রাবিতে ওয়ালটন স্মার্ট ফ্রিজ বিজ্ঞান উৎসব ১ ফেব্রুয়ারি শুরু
Published: 18th, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনে অষ্টমবারের মতো ‘ওয়ালটন স্মার্ট ফ্রিজ প্রেজেন্টস আরইউএসসি ন্যাশনাল সায়েন্স ফিয়েস্টা-২০২৪’ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি।
দুই দিনব্যাপী এ মেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ (টিএসসিসি) আটটি ভ্যানুতে অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সার্বিক সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে সনদ, স্ন্যাক্স এবং বিজয়ীদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কার ও প্রাইজমানি।
মেলায় অংশ নিতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.
এবারে মেলায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে স্টেজ সায়েন্স শো, ৩ডি, ৬ডি ও ৯ডি মুভি শো এবং স্টার ভিজুয়ালাইজেশন। অংশগ্রহণকারীরা এ আয়োজনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পাবেন।
এবারের বিজ্ঞান মেলায় মোট ১৩টি সেগমেন্ট থাকবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে, সায়েন্স অলিম্পিয়াড, কেইস সলভিং, সায়েন্টিফিক পেইন্টিং কম্পিটিশন, ওয়াল ম্যাগাজিন, সায়েন্টিফিক ডিবেট, পোস্টার প্রেজেন্টেশন।
এছাড়া মোবাইল অ্যাপ আইডিয়া কম্পিটিশন, রুবিক্স কিউব, এআই বেইসড বিজনেজ আইডিয়া কম্পিটিশন, দাবা প্রতিযোগিতা, ফটোগ্রাফি কনটেস্ট। এসব প্রতিযোগিতায় সবাই অংশগ্রহন করতে পারবেন।
এবারের মেলায় টাইটেল স্পন্সর ওয়ালটন স্মার্ট ফ্রিজ, স্ট্রেটেজিক পার্টনার বিডিএপস, স্ন্যাক্স পার্টনার বোম্বে সুইটস, লার্নিং পার্টনার ওলিন এআই, মিডিয়া পার্টনার যমুনা টেলিভিশন, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্টার্ড ও দিনকাল এবং কমিউনিটি পার্টনার জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট।
সায়েন্স ক্লাব বিজ্ঞান প্রচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান ক্যাম্প, বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন দিবস পালন, কুইজ, সেমিনার, সম্মেলন, স্কুল বিজ্ঞান শো, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প র টন র দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
এক পক্ষে প্রায় ৫০০ মানুষ। আরেক পক্ষে অন্তত ৭০০। চলছে পাল্টাপাল্টি গানের লড়াই। তা দেখতে জড়ো হয়েছেন আরও হাজারো নারী-পুরুষ। মধ্যচৈত্রের চামড়াপোড়া গরমে শিল্পী-দর্শনার্থী সবাই দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু বিরামহীনভাবে দুই পক্ষই পাল্লা দিয়ে গান গাইছে। কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ‘বিনা যুদ্ধে’ ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড় দিতে নারাজ!
