পাম্প স্টেশন আছে, অথচ বিকল মোটর। আবার কোথাও মোটর আছে, কিন্তু পাইপ ও ফিল্টার নষ্ট। এমন চিত্র কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) এলাকার ১২টি পাম্প স্টেশনের। দীর্ঘদিন ধরে 
এসব গভীর নলকূপ বিকল হয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। পানি না পেয়ে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাদের অভিযোগ, পানি না মিললেও নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানির সংকট  নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও প্রতিকার মিলছে না। তবে এ সংকটের জন্য কুসিক কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ওপর। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর মেরামত ও দেখভালের দায়িত্ব কুসিকের। 
নগরীতে জনসংখ্যা ৮ লক্ষাধিক। এখানে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের অনেকেরই ভরসা কুসিকের সরবরাহকৃত পানি। ২৬০ কিলোমিটার পাইপলাইনে আবাসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে পানির সংযোগের সংখ্যা আছে ৩ হাজার ২৯৯টি। কিন্তু পানি সরবরাহের ১২টি পাম্প স্টেশন দীর্ঘদিন বিকল থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ২ কোটি লিটার থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। বন্ধ পাম্প স্টেশনগুলো হচ্ছে– নগরীর চকবাজার শাপলা মার্কেট, ঠাকুরপাড়া, কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীর দিঘিরপাড়, মুরাদপুর ভূঁইয়া পুকুরপাড়, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর। 
কুসিকের পানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানি সরবরাহে আয় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং ব্যয় ২ কেটি ৩৩ লাখ। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর এলাকার পাম্প স্টেশন এলাকায় গ্রাহক সংকট রয়েছে। এতে বন্ধ পাম্প মেরামত ও বিদ্যুৎ বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।   
পাম্প স্টেশন বন্ধ আছে নগরীর এমন একটি এলাকা পুরাতন চৌধুরীপাড়া। এখানে ছয় মাস ধরে বিকল হয়ে আছে পানি উত্তোলনের গভীর নলকূপ। ফলে পানি সরবরাহ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আয়েশা বেগম নামে এক নারী বলেন, মাসিক ২০০ টাকা বিল পরিশোধ করেও আমরা পানি পাচ্ছি না। অন্যের বাসা থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। গোসলেও সমস্যা। 
অভিন্ন চিত্র কাপ্তানবাজার এলাকায়ও। 
শনিবার ওই পাম্প স্টেশনের পাশের বাড়ি 
বাসিন্দা মো.

আলম বলেন, আমরা পুরুষরা পাশের গোমতী নদীতে গিয়ে গোসল করি, নারীরা পড়েছেন বিপাকে। রান্নাবান্না করতেও অসুবিধা হচ্ছে। পাশের বাড়ির লোকজন থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করি। 
এ পাম্পের অপারেটর আবু তাহের বলেন, এ পাম্প দিনে ২ ঘণ্টা করে ৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। মাসখানেক আগে হঠাৎ বালু উঠতে শুরু করে। নিচের ফিল্টার ও পাইপ ফেটে গেছে। আবার নতুন লাইন বসানো হবে। 
কুসিকের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. ইউসুফ সমকালকে বলেন, সময়মতো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাড়া না পাওয়া এবং কম সময়ে একাধিকবার মেয়র পরিবর্তন হওয়ায় পাম্প স্টেশনগুলো মেরামতে বিলম্ব হয়েছে। 
পানি সংকটে অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাগরিকের জীবন বিপন্নের শঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু। তিনি বলেন, পানি না দিয়ে বিল আদায় করা অবিবেচক কাজ। এখনই জনস্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। 
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় নগরীতে পানির চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। মেশিন ও মাটির নিচের ফিল্টারের সক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে এসেছে। এগুলো সময়মতো মেরামত না করায় পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়েছে। পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর আর আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে কুসিক চাইলে আমরা শুধু কারিগরি সহায়তা দিতে পারি। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে তা শোধন করে নগরীতে সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি এখনও অনিশ্চিত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য সরবর হ নগর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনিরা হামাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন?

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার সড়কে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নেমে এসে ইসরায়েলি বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা অবরুদ্ধ গাজা থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণ অবসানের দাবি জানান। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া বৃহত্তম একটা প্রতিবাদ, যেখানে ৫০০ জন বিক্ষোভকারী অংশ নেন।

কিছুসংখ্যক মানুষ হামাস ও ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বক্তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা বেইত লাহিয়ার মানুষেরা শান্তির পক্ষে। আমরা শান্তি ভালোবাসি এবং আমরা চাই এই যুদ্ধের অবসান হোক।’

ইসরায়েলি, ইসরায়েলপন্থী মিডিয়া এবং ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা ফিলিস্তিনিদের এই প্রতিবাদকে ব্যবহার করে। এটিকে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনকে, বিশেষ করে হামাসকে, আক্রমণ করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।  

এমনকি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এই বিক্ষোভে উল্লাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে বর্ণবাদী রাষ্ট্র হামাসকে পরাজিত করার প্রচেষ্টায় তাদেরকে বাজি ধরছে।

পাঁচ মাস আগে ইসরায়েলে একজন সাংবাদিক বলেছিলেন, ইসরায়েলি লোকেরা তাঁদের ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ নিয়ে বিরক্ত এবং সে কারণে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন এবং যুদ্ধ শেষ করার দাবি জানাচ্ছেন। এরপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘গাজার লোকেরা কবে হামাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন?’ তিনি আমাকে বলেছিলেন, ইসরায়েলি নেতারা সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।

প্রকৃতপক্ষে, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা চলছে। ইসরায়েলি নেতারা ও তাঁদের মিত্ররা অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরায়েলি সেনারা যেসব যুদ্ধাপরাধ করে চলেছেন, তার জন্য হামাস এবং ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনকে দায়ী করে চলেছেন। গাজাকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার তাঁদের পূর্বপরিকল্পনায় ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য তাঁরা এটা সাজিয়েছেন।

ফিলিস্তিনিরা যদি তাঁদের অস্ত্র ত্যাগ করেন এবং বৈধ প্রতিরোধ বন্ধ করেন, তাহলে সেটা হবে না। প্রতিরোধ আমাদের মর্যাদা, প্রতিরোধ আমাদের সম্মান। আমাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের একমাত্র রাস্তা প্রতিরোধ।

একজন ফিলিস্তিনি, আরেকজন ফিলিস্তিনি—ইসরায়েল কখনো এভাবে ভাগ করে না। তারা সব ফিলিস্তিনিকে শত্রু বলে মনে করে এবং সবাইকে নির্মূল করা উচিত বলে মনে করে। কারণ হলো, তাঁদের জোর করে নিজেদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার পরও, তাঁদের জমি চুরি করার পরও এবং তাঁদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পরও তাঁরা প্রতিরোধ ছেড়ে দেননি।

একটা বড় অংশের লোকেদের স্মৃতিশক্তি খুবই স্বল্পমেয়াদি। তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধ ইসরায়েলি নৃশংসতাগুলো এবং ইসরায়েলি নেতাদের অপমানজনক মন্তবগুলো এবং মিথ্যা দাবিগুলো মনে রাখতে অক্ষম। অতএব তাঁরা সেই ইসরায়েলি নেতাকে জানতে আগ্রহী না–ও হতে পারেন, যিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সেরা বন্ধু হলো সেই ফিলিস্তিনি, যিনি মারা গেছেন।’

গণহত্যা শুরুর পর একটি টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইহুদি বাইবেল থেকে ধার নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ‘আমালেক’ বলেছিলেন। এটি ইঙ্গিত করে যে সেখানে একটি আদেশ ছিল, যা নির্ধারণ করে যে ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই ইহুদিদের দ্বারা ধ্বংস করতে হবে।

নেতানিয়াহুর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত ফিলিস্তিনিদের ‘নরপশু’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এর মাধ্যমে গাজায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা দিতে চেয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি দখলকৃত জায়গায় এ সবকিছুর সরবরাহ অবশ্যই জনগণকে বিনা মূল্যে দিতে হবে।

এরপর নেসেটের (ইসরায়েলের আইনসভা) উপ–স্পিকার নিসিম ভাতুরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসরায়েলের একটি সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে, ‘গাজাকে দুনিয়ার মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা।’ গাজার এতিহ্যবিষয়ক মন্ত্রী আমিচায় ইলিয়াহু গাজায় পারমাণবিক বোমা ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গাজায় একজনও বেসামরিক নাগরিক নেই।

গাজার বাসিন্দাদের জোর করে উচ্ছেদ করে দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী শোহলো কারহি ফিলিস্তিনিদের দ্রুত বের করে দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ফিলিস্তিনিরা মিসরে যেতে বাধ্য হবেন।

ইসরায়েলি নেতাদের কাছে ফিলিস্তিনি মানেই শত্রু। তাঁরা ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছেন। কোনো প্রতিরোধযোদ্ধা নেই, সেটা জানার পরও তাঁরা সেই সব এলাকাকে টার্গেট করছেন।

বিক্ষোভকারীরা শান্তির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা হয়তো ভুলে গেছেন যে ১৯৯৩ সাল থেকে আমাদের শান্তিতে বাস করা উচিত ছিল। কেননা, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ফাতাহকে নিরস্ত্রীকরণের মধ্য দিয়ে ১৯৯৩ সালে পিএলও ওসলো শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। আমাদের তাতে কী হয়েছে? তারা আমাদের খুন করা অব্যাহত রেখেছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রমাণ করতে হবে না যে তারা শান্তিপূর্ণ লোক। সেটা প্রমাণ করতে হবে ইসরায়েলিদের। যা–ই হোক, বিশ্বের ভণ্ড পরাশক্তি ও আরব নেতারা যতক্ষণ ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা হবে না।

ফিলিস্তিনিরা যদি তাঁদের অস্ত্র ত্যাগ করেন এবং বৈধ প্রতিরোধ বন্ধ করেন, তাহলে সেটা হবে না। প্রতিরোধ আমাদের মর্যাদা, প্রতিরোধ আমাদের সম্মান। আমাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের একমাত্র রাস্তা প্রতিরোধ।

মোতাসেম আ দল্লউল গাজার মিডল ইস্ট মনিটরের সংবাদদাতা
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ত্রাণবাহী গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে মিয়ামারের সেনারা
  • আজ যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে
  • ক্রেতা ৭০ টাকায় লেবু খাবেন না, এর কমে বেচলে বিক্রেতার লাভ হবে না
  • ফিলিস্তিনিরা হামাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন?
  • বিশ্ববাজারে সোনার দামের নতুন রেকর্ড
  • এপ্রিলেও একই থাকছে জ্বালানি তেলের দাম
  • রামুতে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি নিহত, অস্ত্র উদ্ধার
  • জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত
  • মজুতদারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দরকার