রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে টনক নড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। বিভাগটি এ ধরনের পদোন্নতির বিস্তারিত জানাতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। 

চিঠিতে কারণ ব্যাখ্যাসহ পদোন্নতির ফলে বছরভিত্তিক ব্যাংকের আর্থিক সংশ্লেষের পরিমাণ উল্লেখ করে আগামী ২২ জানুয়রির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।  

সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে সুপারনিউমারারি পদে বিপুল সংখ্যক পদোন্নতি দেওয়া সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশিত হয়। এসব পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়। সংবাদটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দৃষ্টিগোচর হলে চার ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে এ চিঠি দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ওই বিভাগ থেকে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি এবং রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের রাষ্ট্রমালিকাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা-১ এর উপ সচিব আফরোজা আক্তার রিবা’র স্বাক্ষর করা ‘পদ না থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ৭ হাজার ২১৫ জনের পদোন্নতি’ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি তারিখের পত্রিকায় ‘পদ না থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ৭ হাজার ২১৫ জনের পদোন্নতি' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত পদোন্নতির ফলে ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে মর্মে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রকাশিত সংবাদে উক্ত পদোন্নতির ফলে বেতন-ভাতা ও পদমর্যাদার বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ আর্থিক সংশ্লেষ তৈরি করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ও রূপালী ব্যাংক পিএলসি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদানের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর শূন্য পদে জনবল নিয়োগ/যেকোন পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথাযথ বিধি বিধান অনুসরণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়াও অপর এক নির্দেশনায় স্ব-স্ব ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি প্রদানের সুযোগ নেই মর্মে অবহিত করা হয়। উক্ত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে উল্লিখিত সাংগঠনিক কাঠামোতে পদ না থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে যা প্রচলিত বিধিবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

চিঠিতে, সাংগঠনিক কাঠামোতে পদ না থাকা সত্ত্বেও সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি প্রদানের কারণ ব্যাখ্যাসহ উক্ত পদোন্নতির ফলে বছরভিত্তিক ব্যাংকের আর্থিক সংশ্লেষের পরিমাণ উল্লেখ করে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে ২০২৫ সালের ২২ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭ হাজার ২১৫ জনই পদোন্নতি পেয়েছেন সুপার নিউমারারি (পদ ছাড়াই পদায়ন) ভিত্তিতে। নজিরবিহীন এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর অর্গানোগ্রাম বা জনবল কাঠামো ভঙ্গ করে। পদ না থাকলেও এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ইতিহাসে এর আগে কখনই এভাবে গণপদোন্নতির ঘটনা ঘটেনি বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।  এরফলে ব্যাংকগুলোয় এখন শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

সুপার নিউমারারি ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) ও সিনিয়র অফিসার (এসও) পদে। এর মধ্যে কেবল ১ হাজার ৬৭ জনকে এসপিও থেকে এজিএম বানানো হয়েছে। এজিএম হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নির্বাহী পদের প্রথম ধাপ। বেতন-ভাতা ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি এজিএম হওয়া প্রত্যেক কর্মকর্তা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ পান। ক্রয়কৃত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে পান ৪২ হাজার টাকা। এছাড়া এজিএমদের জন্য ব্যক্তিগত কক্ষও বরাদ্দ থাকে। পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কক্ষ ও চেয়ার-টেবিল দিতেই ব্যাংকগুলো এখন হিমশিম খাচ্ছে।

মূলধন ও সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিতে সমস্যায় জর্জরিত ব্যাংকগুলোর অস্তিত্বও টিকে আছে কেবল সরকারি ব্যাংক পরিচয়ে। এগুলোর খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায়। আর রেকর্ডসংখ্যক পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেছনে এ ব্যাংকগুলোর ব্যয় বাড়বে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক সংকটে থাকা রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংকের এ ধরনের পদোন্নতির বিস্তারিত জানাতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠন ক ক ঠ ম আর থ ক স ক প এলস পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

গুলি ছুড়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়ে বনের গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

হবিগঞ্জে বনে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও বনপ্রহরীদের ভয় দেখিয়ে ২০ থেকে ২৫টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে একদল দুর্বৃত্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বনাঞ্চল রেমা–কালেঙ্গায় এ ঘটনাটি ঘটে।

বন বিভাগের হবিগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। যে কারণে ৫০ থেকে ৬০ জনের বনদস্যু দল বনের ভেতরে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

১ হাজার ৮০০ একর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনের ভেতরে সেগুনগাছসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। সম্প্রতি এ বনের গাছ কেটে নেওয়াসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বনের হিমানিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। তারা বনে ঢুকে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির আওয়াজ শুনে বনপ্রহরীরা এগিয়ে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় প্রহরীরা পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে বনদুস্যদের তাড়া খেয়ে বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা বনের ভেতর থেকে একে একে ২০ থেকে ২২টি সেগুনগাছ কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে আজ শুক্রবার সকালে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

রেমা–কালেঙ্গা বন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) আবদুল খালেক বলেন, প্রহরীদের লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়লে তাঁরা পিছু হটেন। কারণ, এ সময় মাত্র তিন প্রহরী দায়িত্বরত ছিলেন। এর বিপরীতে দুর্বৃত্তরা ছিল বেশ সংঘবদ্ধ। বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বনদস্যুরা বেশি গাছ নিতে পারেনি। সেগুন ও আকাশমণি জাতের ২০ থেকে ২২টি গাছ নিয়ে গেছে। আমরা কিছু উদ্ধার করতে পেরেছি। দুর্বৃত্তরা আধুনিক করাত ব্যবহার করে। এই করাত দিয়ে তিন থেকে চার মিনিটে একটি কাছ কাটা যায়।’

হবিগঞ্জ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, এত বড় বন কমসংখ্যক জনবল দিয়ে সংরক্ষণ করা কঠিন। এ ছাড়া বনের কর্মকর্তা ও বনপ্রহরী সবাই এ বনে নতুন যোগদান করেছেন। যে কারণে তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, কী পরিমাণ গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা, তা নির্ণয় ও তদন্তকাজ চলছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রেডক্রসে চাকরি, বেতন ৬০ হাজার
  • আড়ংয়ে বিবিএ অথবা স্নাতকে চাকরির সুযোগ
  • গুলি ছুড়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়ে বনের গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা