির টিকিটের যাত্রীদের জন্য। ওটা সবসময় খোলা থাকলে লোকজন নোংরা করে ফেলে। তার পরও যাত্রীর চাপ বেশি হলে খুলে দেওয়া হয়। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চারটি বেঞ্চ আছে। আর ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পিলারের সঙ্গে চতুর্ভুজ আকৃতির বসার জায়গা করা হয়েছে। যদিও তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। কারণ রাজবাড়ী রেলস্টেশনে যাত্রীর চাপ খুব বেশি হয়। অপেক্ষমাণ যাত্রীর ভোগান্তির কথা এর আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে আগে যাত্রীর চাপ তেমন ছিল না। কিছুদিন ধরে যাত্রীর চাপ প্রচণ্ড বেড়েছে। তিনি জানান, যাত্রীদের বসার জন্য কিছু করা যায় কিনা, সেটা নিয়ে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রথম শ র ণ র র প ল য টফর ম স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘রেখাচিত্রকে অবহেলা করা উচিত নয়’

lশৈশবের প্রিয় মুহূর্ত? 
 তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। নিয়মিত স্কুলে যাই। তখনকার পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকমের। এখনকার শিক্ষা পদ্ধতি আবার অন্যরকমের। ড্রয়িং ক্লাসে আমাদের ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে গাছ, ফুল, পাখি, নদী-নালা, প্রাণীসহ বিভিন্ন ধরনের আঁকাআঁকি করে দিতেন শিক্ষক। আমরা সেসব দেখে দেখে নিজেরা আঁকতাম। স্কুলে একবার একটি তাজমহলের ছবি আঁকি। যেহেতু আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসতাম, তাই আগ্রহ থেকেই এটা আঁকি। তখন জাপানি গিটার কালার পাওয়া যেত, অন্য কোনো কালার পাওয়া যেত না। সেই তাজমহলের ছবি দেখে আমাকে পুরস্কৃত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমি যে কি আনন্দিত হই তা বলে বুঝাতে পারব না; 
lযখন আপনি নবীন চিত্রশিল্পী
নবীন চিত্রশিল্পী হিসেবে বেশ স্মৃতি আছে। তখন শিল্পকলা একাডেমিতে, ঢাকা আর্ট কাউন্সিলে একটা গোল বিল্ডিং ছিল। সেখানে সব প্রদর্শনী হতো। ওখানে নবীন শিল্পী, ঢাকা বা পাকিস্তান থেকে ছবি আসত। সেখানে আমরা যেতাম, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতাম। তারপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আগে ছিল পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলের উদ্যোগে নবীন শিল্পীর প্রদর্শনী পরবর্তী পর্যায়ে শুরু করা হয়। আমরা সেখানে নবীন চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগ দিতে শুরু করলাম। তারপরই জাতীয় আর্ট এক্সিবিশন হলো। যার পরিচালক ছিলেন সুবীর চৌধুরী।
স্মরণীয় স্মৃতি
আমাদের সময় ডিগ্রি ছিল, অনার্স ছিল না। তখন আমি তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করি। ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার, ফোর্থ ইয়ার হোল ক্লাসে আমি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাই। সেটা আমার জীবনের বড় স্মৃতি একটা। যে স্মৃতির ফলে সামনে এগোতে আরও বেশি সাহস পাই। 
আড্ডা-তর্কে সঙ্গী যারা
আর্ট কলেজের সহপাঠী বন্ধু ছিল শহীদ কবির, মঞ্জুরুল হাই, বিজয় সেন, খুশী কবির, সেতারা ইব্রাহীম, ফরিদা শওকত, শিরিন সুলতানা, সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদসহ আরও অনেকেই। আমরা বিভিন্ন আড্ডা দিতাম। নিজেদের চিন্তাধারার কথা, ভাববিনিময় নিজেদের ভেতর শেয়ার করতাম। ছবির দুটো ধারা আছে। একটি ক্রিয়েটিভ আর্ট, আরেকটি হলো ইলাস্ট্রেটিভ। আমরা সাধারণত ক্রিয়েটিভ আর্টের দিকে ঝুঁকতাম। 
ভাবনাদর্শকে প্রভাবিত করেছেন যিনি
আমিনুল ইসলাম মূলত ভাবনাদর্শকে প্রভাবিত করেছে। তারপর আমার নিজস্ব স্টাইল ডেভেলপ করে গেছি। জল রংয়ে প্রভাব ছিল আনোয়ারুল হক, রফিকুন নবী ও মোস্তফা মনোয়ারের।
আপনার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী
১৯৮৭ সালে চারুকলার ইনস্টিটিউটের দুটো গ্যালারিতে প্রথম প্রদর্শনী করি।
আপনার প্রিয় চিত্রশিল্পী
গুরু হিসেবে ফলো করতাম দেশের বাইরে পাবলো পিকাসো, সেজান, ভ্যান গগ, রোথকো, হুসাইন। দেশের ভেতর এসএম সুলতান, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম। তারা অসাধারণ কাজ করেছেন। তাদের পেইন্টিং অনন্য। জয়নুল আবেদিন তো মাস্টার ড্রয়িং কাজ করেছেন। এবস্ট্রাক্টে যখন প্রবেশ করি, তখন মোহাম্মদ কিবরিয়ার কথা বলতে হয়। তিনি আমার মেইনলি গুরু বলতে পারেন। তাঁর কাজ আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করত। তিনি জাপান থেকে ফিরে আসাতেই এ ধরনের কাজ করতেন। বাংলাদেশে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংয়ে সুপারমাস্টার তিনি ছিলেন।
lএখন যা আঁকছেন
একজন চিত্রশিল্পীর মূল ড্রয়িং। একজন চিত্রশিল্পী যত ড্রয়িং করতে পারবেন, তিনি তত ভালো ছবি আঁকতে পারবেন। ভাঙচুর করতে পারবেন। ড্রয়িং করি রেগুলার। সেটাকে বেজ করে অন্য কিছু এঁকে থাকি। আমি ফিগারের লাইন ড্রয়িং করছি। সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। প্রত্যেক শিল্পীর ড্রয়িংটাকে নিয়েই কাজ করতে হবে। একজন চিত্রশিল্পীর ড্রয়িংকে অবহেলা করে চলা উচিত না। আমি এখন ড্রয়িং নিয়ে কাজ করছি। ড্রয়িংকে বেজ করে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংসহ অন্যকিছু করছি।
lপ্রিয় উদ্ধৃতি
‘সবার উপরে মানুষ এবং প্রকৃতি’ 
গ্রন্থনা: ফরিদুল ইসলাম নির্জন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শুধু নারী নয়, পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়: প্রিয়াঙ্কা
  • বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু 
  • গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
  • অপূর্ব ভাইয়ার সঙ্গে অভিনয় আমার স্বপ্ন ছিল: নীহা
  • সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ
  • কামরুল হাসানের কাছে শিল্প ধরা দিয়েছিল
  • ‘আমার চিত্রকর সত্তার মৃত্যু ঘটিয়েছি’
  • ‘রেখাচিত্রকে অবহেলা করা উচিত নয়’
  • ‘আমি এখন প্রকৃত সৌদিকে চিনি’, নেইমারের হৃদয়স্পর্শী বার্তা  
  • দুই হরিণ উদ্ধার, বনরক্ষীদের ওপর হামলার চেষ্টা