কর্ণফুলীর পানিতে ঝাঁপ স্রোতে যায় তলিয়ে
Published: 18th, January 2025 GMT
কাপ্তাই উপজেলার বুকচিরে বয়ে গেছে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীটি রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, পটিয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। এই নদীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছরই কাপ্তাইয়ে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। তাদের অনেকে কর্ণফুলী নদীতে নৌকাযোগে ভ্রমণে যান। নদীতে বারবার ঘটছে নৌকাডুবির ঘটনা। অনেকে স্বচ্ছ জলরাশি দেখে আনন্দে নদীতে ঝাঁপ দেন, সাঁতার না জানায় তারা আর উঠতে পারেন না। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে ১১ জনের সলিল সমাধি হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সীতার ঘাট এলাকায়।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাটে ডুবে মৃত্যু হয় দুই পর্যটকের। তারা হলেন প্রিয়ন্ত দাশ (১৭) ও শাওন দত্ত (১৭)। তারা চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটা থেকে ৯ বন্ধু মিলে কাপ্তাই ভ্রমণে আসেন। নৌকাডুবি হয়ে মারা যাওয়া দু’জনের লাশ পাওয়া যায় ৪৩ ঘণ্টা পর। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে কাপ্তাইজুড়ে।
এর আগে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি পর্যটকবাহী নৌকা চন্দ্রঘোনা কয়লার ডিপো সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে টুম্পা মজুমদার (৩০), বিজয় মজুমদার (৫) ও দেবলীনা দে (১০) নামের ৩ জন যাত্রী নদীতে ডুবে মারা যান। একইভাবে ২০২১ সালের গত ২৯ মে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাটে ডুবে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র তন্ময় দাশের (১৯) মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ১১ মে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় কলেজছাত্র লোকেশ বৈদ্য (১৯) ও তার বন্ধু অপূর্ব সাহার (১৮)। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল চিৎমরম নদীর ঘাটে গোসল করতে নামে জয় কান্তি দে (১৩) নামের এক শিশু। পরে তার সলিল সমাধি হয়। অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে মাছ ধরতে গিয়ে চিৎমরম ঘাটে মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা উসালা মারমার (৩৪)। ২০২৩ সালের ১১ মে ব্যাঙছড়ি মুসলিমপাড়া ঘাটে খেলতে গিয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয় মো.
কাপ্তাইয়ে বারবার কেন নৌডুবি ও মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে– জানতে চাইলে সাংস্কৃতিককর্মী অর্নব মল্লিক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই অংশে নৌডুবিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সীতার ঘাটে। শহর থেকে আসা পর্যটকরা শহর এলাকায় এমন স্বচ্ছ জলরাশি দেখতে পান না। তাই এমন জলরাশি দেখে তারা আকর্ষিত হয়ে আগপিছে না ভেবে কর্ণফুলী নদীর গভীর জলে নেমে পড়েন। ভালো সাঁতার না জানায় অনেকে স্রোতে ভেসে যান। আবার অনেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তলিয়ে যান। দুর্ঘটনা রোধে পর্যটন স্পট বনশ্রী কমপ্লেক্স থেকে সীতার ঘাট অংশকে বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙানো দরকার। এতে মানুষ সচেতন হবেন।’
কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার কাজী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাপ্তাইয়ে বর্তমান সময়ে যেসব নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে সেগুলো অনুসন্ধান করে জানা যায়, নিহতদের কেউই সাঁতার জানতেন না। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যারা ঘুরতে আসেন তারা কর্ণফুলী নদী সম্পর্কে সচেতন না থাকায় এবং সাঁতার না জানায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরি হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই অংশে কিছু নীরব স্থানে বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা নৌকাযোগে এসে মাদক সেবন করে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। মাদক সেবন করার পর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নদীতে নেমে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে তারা। আবার কর্ণফুলী নদীতে যে পর্যটকবাহী নৌকা আছে সেগুলোয় লাইফ জ্যাকেট নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে।’
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করে পর্যটকসহ স্থানীয়দের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে তিনি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ত য র ঘটন দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘পরীমণির সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হতেই পারে না’
গত কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন উড়ছে, চিত্রনায়িকা পরীমণি গায়ক শেখ সাদীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। গত সোমবার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন পরীমণি। সেদিন এ অভিনেত্রীর জামিনদার হন গায়ক শেখ সাদী। এরপর তাদের ‘প্রেম’ নিয়ে আলোচনা আরো জোরালো হয়েছে।
পরীমণি-শেখ সাদীর ব্যাপারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণভাবে ঘনীভূত হয়েছে। স্পষ্টবাদী পরীমণি নিজের অবস্থান পরিষ্কার না করলেও বক্তব্য দিয়েছেন শেখ সাদী।
প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে শেখ সাদী গণমাধ্যমকে বলেন, “পরীমণির সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হতেই পারে না। পারিবারিকভাবে আমাদের বোঝাপড়া ভালো। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তার বাসায় যান; তিনিও আমাদের বাসায় আসেন। পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে তার সঙ্গে প্রেমের কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাদের নিয়ে রিউমার ছড়াচ্ছেন।”
আরো পড়ুন:
আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত, সোমবার আদালতে যাবেন পরীমণি
ভয়ের কিছু নেই, আইনিভাবে মোকাবিলা করব: পরীমণি
পরীমণির সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শেখ সাদী বলেন, “একই অঙ্গনে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে পরীমণির সঙ্গে বেশ আগেই পরিচয়। পেশাগত কারণে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। নিয়মিত কথাবার্তাও হয়; এটা নিয়ে বলার তো কিছু দেখি না।”
জামিনদার হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন গায়ক শেখ সাদী। তার ভাষায়, “দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আদালতে গিয়েছিলাম। পরীমণি আমার সহকর্মী। তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর শুনে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখন পরীমণির সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন হওয়ার পর তার আইনজীবী একজন জামিনদার হন; আমি আরেকজন জামিনদার হই।”
২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর ভালোবেসে বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা পরীমণি ও চিত্রনায়ক শরিফুল রাজ। তবে ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি ঘরোয়াভাবে আবার তাদের বিয়ে হয়। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তাদের ছেলে শাহীম মুহাম্মদ রাজ্যের জন্ম হয়। রাজের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর একটি কন্যাসন্তান দত্তক নেন পরীমণি। আপাতত সিঙ্গেল মাদার হিসেবে দুই সন্তানকে বড় করছেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত