চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় আছেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের জন্য। তাঁর সঙ্গে থাকা চারজনই নারী। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে তারা বসার জায়গা খুঁজছিলেন। না পেয়ে প্ল্যাটফর্মের মেঝেতেই বসে পড়লেন। 

রাজবাড়ী রেলস্টেশনে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে থাকায় যাত্রীকে ট্রেনে ওঠানামা করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। কারও ভারী কোনো লাগেজ থাকলে তাদের আরও সমস্যায় পড়তে হয়।

শনিবার রাজবাড়ী রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাজবাড়ী এক্সপ্রেস ট্রেন ভাটিয়াপাড়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ১০টা ১০ মিনিট। বেলা পৌনে ১১টায় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন এবং প্রায় একই সময়ে ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন রাজবাড়ী এসে পৌঁছানোর কথা। এ কারণে ট্রেনটি ক্রসিংয়ের অপেক্ষায়। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আন্তঃনগর মধুমতি এবং ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সুন্দরবন ট্রেনের যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। অনেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে নিচেই বসে পড়েছেন। কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে, কেউ ব্যাগপত্র কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সুন্দরবন ট্রেন রাজবাড়ী এসে থামার পর দেখা যায়, ট্রেনের তিনটি বগি প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে। এসব বগির যাত্রীদের উঠতে ও নামতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

রাজবাড়ী রেল সূত্র জানায়, সকাল ৬টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত রাজবাড়ী রেলস্টেশনে প্রতিদিন ছয়টি ট্রেন মোট ১৫ বার চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীর ভিড় থাকে। বিশেষ করে শাটল, আন্তঃনগর মধুমতি ও মেইল ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হয়ে থাকে। নানা কারণে মাঝে মধ্যে কোনো কোনো ট্রেন দেরি করে আসে। রেলস্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। একটি প্রথম শ্রেণির, অপরটি দ্বিতীয় শ্রেণির। দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার সবসময় খোলা থাকলেও প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। সাধারণ যাত্রীদের বসার জন্য ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রয়েছে মাত্র চারটি ছোট লোহার বেঞ্চ। যেখানে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ জন বসতে পারেন। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে যে পিলার রয়েছে, এর সঙ্গে কয়েকটি বসার জায়গা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ কিছু মানুষ সবসময়ই সেখানে থাকেন। এ ছাড়া আন্তঃনগর সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির বগির সংখ্যা ১৩টি করে। রাজবাড়ী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সীমা ছাড়িয়ে তিনটি বগি বাইরেই থেকে যায়। 
যাত্রী শহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী বেড়াতে এসেছিলেন। যাবেন চুয়াডাঙ্গা। শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে রাজবাড়ী স্টেশনে আসেন। তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মে বসার কোনো জায়গা নেই। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে তাঁর স্বজনরা নিচেই বসে পড়েছেন। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গার বাসিন্দা নিজামুল হক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায়। সঙ্গে রয়েছে ছোট দুই নাতি নাতনি। জানালেন, তাঁর মেয়ে চিকিৎসক নাহিদা ইসলাম ঢাকা থেকে আসছেন। এ কারণে তাঁকে নেওয়ার জন্য প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গা থাকলে বসতে পারতেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য তিনি বসার জায়গার দাবি জানান।

রাজবাড়ী শহরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন শেখ জানান, তাঁর স্বজনরা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে যাবেন যশোরে। ‘ঠ’ কোচের টিকিট পেয়েছিলেন। যেটা প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক দূরে। ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ওঠা খুবই দুষ্কর। একজনের সাহায্য ছাড়া ওঠা সম্ভব নয়। 
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারটি সবসময় খোলা থাকে। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার প্রথম শ্রেণির টিকিটের যাত্রীদের জন্য। ওটা সবসময় খোলা থাকলে লোকজন নোংরা করে ফেলে। তার পরও যাত্রীর চাপ বেশি হলে খুলে দেওয়া হয়। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চারটি বেঞ্চ আছে। আর ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পিলারের সঙ্গে চতুর্ভুজ আকৃতির বসার জায়গা করা হয়েছে। যদিও তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। কারণ রাজবাড়ী রেলস্টেশনে যাত্রীর চাপ খুব বেশি হয়। অপেক্ষমাণ যাত্রীর ভোগান্তির কথা এর আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে আগে যাত্রীর চাপ তেমন ছিল না। কিছুদিন ধরে যাত্রীর চাপ প্রচণ্ড বেড়েছে। তিনি জানান, যাত্রীদের বসার জন্য কিছু করা যায় কিনা, সেটা নিয়ে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রথম শ র ণ র র প ল য টফর ম স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সব কাজ সামলে নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য সময় বের করা কঠিন, মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেক নারী

