বরিশালের গৌরনদীতে শিশু সাফওয়ান (৫) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা। বাধার মুখে পড়েছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার মধ্য হোসনাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বিপুল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় উত্তেজিত জনতা ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের বাধা প্রদান করেন। পরে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আবদুল্লাহ খানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাতেও লাভ হয়নি। পরে নিহত সাফওয়ানের বাবা ও দাদা এলাকাবাসীকে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় অনুরোধ করলে তারা সরে যান। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।’’

আরো পড়ুন:

‘ট্যানারি গুদামের ভবনটিতে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না’

রাজধানীতে ট্যানারি গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে

বিপুল হোসেন বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডে দুটি দালান ও তিনটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’

গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

ইউনুস মিয়া বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেলে নিহত শিশুর লাশ হাসপাতালের মর্গ থেকে এলাকায় নিয়ে আসার পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা আসামিদের বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’’

এর আগে, গত বুধবার দুপুরে নিখোঁজ হয় মধ্য হোসনাবাদ গ্রামের ইমরান সিকদারের ছেলে সাফওয়ান সিকদার। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে রাতেই গৌরনদী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাফওয়ানের দাদা বারেক শিকদার।

বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয় মান্না বেপারীর বিল্ডিংয়ের পেছনের একটি জমিতে শিশু সাফওয়ানের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়ে এলাকাবাসী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই দিনই প্রতিবেশী রোমান চৌধুরী, তার স্ত্রী আঁখি বেগম, বোন রাবিনা বেগম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ।

পরে এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ইমরান সিকদার স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ছয় জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। শুক্রবার আসামিদের বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা।

ঢাকা/পলাশ/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরছেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা

দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার কলেজ এবং ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ড সেবা ও হাসপাতাল চালু—এই দুই দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাধান পেয়েছেন। যেসব দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেসবের জন্য রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। এতে আশ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক, দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস২২ ঘণ্টা আগে

তবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা সতর্ক করে বলেন, হাসপাতাল চালুর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গড়িমসি বা ওয়ার্ড সেবা নিয়মিত না হলে তাঁরা আবারও আন্দোলনে যাবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ, মেডিকেল কমিউনিটি ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।

১৫ এপ্রিল থেকে কলেজে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ক্লাসের (হাতে–কলমে শিক্ষা) ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট মড়াসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ গত সোমবার তাঁরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে কেন, কী কারণে আন্দোলন২২ এপ্রিল ২০২৫

গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। একই দিনে সুনামগঞ্জ ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্য বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সেখানে পদায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাঁরা এক সপ্তাহের মধ্যে যোগ দেবেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থাও করা হবে। নতুন হাসপাতাল চালুর বিষয়ে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে ফিরবেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা২১ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