ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবও পেশ করেছে। বিশেষত সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব থাকার আভাস মিলছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দুইবারে সীমিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী ববস্থার ভিত্তি হিসেবে বাহাত্তরের সংবিধানকে চিহ্নিত করাও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এখন সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ছাত্রসমাজসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারকে সংলাপ শুরু করতে হবে। কোন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় সংস্কারগুলো সম্পন্ন হবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। 

দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলই সংস্কার প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। সংস্কারের প্রয়োজন নেই, দ্রুত নির্বাচন দিন; নির্বাচিত সরকার এসে সংস্কার করবে; নির্বাচনই একমাত্র সংস্কার; সংস্কারের ম্যান্ডেট নেই– বিএনপির তরফে এ ধরনের বক্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

‘সংস্কারের ম্যান্ডেট’ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে লিখেছিলাম (সংস্কার না হলে অভ্যুত্থান বেহাত হবে, ১ জানুয়ারি, ২০২৫, প্রথম আলো)। সেখানে উল্লেখ করেছিলাম, নির্বাচিত সংসদের কাছে সংবিধান পরিবর্তন বা সংস্কারের ম্যান্ডেট থাকে না। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান– যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার সংস্কারের
ম্যান্ডেট বর্তমান সরকারের রয়েছে। তারও আগে লিখেছিলাম, কেন অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে স্রেফ রেজিম পরিবর্তন হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না (সমকাল ৫ নভেম্বর, ২০২৪)। 
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কারের বৈধতা দেওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী সরকারই কেবল সংস্কার করার এখতিয়ারপ্রাপ্ত। বলা বাহুল্য, তাঁর এমন বক্তব্য আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসম্মত নয়। গণঅভ্যুত্থানের দরুন বিদ্যমান সংবিধান বাতিল অবস্থায় টিকে আছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, এটিকে জোরপূর্বক টিকিয়ে রাখা হয়েছে। যদি কোনো সংবিধান গণঅভিপ্রায়ের বিপরীতে দাঁড়ায়, তখন সেই সংবিধান নিজেই নিজের অবৈধতা প্রতিপন্ন করে। কাজেই জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদ্যমান সংবিধানের বিরুদ্ধেও গণরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের একচেটিয়া ও স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন করতে হলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সংসদ নির্বাচন হলে তা হবে নির্বাচনী প্রতিবিপ্লব। তেমন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্ভব হবে।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর স্রেফ নির্বাচন আয়োজন করার দাবি থেকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চব্বিশের জানুয়ারির আগে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের জমানায় নির্বাচন আদায় করতে পারাটাই ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে স্রেফ নির্বাচন আদায় করাকে কোনোভাবেই আর গণতন্ত্র বলার সুযোগ নেই। প্রশ্নটা এখন আর কেবল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের নয়; ওই সংসদ নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। সংস্কার ছাড়া আগামী নির্বাচন ও সংসদের কোনো বৈধতা নেই। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, নির্বাচিত সরকারই সংস্কার করবে এবং সংস্কারের বৈধতা দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচিত সরকারকেই সংস্কার থেকে বৈধতা অর্জন করতে হবে।
সংসদের কাছে সংবিধান প্রণয়নের ম্যান্ডেট থাকে না। কারণ বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে গঠিত সংসদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার এখতিয়ারপ্রাপ্ত নয়। সংবিধান প্রণয়ন করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ওই গণপরিষদ তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দেশকে সংবিধান উপহার দেবে এবং গণভোটের মাধ্যমে জনগণ প্রস্তাবিত সংবিধানকে গ্রহণ করবে। গৃহীত সংবিধানই হবে পরবর্তী সংসদের বৈধতার ভিত্তি। এর উল্টোটা নয়। অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের হাত ধরে সংস্কার হবে– তা নয়। বরং সংস্কারের হাত ধরে নির্বাচিত সরকার আসবে। সংস্কার ছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সংসদ নির্বাচনের নৈতিক-রাজনৈতিক ও আইনি ভিত্তি নেই। 

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা সম্পন্ন করে নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। এর ফলে মনে হয়, যেনবা নির্বাচনই সংস্কারের কারণ ও উদ্দেশ্য। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন সংস্কারের কারণ নয়; ফলাফল। অর্থাৎ সংস্কারের ধারাবাহিকতায় নির্বাচন আসবে। এ বিবেচনায় নির্বাচনকে সংস্কারের প্রথম ধাপ নয়, শেষ ধাপ বলা যায়। 
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রশক্তি জুলাই প্রোক্লেমেশন জারির দাবি জানিয়েছে। অনাগত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য এ দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের নিরাপত্তাও নির্ভর করছে। 

সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে বিদ্যমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলা ছিল মস্ত বড় ভুল। এ ভুলের মাশুল পাঁচ মাস ধরে দেশের জনগণ দিয়ে এসেছে। পুরো পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম এবং শক্ত হাতে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রোক্লেমেশন জারির কোনো বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে একদিকে সরকার যেমন তার আইনি বৈধতা আদায় করে নিতে পারে; অন্যদিকে বিপুল আত্মদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়াও সম্ভব হয়।

মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকারের আইনি ভিত্তি নাজুক। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের তেমন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এটি আপিল বিভাগের মতামত মাত্র। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, এমন কোনো আইনি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, যা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনা জানতে চাইতে পারেন। নিঃসন্দেহে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান স্রেফ আইনি প্রশ্ন ছিল না; মূলত ছিল রাজনৈতিক প্রশ্ন। এর রাজনৈতিকতার তাৎপর্য এত বিপুল যে, তা সুপ্রিম কোর্টের মতামত সাপেক্ষ নয়; বরং এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রণীত নতুন সংবিধানই হবে সুপ্রিম কোর্টের বিচার, রায় ও মতামতের ভিত্তি। 

আইনি বাধ্যবাধকতাহীন মতামত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব। এ কারণে জুলাই প্রোক্লেমেশন জারির মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। প্রোক্লেমেশনই হবে আসন্ন গণপরিষদ ও সংবিধানের বৈধতার ভিত্তিমূল। কী কারণে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান করতে‍ হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনার পাশাপাশি অনাগত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রোডম্যাপও এতে স্পষ্ট করা প্রয়োজন। নতুন সংবিধান প্রণয়নের আগ পর্যন্ত এই প্রোক্লেমেশনই অন্তর্বর্তী সংবিধানের ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে আইনের ধারাবাহিকতায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। নতুন সংবিধান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত পূর্বতন সংবিধানের আইন দ্বারাই রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে। বিদ্যমান আইন ও প্রোক্লেমেশনে বর্ণিত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে প্রোক্লেমেশন প্রাধান্য পাবে। এ ক্ষেত্রে আদালতের ব্যাখ্যা ও রায়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। 
প্রোক্লেমেশনে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। নির্বাচিত গণপরিষদকে কী ধরনের সংবিধান উপহার দিতে হবে, তার নির্দেশনা প্রোক্লেমেশনেই থাকতে পারে, যা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে। 

সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচনকে মুখ্য দাবিতে পরিণত করার সমূহ বিপদ রয়েছে। ম্যান্ডেট ও বৈধতার প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিও কাম্য নয়। নির্বাচন ম্যান্ডেট যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি মাত্র, একমাত্র পদ্ধতি নয়। গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত গণসার্বভৌমত্বের মধ্য দিয়ে অর্জিত ম্যান্ডেট অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। নির্বাচিত সরকার সংবিধান সংস্কারের বৈধতা দিতে সক্ষম নয়; বরং নির্বাচিত সরকারকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অংশ যেন না হতে হয়, সে জন্য সংস্কার অনিবার্য। নির্বাচিত সরকার মাত্রই গণতান্ত্রিক নয়। বাংলাদেশসহ নানা দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েমের নজির রয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনই কেবল অর্থবহ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে। ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের তাৎপর্য অপরিসীম। নির্বাচিত সরকারকে গণতন্ত্রের স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হলে সংস্কারের বৈধতার টিকিট অর্জন করতে হবে। নির্বাচিত সরকারকে বৈধতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করার ভুল রাজনীতি পরিহার করা জরুরি। 

সারোয়ার তুষার: লেখক ও চিন্তক; যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক কমিটি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত সরক র গণত ন ত র ক ছ ত র জনত র গণতন ত র র জন ত ক সরক র র ন করত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ৩১ দফা জনগণের জন্য তৈরি। জনগণের পক্ষ থেকে আসা প্রশ্ন নিয়েই ৩১ দফা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু জনগণের বাকস্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করেছি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। সেই জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। দেশের সকল সংকটকালে বিএনপি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষও বিএনপির প্রতি আস্থা রেখেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

বুধবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের একটি অভিজাত হোটেলে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

তারেক রহমান বলেন, জনগণ যদি আপনার পিছনে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা? মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে তো আমি টানবো না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি, কর্মী, নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা ওন (নিজের) করতে পারবো না। আমরা বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যদিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। বহু অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়।

তারেক রহমান আরও বলেন, কেউ কেউ বলে যারা অপরাধ করেছে, ভুল করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এতে কী হবে। কী হবে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা যতটুকু জানছি, সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যখন যেটা জানবো ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি বলে, আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। অন্তত এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার থাকবো। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা নয়। আমরা যা মুখে বলছি, তা আমরা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করবো। তার প্রতিফলন থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটিই করছি। আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে আমরা যেটা করতে পারতাম, দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজেই সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়, আজকে যেমন শুধু দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি। তেমন সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি, কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিয়ে জনগণের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক কর্মী, নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে কী পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩১ দফার প্রশিক্ষণ আমরা করছি। ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাবো। ৩১ দফা আমাদের অনুধাবন করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যায় আমরা। তাহলে ওই ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে দূরে থাকতে হলে, জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আমরা সবাই কষ্ট করছি। আগামী দিনে যাতে দল সুফল পায়, আপনি আমি সুফল পায়, সেইজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। 

এ কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কর্মশালায় যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানুষের মতো আইনগত অধিকার পেল নিউজিল্যান্ডের পাহাড়
  • বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদের ঝগড়া ও দরকষাকষি হচ্ছে: মান্না
  • বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদের ‘ঝগড়া’ হচ্ছে, ‘দরকষাকষি’ হচ্ছে: মান্না
  • গণপরিষদ নির্বাচনসহ ১১ দফা বিপ্লবী পরিষদের
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান