ধ্বংসস্তূপে কীভাবে ফিরবে গাজাবাসী
Published: 18th, January 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। গাজাবাসী নির্দয় ও ভয়ানক গণহত্যার শিকার। গত ১৫ মাস ধরে তারা প্রতিদিন বোমা, হত্যা, হুমকি, জেল, ক্ষুধা, রোগ ও অন্যান্য যে কষ্টের সম্মুখীন, তা বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। এর মধ্যেই তারা বেঁচে ছিল; নিজেরা একা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর এক দিন আগে ১৯ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত এই চুক্তি কার্যকর হবে না। এটা কাকতালীয় কিনা, জানি না। তবে কেউ কেউ এই সাফল্যের পেছনে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অবদান উল্লেখ করছেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক মঞ্চের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয় তিনি চেয়েছিলেন, ইসরায়েল যাতে তার ক্ষমতা গ্রহণের আগেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যাতে তিনি তা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। অন্যভাবে বললে, ট্রাম্প সত্যিকার অর্থে শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য নেতানিয়াহুকে চুক্তিটি মেনে নিতে চাপ দেননি। বরং সম্ভবত তিনি তাঁর খ্যাতি বাড়াতে এবং তাঁর প্রশাসনের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক হিসাব থেকে এ কাজ করেছেন।
আমরা জানি না, যুদ্ধিবরতি চুক্তি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যকার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী হয়েছিল এবং কোন কোন বিষয়ে তারা সম্মত। তবে আমরা এটা নিশ্চিত করতে পারি যে, ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসারে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নয়। এমনকি তারা পশ্চিম তীরের বিশাল অংশ যুক্ত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনারও বিরুদ্ধে নয়। এমনকি কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হওয়ার বিনিময়ে পশ্চিম তীরের কিছু এলাকা যুক্ত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকতে পারে, যা ইসরায়েল বিগত প্রথম পর্বে যুক্ত করতে পারেনি। বাস্তবতা যদি এমনই হয় তবে এটা দুইজনের বিজয়। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প যা চান তা করতে পারেন, সে জন্য যুদ্ধবিরতি তাঁর রাজনৈতিক বিজয়। নেতানিয়াহুও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সুযোগ পেয়ে গেলেন। এই চুক্তি নিয়ে হতাশার প্রধান কারণ হলো, এই চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ অর্জনের নিশ্চয়তা নেই। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা উপত্যকা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজায় তাদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে এবং গাজা পুনর্গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, গত ১৫ মাসের অধিক সময় ধরে যেভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তাতে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার বড় অংশই এখন বসবাসের অযোগ্য। ফিলিস্তিনিরা তো কেবল ধ্বংসাবশেষে ফিরে যেতে পারে না, যেখান পানি নেই, কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থা নেই; ব্যবহার করার মতো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই দাঁড়িয়ে নেই; বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক বা হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই; ব্যবসা চালানোর মতো পরিস্থিতিও অনুপস্থিত। গাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা পূরণে মানুষ এখন পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। গাজায় রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে এবং ইসরায়েলের বোমার বিষাক্ত পদার্থ নীরব ঘাতক হয়ে গাজার বাতাস, মাটি ও পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক পরিবারের সবাই শহীদ হয়েছে; অন্যরা ইসরায়েলের নির্দয় আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত, অনেক শিশু এতিম হয়েছে। গাজার অধিবাসীর বড় অংশ নিঃস্ব এবং পরিবারের ভরণপোষণ দিতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের পর কীভাবে ‘স্বাভাবিক’ জীবন সম্ভব হতে পারে?
গাজার শাসন ব্যবস্থার কী হবে, তা এখনও অস্পষ্ট। বস্তুত এই চুক্তিতে এমন কিছু নেই যাতে মূল সমস্যার সমাধান সম্ভব কিংবা এর সমাধান দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব। বাস্তবতা হলো, দীর্ঘ মেয়াদে গাজা সমস্যা সমাধানের প্রশ্নটি খুব জটিল। চুক্তির সবচেয়ে ভালো দিক এই যে, এর মাধ্যমে চলমান গণহত্যামূলক অভিযানের সমাপ্তি ঘটতে পারে। যতক্ষণ ইসরায়েলে সেটলার ঔপনিবেশিক প্রকল্পের কবর না হবে কিংবা কূটনৈতিক ও জনপরিসরে এর বিরোধিতা করা না হবে, ততদিন সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য ইসরায়েলি রাষ্ট্রের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন উদযাপন বা অভিনন্দন জানানোর সময় নয়। বরং এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, যাতে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যা বন্ধ করা যায়।
মুহান্নাদ আয়াশ: অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, মাউন্ট রয়েল ইউনিভার্সিটি, ক্যালগরি, কানাডা; আল জাজিরা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত
ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এই চ ক ত র জন ত ক ব যবস থ গণহত য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ প্রণয়নের পর দ্রুতসময়ে নির্বাচনে একমত খেলাফত মজলিস-এনসিপি
মৌলিক সংস্কারের সম্পন্ন করে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে দ্রুতসময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস।
আজ রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের নেতাদের বৈঠকে আটটি বিষয়ে একমত হন তারা। সংলাপ শেষে দুই দলের পক্ষ থেকে এ সব বিষয় জানানো হয়েছে। বৈঠকে এনসিপির পক্ষে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহদি উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা মৌলিক সংস্কারে একমত হয়েছি। সবাই মিলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে এবং এর পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেন বোঝাপড়া থাকে, এ সব বিষয়ে কথা হয়েছে।’
খেলাফত মজলিসের প্রচার ও তথ্য সম্পাদক আবদুল হাফিজ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঐক্যমত্যে পৌঁছানো দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এবং পারিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে। গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে ও তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। এ লক্ষ্যে জুলাই অভ্যুত্থানকালীন সময়ের মত জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালীন গণহত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, পিলখানায় বিডিআর হত্যাসহ বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে এবং আলেম-উলামাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বৃদ্ধি ও শিল্পখাতে নতুন গ্যাস সংযোগে অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ভারতীয় মুসলমানদের সম্পদ লুট ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের জন্য ভারতের মুসলিম ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিল করতে হবে। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।