ঘাট উন্মুক্ত করার দাবি বিএনপি-জামায়াতের
Published: 18th, January 2025 GMT
উন্মুক্ত নৌঘাটে যাতায়াত করব নিরাপদে– এমন দাবি নিয়ে একসঙ্গে মিছিল, সমাবেশ করেছেন জামায়াত ও বিএনপি নেতারা। নানা ইস্যুতে সারাদেশে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যখন দূরত্ব বাড়ছে তখন নৌঘাট ইস্যুতে দুই রাজনৈতিক দলের এমন ঐকমত্য নজর কেড়েছে সবার। নিরাপদ ও উন্মুক্ত নৌঘাটের দাবিতে এর আগে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের উপজেলা কমিটি আলাদাভাবে বিবৃতিও দিয়েছে। সব দলের নেতারা চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে বক্তারা উন্মুক্ত নৌপথকে বাধাগ্রস্ত করায় জগলুল হোসেন নয়নের ইজারা বাতিল করারও দাবি জানান।
এর আগে ঘাটে অরাজকতা বন্ধ, সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসকে কাউন্টার নির্মাণে বাধা প্রদান ও সব ধরনের অনিয়ম বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে ‘আমরা সন্দ্বীপবাসী’ নামে সংগঠন। ১৫ জানুয়ারি গুপ্তছড়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ জেটির মুস্তাফিজুর রহমান কাউন্টারের সামনে এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার নাছিরুল কবির, মনির তালুকদার, সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসের এমডি ও বিএনপি নেতা লায়ন নাছির উদ্দীন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনউদ্দীন, সমাজকর্মী লায়ন আমজাদ হোসেন, জামায়াত নেতা শাহেদ খান, যুব জামায়াত নেতা মাকছুদের রহমান, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মুহিব খান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এস কে ফেরদৌস, বকতিয়ার উদ্দিন রানা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের জেলা সমন্বয়ক সাইফুর রহমান খান, মাইনউদ্দীন ফাহাদ, বইচিন্তার সমন্বয়ক নজরুল নাইম, ইসমাইল হোসেন, শেখ রুবেল, কিবরিয়া শাহিন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমাজকর্মী নজরুল ইসলাম।
বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্মতা পোষণ করে ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণ করে সন্দ্বীপ সম্মিলিত সামাজিক ঐক্য পরিষদ, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সন্তোষপুর, সন্দ্বীপ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট ফোরাম, দ্বীপের মায়াবী স্বপ্ন সংগঠন, ফ্রিডম বার্ডস অব সন্দ্বীপ, সন্দ্বীপ প্রবাসী ঐক্য পরিষদ, তিতা কাজীপাড়া দেশি প্রবাসী ঐক্য পরিষদ, প্রাণের সন্দ্বীপ মানব দরদি সংগঠন, সন্দ্বীপ ব্লাড ডোনার ফোরাম, সোনালি সন্দ্বীপ তরুণ প্রবাসী ঐক্য পরিষদ, সন্দ্বীপ ই-কর্মাস পরিবার, বৈষম্যবিরোধী যাত্রী আন্দোলন, বইচিন্তাসহ নানা সংগঠন।
‘সন্দ্বীপবাসী এক হও, গুপ্তছড়া, কুমিরা নৌপথে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাও’ স্লোগান নিয়ে দুপুরের পর থেকে শত শত ব্যক্তি গুপ্তছড়া ঘাটে জমায়েত হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে নয়নের ইজারা বাতিল করতে হবে। যাত্রী পারাপারে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া ১৭০ টাকা কার্যকর করতে হবে। ঘাটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট প্রদান এবং কথিত ভিআইপি টিকিট বাতিল করতে হবে। যাত্রী ওঠানামায় দুর্ভোগ দূর করতে হবে। সন্দ্বীপ থেকে রাতে রোগী পারাপারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। একাধিক ইজারাদার যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র রহম ন ব এনপ ইসল ম স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
সংশয়বাদীদের মুখে কুলুপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একজন নিঃসঙ্গ পথিক। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষিত নীতির একজন স্ব-স্বীকৃত অনুশীলনকারী। মোদির এই নীতি হলো– আমাদের এ যুগ যুদ্ধের নয়; এখানে ‘যুদ্ধের অনুকূল পরিস্থিতি’ যতই থাকুক। ট্রাম্প নিজের ব্যাপারে একটি উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। দেশে যুদ্ধবাদীদের আক্রমণের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রাখেন, যদিও তিনি একজন কট্টর জাতীয়তাবাদী; নির্বিচারে মার্কিন স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন।
গত বছরের ১৪ জুন মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে অতিশয় উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন, সেখান থেকে তিনি পিছু হটেছেন। তার পুরো কৃতিত্ব ছিল ট্রাম্পের। ওই সময় পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য কিছু অসম্ভব শর্ত উত্থাপন করেছিলেন, যার মধ্যে আশ্চর্যজনক হলেও তাদের নিজ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া ওব্লাস্টে থাকা অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের তৎক্ষণাৎ প্রত্যাহার করা অন্তর্ভুক্ত ছিল!
