পুরো নাম ফারুক হোসেন রিপন। স্থানীয়রা তাকে চেনেন সেমাই রিপন নামেই। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞ্যান করে চলা এই সেমাই রিপন কখনো শামীম ওসমান আবার কখনো ভিড়ে ছিলেন সাবেক মেয়র আইভীর বলয়ে। দলীয় প্রভাব থাকায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ভূমিদস্যুতা, প্রতারণা, কিশোরগ্যাং পরিচালনা, অর্থের বিনিময়ে বিচার-শালিসে প্রভাব খাটানো এমনকি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য সরবরাহ করে হয়রানী মূলক সংবাদ প্রকাশ করানো সহ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মামলাবাজ হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে রিপনের। এবার জেলে বন্দি থেকেও এসএস রানা নামে এক ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে ঘায়েল করতে কূটচাল চেলে যাচ্ছে রিপন; এমন অভিযোগ উঠেছে। 


জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের তামাকপট্টি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মাদার প্রিন্টের স্বত্বাধিকারী এসএম রানার সাথে বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামল থেকেই বিরোধ ছিলো সেমাই রিপনের। রানার জমি ব্যবসায় মধ্যস্থতাকারী তথা দালালের ভূমিকায় থেকেও করেছিলেন একেরপর এক প্রতারণা। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে। 


এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া রিপন স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতাকে হাত করে রাতারাতি ভোলপাল্টে ফেলেন। যুবলীগ থেকে নিজেকে বিএনপি ঘরনার দাবি করে এলাকায় হৈচৈ ফেলে দেন। কেননা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলো রিপন। আওয়ামী লীগের শাসনামলেও যুবলীগের পরিচয়ে এলাকায় সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর ও  সোনারগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। মামলার এজাহারগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে রিপন।  


৫ আগস্টের পর ভোলপাল্টানো এই যুবলীগ ক্যাডার অর্থের বিনিময়ে এক বিএনপি নেতার ছায়ায় থাকলেও রেহায় পায়নি। গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। তবে ৫ আগস্টের পরে এবং গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্তও রিপন ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়িয়েছিলেন। তার কিশোরগ্যাং বাহিনী নিয়ে গত ৫ আগস্টের পর সৈয়দপুরে ব্যবসায়ী এসএম রানার জমি দখলের জন্য দফায় দফায় হামলা চালিয়েছিলো সে। 


এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় যুবলীগ ক্যাডার রিপনকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় থাকা একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, প্রতারণা ও ভূমিদস্যুতাসহ সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হককে হেনস্থা ও সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম শহীদ মাওলানা মোঃ ইকবাল হত্যা মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয় তদন্ত কর্মকর্তারা। 


বর্তমানে জেলে বন্দি থাকলেও সেখান থেকেই ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে রিপন; এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এসএম রানাকে ঘায়েল করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিপন ও তার পরিবারসহ সিন্ডিকেটের লোকেরা। এর মধ্যে সাগর নামে তার বেতনভুক্ত লোককে দিয়ে কলকাঠি নাড়িয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুইটি টেলিভিশন সহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে এসএম রানাকে নিয়ে যেসকল সংবাদ প্রচার করানো হয়েছে, সেখানে সাগরসহ রিপন সিন্ডিকেটের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এসএম রানা বলেছেন, রিপন শত্রæতা বশতঃ তার পরিবার ও সহযোগিদের যোগসাজসে এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতেই মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে আড়াল থেকে। 


এসএম রানা বলেন, “আমি মাদার প্রিন্ট নামক একটি স্বনামধন্য মুদ্রনশিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক কর্মকান্ডে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কাউন্সিলর, সাবেক ক্রিকেটার এবং শীতলক্ষ্যা ক্রিকেট ক্লাব ও শীতলক্ষ্যা ক্রিকেট একাডেমীর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নই এবং কোনো রাজনৈতিক দলের পদপদবী কিংবা প্রাথমিক সদস্যও নই। শহীদনগর সুকুমপট্টি এলাকার চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার, ভূমিদস্যু, প্রতারক, মামলাবাজ এবং কূটকৌশলী হিসেবে পরিচিত ফারুক হোসেন রিপন আমার জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকবার হামলাও চালিয়েছিল তার লোকেরা। জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিজেদের লোকের নামে সাঁটানো সহ জমি জবর দখল, গাছপালা নিধন ও নির্মান সামগ্রী লুটের ঘটনায় রিপনের লালিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে বিগত ১২ সেপ্টেম্বর সদর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। বর্তমানে রিপন জেল হাজতে থাকলেও আমাকে প্রতিপক্ষ ভেবে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার পরিবার ও সিন্ডিকেটের লোকদের দ্বারা কতিপয় সাংবাদিকদের নানা ভাবে প্রভাবিত করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানীকর ও অসত্য সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে। আমাকে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন এবং বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এর ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে এবং রাজনৈতিক দলের লোক হিসেবে আখ্যাদিয়ে তানভীর আহমেদ টিটুর অস্ত্রের ভান্ডার নাকি আসার কাছে এবং ভুমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বলে অপবাদ দিয়ে খবরের শিরোনাম করে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রকাশ করা হয়। আমি একজন ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সংশ্লিষ্ট বহু মানুষের সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রিপনের লোকেরা আমাকে ঘায়েলের টার্গেট নিয়ে বিসিবির সম্মানিত সভাপতি ও পরিচালকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গত জুলাই-আগস্টে অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালানোর মত মিথ্যা, কাল্পনিক ও ঘৃণিত অভিযোগে আমাকে জোরপূর্বক অপরাধী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

একজন ব্যবসায়ী, ক্রীড়া সংগঠক, সমাজ সেবক ও দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলি চালানোর মতো ঘৃণিত কর্মকান্ডে আমি কখনোই জড়িত ছিলাম না এবং আমার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে কোনও মামলা নেই। অথচ প্রকৃত অপরাধিকে বাঁচানোর হীনস্বার্থে এবং সামাজিকভাবে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও ঘায়েল করতে হত্যাসহ বহু মামলার আসামী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক সেমাই রিপনের লোকদের আর্থিক সহায়তায় উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে স্থানীয় একটি কুচক্রিমহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে নিয়ে অপপ্রচার করছে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।”
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ঘ য় ল করত ছ ত র জনত র জন ত ক ব যবস য় ৫ আগস ট এল ক য় আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

রিমান্ড শেষে কারাগারে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও ৫ সহযোগী

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নাশকতার মামলায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ও তার পাঁচ সহযোগীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদলত।

আট দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেনের আদালতে হাজির করা হয় আসামিদের। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো অন্যরা হলেন- মোস্তাক আহমেদ, সলিমুল্লাহ, আসমতউল্লাহ, হাসান ও মনিরুজ্জামান। মনিরুজ্জামান ছাড়া সবাই মায়ানমারের বাসিন্দা। মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। 

আরো পড়ুন:

ডাবল মার্ডারে গ্রেপ্তার, তাহসিন হত্যাকাণ্ডে রিমান্ডে ছোট সাজ্জাদ

ইনু-মেনন-আনিসুল-দীপু মণি-সাদেক খানের আবার রিমান্ড

কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নাশকতার মামলায় গত ১৩ এপ্রিল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আতাউল্লাহ ও তার পাঁচ সহযোগীকে আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে বিচারক আট দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”

গত ১৭ মার্চ ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুইটি মামলা করা হয়। আতাউল্লাহ বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা/অনিক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দর থানা (মহানগর) জাসাস’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
  • স্ত্রীকে হত্যার পর ছুরি হাতে লাশের পাশে বসেছিলেন রব মিয়া
  • পেশাজীবী গাড়িচালকদের রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
  • আড়াইহাজারে গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা, স্বামী আটক
  • নারায়ণগঞ্জে আগুনে ঝুটের গুদাম ও এমব্রয়ডারি কারখানা পুড়ে গেছে
  • প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন চবি অধ্যাপক 
  • আ’লীগের ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে জাকির খানের মিছিল ও সমাবেশ
  • আরসা প্রধান আতাউল্লাহসহ পাঁচ সহযোগী রিমান্ড শেষে কারাগারে  
  • বিশেষ শিশুদের পাশে নারায়ণগঞ্জ ডিসি ‘ভিন্নতা নয়, সম্ভাবনার প্রতীক অটিজম’
  • রিমান্ড শেষে কারাগারে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও ৫ সহযোগী