টাঙ্গাইলের বাসাইলে একইস্থানে কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঘটনাটি ঘটে। আজ বিকেল ৩টায় একইস্থানে ইউনিয়ন বিএনপির দুই গ্রুপের কর্মীসম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। 

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আজ বিকেল ৩টায় কাশিল ইউনিয়ন বিএনপির দুই গ্রুপ একইস্থানে কর্মী সম্মেলন ডাকে। দুই গ্রুপের সম্মেলনেই বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী শহীদুল ইসলামের পক্ষের বাথুলীসাদী ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মানিক মোহাম্মদ তোহা গ্রুপের নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কর্মী সম্মেলন করার জন্য চেয়ার-টেবিল বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কাশিল ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ ও বাথুলীসাদী ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাঞ্চন খানসহ কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হন। 

আরো পড়ুন:

চিন্ময়কাণ্ডে আসামি হওয়া ৬৩ আইনজীবীর জামিন

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এক পর্যায়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কাশিল ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাঞ্চন খান ও সাধারণ সম্পাদক মানিক মোহাম্মদ তোহাসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। ঘটনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বাথুলীসাদী ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মানিক মোহাম্মদ তোহা বলেন, “পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন করার জন্য পরিষদের সামনে চেয়ার ও টেবিল বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে অন্য গ্রুপের রফিকুল ইসলাম ও আব্দুর রউফসহ কয়েকজন নেতাকর্মী এসে বাধা দেন। এক পর্যায়ে তারা আমার ওপর হামলা করেন। আমার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন তারা। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। ঘটনার পর পুলিশ এসে দুই পক্ষেরই কর্মী সম্মেলন বন্ধ করে দিয়েছে।”

কাশিল ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ১৫ দিন আগে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। হঠাৎ করে কাজী শহীদুল ইসলাম গ্রুপের মানিক মোহাম্মদ তোহাসহ কয়েকজন নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মী সম্মেলন বাধাগ্রস্ত করার জন্য হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমিসহ চারজন আহত হয়েছি। কর্মী সম্মেলনের তারিখটি বাতিল করা হয়েছে।”  

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, “কয়েকদিন আগে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করি। পরে সেখানে চেয়ার ও টেবিল বসাতে গেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান গ্রুপের নেতাকর্মীরা আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।”

উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন আল জাহাঙ্গীর বলেন, “কাশিল ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনের তারিখ প্রায় ১৫দিন আগে করা হয়। কর্মী সম্মেলনটি বানচাল করার জন্য বিএনপির বহিষ্কৃত কাজী শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগদেরকে সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। বিকেল ৩টায় কর্মী সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত আছে।”

বাসাইল থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, “একইস্থানে বিএনপির দুই গ্রুপ কর্মী সম্মেলনের ডাক দেয়। দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নেয়ামত উল্ল্যা বলেন, “ঘটনার পর দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের কর্মী সম্মেলনটি বন্ধ করা হয়েছে।”

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ ব এনপ আহত ব এনপ র দ ই গ র প গ র প র ন ত কর ম র ন ত কর ম দ র ন ত কর ম র প র কর ম স ঘর ষ র ঘটন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি ছাড়া সব পদেই আ.লীগের জয়জয়কার

মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে আওয়ামীপন্থিরা ১৪টিতে জয় পেয়েছেন। সভাপতি পদ ছাড়া অন্য সব পদে তারা জয়ী হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী এমদাদুল হক খান। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়াকে ৭৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ১৫৬ ভোটে পরাজিত করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মাহাবুব হোসেন (শাকিল)। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৩০ ভোট ও জালালুর রহমান পেয়েছেন ১৩০ ভোট। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম মিয়া পেয়েছেন ২৯ ভোট (নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থীর ভোট সমান হওয়ায় পুনরায় গণনা অথবা লটারি করে বিজয়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হবে)। সহ-সভাপতি পদে মাহবুব হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে শাকিলা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে মশিউর রহমান পারভেজ, কোষাধ্যক্ষ পদে সুজন ভৌমিক, সম্পাদক (লাইব্রেরি) পদে মুনীর হাসান, সম্পাদক (মহরার) পদে এ কে এম আজিজুল হক মুকুল নির্বাচিত হয়েছেন।

কার্যনির্বাহী ৫টি পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজয়ী ৫ জন হলেন সৈয়দা তাহমিনা খানম, এনামুল হক, আবদুস সালাম, ইকবাল হোসেন ও আবু সুফিয়ান। এ ছাড়া সম্পাদক (অ্যাপায়ন ও বিনোদন) পদে বদরুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ মুঠোফোনে জানিয়েছেন, মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ছাড়া ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক বিজয়ী হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সরাসরি আওয়ামী লীগের পদে থাকা কোনো নেতা অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কোনো আইনজীবী নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনিও অন্য সবার মতন বিজয়ী হতেন বলে আমি মনে করি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন।

তবে এমদাদুল হক খান সভাপতি পদে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সমর্থন নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী না হওয়ায় তাদের সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচনে মূলত এমদাদুল হক খানকেই ভোট দিয়েছেন। সেকারণেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়া পরাজিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান বলেন, এমদাদুল হক খানকে নির্বাচিত করায় সব আইনজীবীদের ধন্যবাদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার বিজয়ে আমরা আনন্দিত।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাদারীপুর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন জানান, সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুজন সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ছয়মাস করে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