প্রথম সন্তান জন্মের পর ওজন বেড়ে যায় ৩২ বছর বয়সী গৃহিণী শাহানার (ছদ্মনাম)। ভেবেছিলেন, বাড়তি ওজন আবার কমিয়ে ফেলবেন। চেষ্টাও করেছেন অনেক। নানাজনের পরামর্শে ডায়েটসহ নানা পদক্ষেপ নেন, কিন্তু ওজন কমেনি।

শেষে শাহানা একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হন। পুষ্টিবিদ বলেন, নারীদের মুটিয়ে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে কাজ করে। মূল কারণ কী খাচ্ছেন ও কতটুকু খাচ্ছেন, সেটার ভারসাম্য না থাকা। আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, যতটুকু খাওয়া হচ্ছে, তা বার্ন (কায়িকশ্রম বা শরীরচর্চার মাধ্যমে ঝরানো) না করা।

ওজন কমানোর জন্য শাহানাকে একটি সুষম খাদ্যতালিকা (ডায়েট চার্ট) মেনে চলার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম এবং দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ।

তবে কিছুদিন নিয়ম মেনে চলার পর হাল ছেড়ে দেন শাহানা। এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, পরিবারের সবার খাবারের ব্যবস্থা করাসহ অন্যান্য কাজ শেষে নিজের জন্য কিছু করার সময় তাঁর হয় না। তা ছাড়া খাদ্যতালিকা অনুযায়ী বেলায় বেলায় নানা রকম দামি বাদাম, ফলমূল কেনাও সব সময় সম্ভব হয় না।

ব্যায়াম ও হাঁটার কথা তুলতেই শাহানা বললেন, ‘সব সামলে সময় হয় না। আবার বাইরে একা যেতেও ভয় লাগে। জিম যে করব, তাতেও তো অনেক খরচ।’

নানা কারণে মুটিয়ে যাওয়ার পর শাহানার মতো ওজন কমাতে পারছেন না অনেক নারী। গৃহিণী থেকে কর্মজীবী—কোনো শ্রেণি–পেশার নারীই এই সমস্যার বাইরে নন। ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও তাঁরা নানা প্রতিবন্ধকতায় রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন। এর পেছনে মূলত তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যবস্থাপনা দায়ী। এর বাইরে আছে আরও কিছু কারণ।

রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন ফিরোজা। আগে তিনি দিনে দুটি বাসায় কাজ করতেন। মুটিয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করেন একটি বাসায়। ফিরোজার কাছে খাবার মানে অন্তত দুবেলা ভাত। তিন বেলা হলেও ক্ষতি নেই। তিনি বলেন, ‘ভাত ছাড়া আর কী দিয়া পেট ভরামু?’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ১ হাজার ১২৯ দশমিক ৮১ গ্রাম। ২০১৬ সালে তা ছিল দৈনিক ৯৭৫ দশমিক ৫ গ্রাম। খাদ্য গ্রহণের তালিকার ১০০ ভাগের ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশই ভাত।

বেলায় বেলায় মূলত নিম্নবিত্তের খিদে ভাতেই মেটে। তবে মধ্যবিত্তেরও ভাতের প্রতি টান কম নয়। রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকার একজন গৃহিণী জানান, স্থূলতা কমানোর জন্য তিনি পুষ্টিবিদের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁকে একটি ডায়েটচার্ট দেওয়া হয়। কয়েক দিন কষ্ট করে সেটা মেনেও চলেন। কিন্তু পরিবারের সবার প্রতিদিনের খাবার নিশ্চিত করে নিজের জন্য আলাদাভাবে সালাদ বা ডায়েট ফুড তৈরি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন আবার আগের মতোই ভাত খাচ্ছেন।