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন গানের লড়াই চলে সুনামগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর গ্রামের নতুন হাটিতে। সেদিন ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র। খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ২৮ মার্চ ২০২৫। খুব সকালে সিলেট থেকে রওনা দিই। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব ও সংবাদকর্মী দীপ্ত বৈষ্ণব। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি মুছাপুর। তাদের গ্রামের পাশেই ভেড়াডহর। মূলত প্রদীপের আমন্ত্রণেই সেখানে উরিগান দেখতে যাওয়া।
হিন্দুধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রাকে উপলক্ষ করে বসন্তকালে গাওয়া হয় উরিগান। এসব গান ‘হোরিগান’ বা ‘দোলের গান’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন আর নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় উরিগানের প্রচলন বেশি। এর বাইরেও হাওরাঞ্চলের নানা গ্রামে দোল উৎসবে উরিগান গাওয়া হয়। তবে বৈষ্ণব ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে এ গানের চর্চা তুলনামূলকভাবে বেশি।
কবিগান কিংবা মালজোড়া গানের মতোই উরিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। পার্থক্য কেবল এটাই, কবিগান ও মালজোড়াগানের আসর বসে গ্রামীণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য, অন্যদিকে উরিগান পরিবেশিত হয় অনেকটা হিন্দুধর্মীয় আচার-রীতির অংশ হিসেবে। অবশ্য আরেকটু পার্থক্য রয়েছে, কবিগান ও মালজোড়া গানে মাত্র দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী পাল্টাপাল্টি গান-কথায় বাহাস জমান, বিপরীতে উরিগানে একেকটি পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমসে কম কয়েক শ শিল্পী থাকেন! এমন বর্ণিল আর প্রাণবন্ত গানের ধারা সংগীত-সংস্কৃতিতে কমই আছে।
উরিগানকে সংগীতের একটি পরিচ্ছন্ন ধারা বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ গানের চারটা পর্ব রয়েছে—ঝুমুরগান, লাসগান, চাইলগান ও চলতিগান। এসব মূলত নারীবর্জিত গানের ধারা। পুরুষেরাই নৃত্যসংবলিত এ গানের শিল্পী। বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠে সমবেতভাবে কয়েক শ শিল্পী একই সঙ্গে এ গান পরিবেশন করেন। এক পক্ষের পরিবেশনার পর অপর পক্ষ একই আঙ্গিকের পাল্টা গান পরিবেশন করেন। এভাবেই দিনভর গান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি পক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীরা উরিগানে অংশ না নিলেও শ্রোতা হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ ঠিকই থাকে।
২.
ভেড়াডহর গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রামটিতে পৌঁছার আগেই প্রদীপের সুবাদে প্রাথমিক অনেক তথ্য জানা হয়ে যায়। যেমন ভেড়াডহর গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা উরিগান গাইতে ভেড়াডহরে এসেছেন। রীতি অনুযায়ী এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে উরিগান গাইতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের পুরুষদের প্রায় সবাই সাতসকালে গাইতে আসেন।
পরম্পরা অনুযায়ী কবিরপুর গ্রামের মানুষেরাও সেদিন সাতসকালে ঝুমুরগান গাইতে গাইতে নিজেদের গ্রাম থেকে ভেড়াডহর গ্রামে প্রবেশ করেন। ভেড়াডহর গ্রামে ঢুকে ঝুমুরগান গেয়ে তাঁরা মূলত নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন। দুপুরে পৌঁছার কারণে সে আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দেখা হয়নি, তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মানুষের আলাপ থেকে তা ঠিকই জেনে যাই। আমরা যখন গ্রামটিতে পা রাখি, ততক্ষণে লাসগানের পরিবেশনা শুরু হয়েছে।
হিন্দি-বাংলামিশ্রিত লাসগান মগ্ন হয়ে গাইছেন কবিরপুর গ্রামের শিল্পীরা। লাসগান শেষ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে কয়েক শ মানুষ সমবেত কণ্ঠে চাইলগান পরিবেশন করেন। চাইলগানে নৃত্যসংবলিত শারীরিক কসরতের পাশাপাশি শিল্পীরা দুই হাত ওপরে তুলে হর্ষধ্বনিসহযোগে লাফানোর মতো করে অনবদ্য এক দৃশ্যের জন্ম দেন। তাঁদের পরিবেশনার পর একই রকমভাবে ভেড়াডহরের গ্রামবাসীও গানে গানে কবিরপুরবাসীকে পাল্টা জবাব দেন।
শিল্পীরা জানান, ভেড়াডহরের লোকেরা উরিগানের আয়োজক হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁরা রাইপক্ষ, আর কবিরপুরের মানুষ আমন্ত্রিত দল হওয়ায় তাঁরা শ্যামপক্ষ। সে ধারা মোতাবেকই গান পরিবেশিত হয়।
উরিগান উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছিল দোলবেদি