চুনকা পাঠাগারের সামনের ফুটপাত উন্মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন
Published: 18th, January 2025 GMT
বঙ্গবন্ধু সড়কের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের নীচতলার বারান্দার অবৈধ বর্ধিত অংশটি অপসারণ করে ফুটপাতটি ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারী চলাচলে উন্মুক্ত করা এবং নারায়ণগঞ্জের সার্বিক যানজট নিরসণের দাবীতে “আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী” সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় চুনকা পাঠাগার চত্বরে সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূর উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু’র সঞ্চালনায় এই মানবন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, নাসিকের নির্মীয়মান প্রশস্থ ও গভীর নতুন ড্রেনটি ডিআইটি মার্কেট থেকে উত্তর দিকে চুনকা পাঠাগারে বাঁকা পথে এসে পাঠাগারের বারান্দার নীচে বিদ্যমান সরু ড্রেনের সহিত মিলিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে প্রধান সড়কে জলজটের সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় চুনকা পাঠাগারের নীচ তলার ফুটপাথের উপরে নির্মিত বারান্দার অবৈধ অংশটি অপসারণ করে নতুন ড্রেনটি প্রশস্থ, গভীর ও সমান্তরাল নির্মাণ করে পথচারী ও ছাত্র ছাত্রী চলাচলে ফুটপাতটি উন্মুক্ত করার জোর দাবী জানান। পাশাপাশি চাষাড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলো অন্যত্র সড়িয়ে নিয়ে “চাষাড়া-পঞ্চবট্টি” সড়কটি প্রশস্থ করার দাবী জানান তিনি।
প্রধান বক্তা নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এড.
তিনি বিষয়টি উল্লেখ পূর্বক নাসিক প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেন। নাসিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি “আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী”র এই কর্মসূচীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন ও নাসিক প্রশাসককে দ্রুততার সহিত ফুটপাতটি উন্মুক্ত করার জোর দাবী জানান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন মন্টু তার বক্তব্যে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু সড়ক, মীর জুমলা সড়ক, শায়েস্তা খাঁন সড়ক, সিরাজউদৌল্লা সড়ক থেকে প্রকৃত হকারদের যৌক্তিক পুনঃবার্সন সহ হকার মুক্ত করার জোর দাবী জানান। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, পাঠাগারের সম্মুখে ফুটপাথের উপর নির্মিত অবৈধ অংশটি অবিলম্বে উন্মুক্ত করা না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সহ-সভাপতি আঃ কুদ্দুস আজাদ, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক-১ মাহমুদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ বদরুল হক, সহ-সভাপতি হাজী রমজান উল রশিদ, সহ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন দেওয়ান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নূর হোসেন মোল্লা, শফিকুল ইসলাম খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ লিয়াকত আলী দেওয়ান, নূর আলম কাশেম, ওয়াহিদুজ্জামান, মোঃ রাজি উদ্দিন, এফ এম ইস্রালিফ, মোঃ মিলন চৌধুরী, এ কে আজাদ, আঃ হালিম বেপারী, মোঃ হারুনুর রশিদ, হাজী মোঃ সিদ্দিক মিয়া, মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মোঃ বদর উদ্দিন, টিটুল আহমদ, মোঃ ইয়াকুব আলী, মোঃ খলিল, মোঃ মিনার হোসেন, মোঃ ফারুক, মোঃ হাসনাত রিজন, মোঃ হীরা, আলভি হাসান, মোঃ জুয়েল, মোঃ স্বপন, মোঃ ফেরদৌস, ওয়াসিক আল আজাদ অপূর্ব, মো খলিল প্রমুখ।
।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশবান্ধব ভেগান লেদার উদ্ভাবন করে সাড়া জাগালেন নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী সাদিয়া
নিজের গবেষণায় পরিবেশবান্ধব ভেজিটেবল লেদার (চামড়া) তৈরি করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন ইসরাত জাহান সাদিয়া নামে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাকৃতিক নানা উপাদানে নিজের হাতে তৈরি এই চামড়া দিয়ে মানসম্মত আধুনিকমানের আকর্ষণীয় জুতো, স্যান্ডেল, ঘড়ির বেল্ট ও ব্রেসলেট বানিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সাদিয়া।
বহির্বিশ্বের কিছু দেশে স্বল্পমাত্রায় ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক এ ধরণের কাজ হলেও বাংলাদেশে এই ধরণের গবেষণামূলক অর্জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে এই প্রথম। পরিবেশবান্ধব ভেজিটেবল লেদার (চামড়া) উদ্ভাবনকারি ইসরাত জাহান সাদিয়া নারায়ণগঞ্জ শহরের আর.পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
সাদিয়ার এই উদ্ভাবন দেশের চামড়া শিল্পে যুগান্তকারি অবদান রাখতে পারে এবং এই চামড়া পশুর চামড়ার বিকল্প হিসেবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে মনে করছেন তার শিক্ষকবৃন্দ। শিক্ষার্থী সাদিয়ার গবেষণামূলক এই সাফল্যের মাধ্যমে দেশে টেকসই চামড়া শিল্পে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন হয়েছে বলেও মনে করছেন তার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে ইসরাত জাহান সাদিয়া তার এই গবেষণার বিষয়টি প্রকাশ করেন। একই সাথে তার উদ্ভাবিত ভেজিটেবল লেদার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকর্ষণীয় সামগ্রী উপস্থাপন করেন। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন সাদিয়ার সহপাঠী সহ শিক্ষকবৃন্দ।
এসময় ইসরাত জাহান সাদিয়া জানান, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের আওতায় ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত এর তত্ত্বাবধানে ও অনুপ্রেরণায় গবেষণা করে তিনি এই ভেগান লেদার তৈরি করছেন।
এই ভেজিটেবল লেদার তৈরি করতে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক সবজি, ফলের এক্সট্রাক্ট ও কেমিক্যাল এর মিশ্রণ সহ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেছেন, যা সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য। মূলত ঘরোয়াভাবেই বিটরুট, কফি ও কয়লার থেকে বিভিন্ন অনুপাতের রাসায়নিক মিশ্রণ সৃষ্টি করে এই ভেগান লেদার তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
গবেষণার বিষয়ে ইসরাত জাহান সাদিয়া বলেন, আমি সবসময়ই পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। এই ভেজিটেবল লেদার প্রকৃতির ক্ষতি না করেই উচ্চমানের বিকল্প দিতে সক্ষম। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সবজি ও ফলের রস থেকে চেষ্টা করে অবশেষে বিটরুট, কফি ও কয়লা আমার কাঙ্খিত ফল পেয়েছি।
এই তৈরিকৃত লেদার নিয়ে আমার ভবিষ্যতে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে। এই তৈরিকৃত লেদার থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন এক্সেসরিস ও জুতা প্রাথমিকভাবে তৈরি করার প্রয়াস করেছি। আমার উদ্দেশ্য লক্ষ্য হচ্ছে, এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা এবং বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়িত্বশীল পরিবর্তন আনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত বলেন, "আর.পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগ বরাবরই শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করে। প্রতিটি কোর্সে টেক্সাইলের ব্যাসিক, ফ্যাশন ও ডিজাইন এর মূল বিষয়গুলো শিক্ষকরা যত্ন সহকারে পড়ানোর চেষ্টা করেন।
আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার ফলেই এমন চমৎকার আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, এটি শুধু পরিবেশের জন্যই উপকারি নয়। বরং চামড়া শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এই গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ফলে দেশের ফ্যাশন ও টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের এই সাফল্যময় প্রেজেন্টেশনের দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ এর ডিজাইনার ও প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস। তিনি সাদিয়ার এই ধরণের গবেষণার প্রসংশা করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণায় উদ্যোগি হওয়ার আহবান জানান।
আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগের প্রসংশা করে সৌমিক দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিটি বিভাগ যদি শিক্ষার্থীদের এভাবে অনুপ্রেরণা দেয় তবে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে ও গবেষণায়য় ভালো সাফল্য অর্জন করবে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশনের দিন আরও উপস্থিত ছিলেন আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি আর আই এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সহকারী অধ্যাপক ড.মো. তরিকুল ইসলাম। গবেষণার মান ও কাজের প্রসংশা সহ বিভাগের সাফল্য কামনা করেন তারা।
এছাড়া আর.পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের এমন সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে উৎসাহিত করবেন বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।