যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যাকারী ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য ব্লিঙ্কেনকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেনে উপস্থিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় সেখানে হট্টগোলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাকর্মীদের দুই সাংবাদিককে জোর করে ধরে ওই কক্ষের বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। খবর রয়টার্সের।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে ১৫ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ ঘিরে নিজের কূটনৈতিক তৎপরতার পক্ষে কথা বলছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তাকে প্রশ্ন করতে গিয়ে একের পর এক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন সাংবাদিকেরা।

স্যাম হুসেইনি নামের একজন সাংবাদিক চিৎকার করে বলেন, ‘অপরাধী! আপনি কেন হেগে নেই।’ দীর্ঘদিন বহির্বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সমালোচক হিসেবে পরিচিত এই স্বাধীন সাংবাদিক মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং কক্ষে এই সাংঘর্ষিক দৃশ্যের সমাপ্তি ঘটে নিরাপত্তাকর্মীরা হুসেইনিকে ধরে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তারা এই সাংবাদিককে জোর করে কক্ষের বাইরে নেওয়ার সময়ও তিনি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উদ্দেশে অবমাননাকর নানা প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন।

কয়েক দশক ধরে চলে আসা ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতে সর্বশেষ এই রক্তপাত শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। তখন থেকে ইসরায়েলকে সমরাস্ত্র সরবরাহ ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসার জন্য সমালোচিত হয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন।

গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মিকে করে গাজায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল, যাতে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ম্যাক্স ব্লুমেনথাল নামের আরেক সাংবাদিক ব্লিঙ্কেনকে বলেন, ‘মে মাসে যখন একটি চুক্তি হয়েছিল তখন কেন আপনি বোমা পাঠিয়ে গিয়েছিলেন?’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনামুখর সংবাদমাধ্যম গ্রেজোনের সম্পাদক ব্লুমেনথালকেও নিরাপত্তাকর্মীরা ওই কক্ষের বাইরে নিয়ে যান।

আগামী সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে চলা অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নিজের বক্তব্য শেষে সাংবাদকিদের প্রশ্ন করতে বলেন। সে সময় তিনি ছিলেন খুবই শান্ত। কিন্তু এরপর তাঁকে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বিব্রতকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ব্লিঙ্কেনকে। এই যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা ভার্জিনিয়ায় তাঁর বাসার সামনে কয়েক মাস ধরে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন। তাঁরা দফায় দফায় ব্লিঙ্কেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গাড়িতে রক্তের প্রতীক হিসেবে লাল রং ছুড়ে মারতেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র ইসর য় ল অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণের অর্থছাড় নিয়ে আলোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থছাড়ের বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করতে চলতি এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

এটি হতে যাচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আইএমএফের বড় কোনো দলের ঢাকায় দ্বিতীয় সফর।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ২৩৯ কোটি ডলার কিস্তির অর্থ পাবে।

জানা গেছে, ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আইএমএফের একটি দল আগামী ৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। দলটি ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফের দল। দলটি প্রথম দিন ৬ এপ্রিল এবং শেষ দিন ১৭ এপ্রিল বৈঠক করবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে। যদিও সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে মোটাদাগে তিনটি বাধা রয়েছে। এগুলো হলো মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।

তবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। যার কারণে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল আছে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০১২ সালেও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে একই কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস: খলিলুর
  • পদত্যাগ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ওয়াল্টার
  • তাপসের দখল করা জমি ফেরত পাচ্ছে না জেলা পরিষদ
  • ঋণের অর্থছাড় নিয়ে আলোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল