কুমিল্লায় নগরীতে পানি না দিয়ে বিল আদায়
Published: 18th, January 2025 GMT
পাম্প স্টেশন আছে, অথচ বিকল মোটর। আবার কোথাও মোটর আছে, কিন্তু পাইপ ও ফিল্টার নষ্ট। এমন চিত্র কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) এলাকার ১২টি পাম্প স্টেশনের। দীর্ঘদিন ধরে
এসব গভীর নলকূপ বিকল হয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। পানি না পেয়ে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাদের অভিযোগ, পানি না মিললেও নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানির সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও প্রতিকার মিলছে না। তবে এ সংকটের জন্য কুসিক কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ওপর। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর মেরামত ও দেখভালের দায়িত্ব কুসিকের।
নগরীতে জনসংখ্যা ৮ লক্ষাধিক। এখানে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের অনেকেরই ভরসা কুসিকের সরবরাহকৃত পানি। ২৬০ কিলোমিটার পাইপলাইনে আবাসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে পানির সংযোগের সংখ্যা আছে ৩ হাজার ২৯৯টি। কিন্তু পানি সরবরাহের ১২টি পাম্প স্টেশন দীর্ঘদিন বিকল থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ২ কোটি লিটার থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। বন্ধ পাম্প স্টেশনগুলো হচ্ছে– নগরীর চকবাজার শাপলা মার্কেট, ঠাকুরপাড়া, কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীর দিঘিরপাড়, মুরাদপুর ভূঁইয়া পুকুরপাড়, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর।
কুসিকের পানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানি সরবরাহে আয় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং ব্যয় ২ কেটি ৩৩ লাখ। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর এলাকার পাম্প স্টেশন এলাকায় গ্রাহক সংকট রয়েছে। এতে বন্ধ পাম্প মেরামত ও বিদ্যুৎ বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পাম্প স্টেশন বন্ধ আছে নগরীর এমন একটি এলাকা পুরাতন চৌধুরীপাড়া। এখানে ছয় মাস ধরে বিকল হয়ে আছে পানি উত্তোলনের গভীর নলকূপ। ফলে পানি সরবরাহ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আয়েশা বেগম নামে এক নারী বলেন, মাসিক ২০০ টাকা বিল পরিশোধ করেও আমরা পানি পাচ্ছি না। অন্যের বাসা থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। গোসলেও সমস্যা।
অভিন্ন চিত্র কাপ্তানবাজার এলাকায়ও।
শনিবার ওই পাম্প স্টেশনের পাশের বাড়ি
বাসিন্দা মো.
এ পাম্পের অপারেটর আবু তাহের বলেন, এ পাম্প দিনে ২ ঘণ্টা করে ৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। মাসখানেক আগে হঠাৎ বালু উঠতে শুরু করে। নিচের ফিল্টার ও পাইপ ফেটে গেছে। আবার নতুন লাইন বসানো হবে।
কুসিকের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. ইউসুফ সমকালকে বলেন, সময়মতো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাড়া না পাওয়া এবং কম সময়ে একাধিকবার মেয়র পরিবর্তন হওয়ায় পাম্প স্টেশনগুলো মেরামতে বিলম্ব হয়েছে।
পানি সংকটে অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাগরিকের জীবন বিপন্নের শঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু। তিনি বলেন, পানি না দিয়ে বিল আদায় করা অবিবেচক কাজ। এখনই জনস্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় নগরীতে পানির চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। মেশিন ও মাটির নিচের ফিল্টারের সক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে এসেছে। এগুলো সময়মতো মেরামত না করায় পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়েছে। পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর আর আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে কুসিক চাইলে আমরা শুধু কারিগরি সহায়তা দিতে পারি। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে তা শোধন করে নগরীতে সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি এখনও অনিশ্চিত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য সরবর হ নগর ত
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের কৃষিখাতে ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব ফেলে এমন উদ্যোগে অর্থায়নকারী আন্তর্জাতিক তহবিল ‘পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি’। কৃষকদের সহায়তা করতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আই-ফার্মারকে পাঁচ লাখ ডলারের এই সহায়তা দিচ্ছে তহবিলটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই তহবিলের অর্থায়ন আই-ফার্মারের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি উপকৃত করবে। এই তহবিল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এই বিনিয়োগের মাধ্যমে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি ২০২৪ সালে তাদের আঞ্চলিক কার্যক্রমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পর প্রথমবারের মতো এই খাতে প্রবেশ করল। ক্ষুদ্র কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলছে আই-ফার্মার। প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের উচ্চমানের কৃষি উপকরণ, আর্থিক সহায়তা, কৃষি পরামর্শ, বিমা সুবিধা ও ন্যায্য বাজার সংযোগ নিশ্চিত করছে। কৃষক, সরবরাহকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে আই-ফার্মার উৎপাদন বাড়াতে, আয় বাড়াতে ও টেকসই কৃষি চর্চা প্রসারে ভূমিকা রাখছে।
নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক লরা আলসেনাস বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখনও সহজ শর্তে অর্থ ও মানসম্মত কৃষি উপকরণ পাওয়ার জন্য নানারকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আইফার্মারের উদ্ভাবনী মডেল কৃষি সরবরাহ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে এবং কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই বিনিয়োগের ঘোষণা তাদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে এবং বাংলাদেশে আরও টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
আইফার্মারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ বলেন, পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই অর্থায়নের ঘোষণা আমাদের আরও বেশি কৃষককে সহায়তা দিতে সক্ষম করবে। এর মাধ্যমে আমরা আরও ভালো মানের কৃষি উপকরণ, সহজতর আর্থিক সহায়তা ও শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পারবো, যা সরাসরি কৃষকের আয় ও জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ সমতা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করা প্রভাবশালী উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করে আসছে। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত এই তহবিলটি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বাংলাদেশে জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগগুলোর জন্য এই তহবিল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। এখন পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।