দেশের মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় শর্করারন বেশির ভাগ মেলে ভাত থেকে। তাই ওজন বেড়ে গেলেও ভাত খাওয়া বন্ধ করতে বারণ করেন পুষ্টিবিদেরা। তবে পরিমাণ কমিয়ে আনার পরামর্ম দেন তাঁরা।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে দেশের মানুষের ভাত খাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমলেও চিনি আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি খাচ্ছেন। চিনি বা চিনিযুক্ত যেকোনো খাবারকে স্থূলতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ভাষ্য, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি খেলে যেকোনো বয়সেই স্থূলতা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ডায়বেটিস, কিনডিতে পাথর, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই চিনি একেবারে বাদ দিতে পারলে ভালো। না হলে নারীদের দৈনিক ৬ চা–চামচের (২৫ গ্রাম বা ১০০ ক্যালোরি) বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়।

বাইরের খাবারে ঝোঁক

রেস্তোরাঁর খাবারের প্রতি আসক্তির কথা জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী। তিনি কাজ করেন গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর কর্মস্থলে খাবারের ব্যবস্থা নেই। তাই দুপুরের খাবার প্রায় প্রতিদিনই একটি অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে বাইরে থেকে আনিয়ে খান তিনি। প্রথম দিকে একটি ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে ভাত–তরকারি খেলেও ধীরে ধীরে ফাস্টফুডের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন তিনি। এতে তিনি দ্রুতই মুটিয়ে যান। ওই নারী বললেন, আয়ের একটা বড় অংশই বাইরের খাবারের পেছনে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এমন অভ্যাস হয়েছে যে ছাড়তেও পারছি না।

বিবিএসের ২০২২ সালের জরিপে দেখা যায়, গত এক দশকে মানুষের সামগ্রিকভাবে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা। সঙ্গে বেড়েছে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণও। যেখানে ২৬ থেকে ৫০ বছর বয়সী মাঝারিভাবে সক্রিয় নারীদের দৈনিক ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ক্যালোরি প্রয়োজন, সেখানে বর্তমানে দৈনিক মাথাপিছু (নারী–পুরুষ) ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯৩, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি।

ব্যায়ামের উপকরণ ও ব্যায়ামাগার ব্যয়বহুল

বেসরকারি চাকরিজীবী সুমাইয়া বিনতের (৩৬) ছোট সন্তানের জন্ম হয় ২০২২ সালের প্রথম দিকে। সে সময় তিনি অনেকটাই মুটিয়ে গিয়েছিলেন। অতিরিক্ত ওজন ছিল ১৮ থেকে ২০ কেজির মতো। ওজন কমাতে প্রসবের ৮ মাস পর তিনি ভর্তি হন ধানমন্ডি এলাকার নারীদের একটি জিমে।

ছয় মাসের প্যাকেজে সপ্তাহে চার দিন দেড় ঘণ্টা নিয়মমাফিক ব্যায়াম ছাড়াও জুম্বা নাচ, ইয়োগা করতে শুরু করেন সুমাইয়া। জিমের পুষ্টিবিদের কাছ থেকে একটি খাদ্যতালিকাও সংগ্রহ করেন তিনি। ছয় মাসেই লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে পান সুমাইয়া। এখনো জিমের নিয়মিত সদস্য তিনি।

সুমাইয়া বলেন, শুরুতে ওজন কমানো উদ্দেশ্য হলেও এখন এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শরীর–স্বাস্থ্যও ভালো থাকছে। কিন্তু ছয় মাস পরপর খরচের একটা বড় ধাক্কা থাকছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সুমাইয়ার মতো অনেক নারী নিয়মিত জিম করছেন, অথবা করার কথা ভাবছেন। অনেকে কিছুদিন জিম করে মাঝপথে ছেড়েও দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি জিমের একজন কর্মী জানান, একটু ভালো মানের জিমগুলোয় খরচ তুলনামূলক বেশি। সে জন্য অনেকে জিমে এসেও কিছুদিন পর ছেড়ে দেন। এ ছাড়া যেগুলোয় খরচ কম, সেগুলো নারীদের জন্য ততটা সাচ্ছন্দদায়ক হয় না। সাধারণত ছেলে–মেয়ের একসঙ্গে জিমের ব্যবস্থা থাকে। নিরাপত্তার প্রশ্নও থেকে যায়।

রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, উত্তরা, বনশ্রী এলাকার কয়েকটি জিমে খোঁজ নিয়ে নানা রকম প্যাকেজের কথা জানা যায়। এক মাস থেকে শুরু করে তিন মাস, ছয় মাস, এমনকি পুরো বছরের জন্য জিমের সদস্যপদ নেওয়া যায়। জিমভেদে ন্যূনতম মাসিক ব্যয় ২ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

নাখালপাড়ার একজন নারী জানান, তাঁকে চিকিৎসক দৈনিক ৫ কিলোমিটার দৌড়াতে বলেছেন। তাই মাস তিনেক আগে একটি জিমে তিন মাসের প্যাকেজে সদস্য হন তিনি। সেখানকার ট্রেডমিলে দৌড়াতেন। প্যাকেজ শেষ হওয়ার পর জিমে যাওয়া বন্ধ করেছেন। এখন সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন রাতে স্বামীর সঙ্গে বিজয় সরণির রাস্তায় এক ঘণ্টা দৌড়ান তিনি।

ওই নারী বলেন, মেয়েরা ব্যায়াম করতে বা হাঁটতে বের হলে কিছু মানুষ অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকায়। তা ছাড়া দৌড়ানোর উপযোগী পোশাক পরে বের হওয়া যায় না। তাই ট্রেডমিল কেনার কথা ভাবছেন তিনি।

ঘরে রেখে নিজে নিজে ব্যবহার করা যায়—এমন কয়েক ধরনের ব্যায়ামের যন্ত্র রয়েছে। হালকা গড়নের একটি ম্যানুয়াল ট্রেডমিলের দাম ১৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। ভালো মানের একটির দাম পড়ে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে একটি সাইকেলিং যন্ত্র চাইলে গুনতে হবে আরও ১০ হাজার টাকা। মান অনুযায়ী দাম বাড়বে। হাতের ব্যায়ামের জন্য ছোট ডামবেলগুলোর দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।

নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে স্বাভাবিকভাবেই মুটিয়ে যায়। সেটা নারী হোক কিংবা পুরুষ। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, তেল–মসলা বেশি দিয়ে পরিবারের সবার জন্য অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত যে খাদ্য নারীরা প্রস্তুত করেন, সেগুলো খেয়ে পরিবারের অন্যদের ওজন না বাড়লেও নারীদের ওজন বেড়ে যায়। কেননা, অন্যরা যা খাচ্ছে, তা বাইরে যাওয়া ও হাঁটাচলার কারণে চর্বিতে রূপ নেয় না। কিন্তু কর্মজীবী নারীরা দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে কাজ করার কারণে মুটিয়ে যান।

শামসুন্নাহার নাহিদ আরও বলেন, খাওয়ার পরিমাণ শুধু কমালেই হবে না, কী খাচ্ছেন তা বুঝে খেতে হবে। ভাত ও চিনি খেতে হবে পরিমাণমতো। বাইরের খাবার যত এড়িয়ে চলা যায়, ততই মঙ্গল। আর নিয়মিত খুব সামান্য হলেও শরীরচর্চা করতেই হবে।

বাড়ির বাইরে গিয়ে হাঁটার সুযোগ না থাকলে ছাদে বা ঘরের ভেতর হাঁটাহাটি করার পরামর্শ দিয়ে এই পুষ্টিবিদ বলেন, নিয়ম করে জিমে গেলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনে। সেটি সম্ভব না হলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত–পা ছুড়ে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করে নিলেও তা মেদ জমতে বাধা দেয়। মোট কথা, মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নিজেকেই উদ্যোগী হয়ে নিজেকে সাহায্য করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরার চরম বেকারত্ব ঘুচবে কীভাবে
  • চলন্ত ট্রেনের ছাদে ‘টিকটক ভিডিও’ করছিলেন ৪ তরুণ, পড়ে দুজনের মৃত্যু
  • আমার অ্যালার্জির সমস্যা আছে, কী করি?
  • শাকিবের ‘বরবাদ’ দেখে কী বলছেন দর্শকরা?
  • গাজা পরিস্থিতিতে জড়িত ‘সব পক্ষ’কে যুদ্ধবিষয়ক আইন মানতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
  • কটিয়াদীতে ডাকাতি শেষে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ
  • বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ত্রিপুরার মহারাজার
  • সব কাজ সামলে নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য সময় বের করা কঠিন, মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেক নারী
  • পিটিয়ে কুমির হত্যা বন্য প্রাণীর প্রতিও সহানুভূতি দরকার
  • মনটা বাড়িতে পড়ে থাকলেও তাঁদের ঈদ কাটে বনে-বাদাড়ে