পুলিশি হেফাজতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ছিনতাই মামলার আসামি শাহাদত হোসেন কলমকে আবারো গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় নওগাঁর নিয়ামতপুর থানার মহাদেবপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান শাহাদত হোসেন কলম। 

শাহাদত হোসেন আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম চৌধুরীপাড়ার খোকা মিয়ার ছেলে। 

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর বাজারের বিকাশ দোকানীর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনের মধ্যে আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের চৌধুরী পাড়ার চয়েন চৌকিদারের ছেলে বাধন নামে একজনকে তিলকপুর বাজারেই ধরে ফেলে জনগণ। অপর দু’জন একই গ্রামের শাহাদত হোসেন কলম ও মোস্তাকিন পালোয়ানের ছেলে রাজু পালোয়ানকে ধাওয়া করে আদমদীঘি উপজেলার আমইলে ধরে ফেলে জনগণ। এ সময় ওই দুইজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে জনগণের মধ্যে কেউ একজন রাজু পালোয়ানের পায়ের রগ কেটে দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় কলম টয়লেটে যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ লাইনসের একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং দুজন কনস্টেবল। 

হাসপাতাল থেকে পালানো শাহাদত হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “মহাদেবপুর গ্রামে শ্যালিকার বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আক্কেলপুর থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে। শাহাদতসহ আরো যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে থানায়।” 

এদিকে আসামি পালানোর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বগুড়া পুলিশ লাইনসের রিজার্ভ পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ও কনস্টেবল জাকিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার। 

তিনি বলেন, “ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.

মোস্তফা মঞ্জুরকে প্রধান করে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর অভিযোগে শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা হবে।”

ঢাকা/এনাম/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে যে কারণে চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে

মিয়ানমারে গত মাসের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি মান্দালয়। ২ এপ্রিল মান্দালয় অভিমুখে যাওয়া চীনের রেডক্রসের ত্রাণবোঝাই গাড়িবহরে গুলি চালায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) দাবি করে, গাড়িবহরটিতে ভারী মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রেডক্রসের গাড়িবহর যে যাবে, সেটা আগে থেকে তাদের জানানো হয়নি আর সংকেত দেওয়ার পরও সেগুলো থামেনি।

যদিও কিছু সূত্র জানিয়েছে, এটা অনিচ্ছাকৃত ঘটনা, কিন্তু প্রকৃত কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। যে বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না, সেটা হলো মিয়ানমারে চীনা স্বার্থগুলো অব্যাহতভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। মিয়ানমারের গৃহবিবাদে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে চীন। সামরিক জান্তা ও প্রতিরোধী গোষ্ঠী—দুইয়ের সঙ্গেই সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে চীন, যেটা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গত ২১ মার্চ উত্তর শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওতে চীনের বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ হয়েছে। সামরিক জান্তা ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) মধ্যকার সংঘাতে বাস্তুচ্যুতরা দুই পক্ষের শান্তি আলোচনায় চীনের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করেছেন। প্রতিবাদকারীরা চীনকে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দাবি জানান। জান্তা সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা।

জনগণের হতাশা

মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব যে বাড়ছে, এই প্রতিবাদ সে প্রবণতারই অংশ। সামরিক জান্তার প্রতি সমর্থন, বিতর্কিত প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো—এই তিন কারণে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে চীনের প্রতি হতাশা বেড়েছে।

২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর মান্দালয়ে চীনের দূতাবাসে বোমা হামলা হয়। চীনের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলার তিন দিন পর বিবৃতিতে ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করে এবং জোরালো নিন্দা জানায়।

চীন মিয়ানমারের সেনা সরকারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। তা সত্ত্বেও চীন দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এ বাস্তবতা অঞ্চলটিতে জটিল এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

আরও পড়ুনমিয়ানমারের ভূমিকম্প কি সেনাশাসকের পতন ঘটাবে০৬ এপ্রিল ২০২৫

স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড স্কট ম্যাথিউসন মনে করেন, ‘দূতাবাসে বোমা হামলার পেছনে যারাই থাকুক না কেন, এ ঘটনা এই বার্তা দেয় যে চীনবিরোধী ক্ষোভের কয়েকটি ধারা আছে। সামরিক জান্তা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে এবং চীনের সমর্থনে কোয়াং আর্মির লাশিও দখলে নেওয়ার বিরুদ্ধে রয়েছেন অনেকে। ভয়েস অব আমেরিকাকে ম্যাথিউসন বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের এই ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে চীনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই ক্ষোভ শহরাঞ্চলে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে এবং চীনা নাগরিক, চীনা সম্পদ এবং এমনকি মিয়ানমারের চীনা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে পারে।’

এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে সাগায়িং অঞ্চলে চীনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা চীনের পতাকা ও চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি পুড়িয়েছিলেন। একই ধরনের বিক্ষোভ ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ অন্যত্র হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারের জনগণের কণ্ঠস্বরের প্রতি চীন যেন শ্রদ্ধা দেখায়, সে দাবি জানিয়েছিলেন।

চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জনগণের অভিযোগ যে গভীর, সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো তারই প্রতিফলন। তারা মনে করে, স্থানীয় জনগণের কল্যাণের চেয়ে চীন তার কৌশলগত স্বার্থকেই গুরুত্ব দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা-বক্তব্য

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তিতিয়াওয়ের গবেষণা সেল এবং ইনসিকিউরিটি ইনসাইট যৌথভাবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীন ও চীনের লোকদের লক্ষ্য করে ঘৃণা-বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।

এই সমীক্ষায় গভীর চীনবিরোধী মনোভাব বেরিয়ে এসেছে। অমানবিক ভাষার ব্যবহার, বলির পাঁঠা বানানো থেকে শুরু করে মিয়ানমারের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাক পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

নেটিজেনরা অর্থনৈতিক ব্যাপার নিয়ে চীনের প্রতি উদ্বিগ্ন। চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা এবং অবকাঠামো খাতে আধিপত্য নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুনচীন মিয়ানমারে কী করছে১১ অক্টোবর ২০২৪

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্য ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি মিয়ানমারের (আইএসপি-মিয়ানমার) একটি সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে, প্রধান অংশীজনদের মধ্যে ৫৪ শতাংশই প্রতিবেশী হিসেবে চীনের অবস্থানের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছেন। সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলোর মধ্যে এই মনোভাব আরও জোরালো। এখানে ৭২ শতাংশই মনে করছে, চীন ‘আদৌ ভালো নয়’ অথবা ‘ভালো প্রতিবেশী নয়’। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সশস্ত্র সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের মধ্যে ৫৪ শতাংশ চীনের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছে।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীন ও চীনের লোকদের লক্ষ্য করে ঘৃণা-বক্তব্য মিয়ানমারে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যে বাড়ছে, তারই প্রতিফলন।

এই বৈরী পরিবেশ মিয়ানমারে চীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর ওপর ঝুঁকি বাড়ছে। সেগুলো জনক্রোধের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।

বৈশালী বসু শর্মা কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক

দ্য ইরাবতী থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ
  • পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
  • ২ কিলোমিটার সড়ক, ২০ হাজার শ্রমিকের দুর্ভোগ 
  • আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই: ড. ইউনূস
  • শেষ ভাষণে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যা বলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
  • রন হক সিকদারের ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ 
  • রন হক সিকদারের নামে থাকা ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ
  • আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী: ধর্ম উপদেষ্টা
  • মিয়ানমারে যে কারণে চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে
  • ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা