ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডি
Published: 18th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুর নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করে যুবাইর বিন নেছারী নামে একজন শনিবার বিকেলে শাহবাগ থানায় এ জিডি করেন। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে অনতিবিলম্বে মেঘমল্লার বসুকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান নেছারী।
জিডির তথ্য নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির নামে একটা জিডি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মেঘমল্লার বসু ‘দ্যা অনলি অপশন ইজ রেড টেরর’ (একমাত্র পথ লাল সন্ত্রাস) স্ট্যাটাস দেন। এ বিষয়ে তিনি সমকালকে বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের ওপর সহিংসতা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আক্রমণকারীদের বোঝানো যাবে, তারা আক্রমণ করলে আমরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হবে না।
স্ট্যাটাস মুছে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, স্ট্যাটাসটা এক ধরনের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রভোকেশনের’ জায়গা থেকে দিয়েছিলাম। তার মানে এই না, আগামীকাল আমি একটা লাল বাহিনী গঠন করে পরশু দিন থেকে মারামারি শুরু করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সময়ে এসে লাল সন্ত্রাসের মতো বিষয়ের ইঙ্গিত দেওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়। যে কোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি।
মেঘমল্লার বসুর স্ট্যাটাসের পরই রাত সোয়া ১২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। কর্মসূচি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতিকে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ, এ বি জোবায়ের প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরি এলাকায় সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ করেন এবং গ্রাফিতি মুছে ফেলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]