অবশ্য পুতিন একজন বাস্তববাদী। কিন্তু যদি তিনি ছাড় দিতে সাহসী বোধ করেন, তা তিনি করেছেন ট্রাম্প যে বুদ্ধিদীপ্ত শক্তি প্রয়োগ করেছেন তা দেখে। ট্রাম্প জেলেনস্কির একগুঁয়ে অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছেন; ক্রিমিয়া রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ– তা স্বীকার করে নিয়ে জেলেনস্কির সামনে বিষের পাত্র ধরে রেখেছেন!
অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনে ‘আগ্রহীদের জোট’ তৈরিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর অবাস্তব পরিকল্পনা ট্রাম্প ভেস্তে দিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প ইউক্রেনে নিজের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইউরোপের প্রতিরোধ এক ধাক্কায় চূর্ণ করে দিয়েছেন এবং সে ক্ষেত্রে মার্কিন নেতৃত্ব জোরদার করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প জেলেনস্কি এবং তাঁর ইউরোপীয় সমর্থকদের আসন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হুমকি নিয়ে শান্তি আলোচনার পথে যুক্ত হওয়া অথবা রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের সংযুক্তিতে আমন্ত্রণ জানানো– এ দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেন। এই পুরো উদ্যোগে পেন্টাগন থেকে একটিও গুলি ছোড়া হয়নি।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনায় যুক্ত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিরোধাত্মক বিষয় হলো, শুল্ক নিয়ে নাটকীয় অচলাবস্থা উভয় পক্ষকে গভীর অতল গহ্বরে উঁকি দিতে এবং উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ তারা যা দেখছেন, তা তাদের পছন্দ নয়। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, উচ্চ শুল্ক উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক নয়। তিনি আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন– ভবিষ্যতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রাম্প ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় ‘নৌ চলাচলের স্বাধীনতা’র পক্ষে কোনো যুদ্ধবাজ মহড়া মার্কিন নৌবাহিনী দেখায়নি।
ইউক্রেন, ইরান ও চীন– এই তিন ক্ষেত্রেই ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির জন্য ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া ও ইরান ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের কাছে তাদের আগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় খুলে বলেছে। তারা জানিয়েছে, যদি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলেই তারা দেশটির সঙ্গে পারস্পরিকভাবে উপকারী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি শান্ত হলে চীনও পিছিয়ে থাকতে পারবে না।
পুতিন যদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার যৌক্তিকতা দেখতে পান, তাহলে মোদি কি অনেক পিছিয়ে থাকতে পারেন? একুশ শতকে একতরফাভাবে সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা অবাস্তব। বিপরীতে যদি ‘একাকী পরাশক্তি’ এবং একটি প্রাচীন ‘সভ্যতা শক্তি’ ওমানের মতো একটি ছোট দেশের মধ্যস্থতা গ্রহণের জন্য নম্রতা দেখাতে পারে, তবে এটি শুধু তাদের আত্মবিশ্বাস ও অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তুলে ধরে।
ইউক্রেন ও ইরানের পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে দরকষাকষি মোদির ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিকতার সাক্ষ্য দেয়– আমাদের এই কাল যুদ্ধের নয়। একইভাবে এর স্বাভাবিক পরিণতি হলো, একুশ শতকে উদীয়মান বিশ্বব্যবস্থায় জাতিরাষ্ট্রগুলো একতরফাভাবে সমাধান বলে কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না।
এম. কে. ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন
থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম