চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৪.১%
Published: 18th, January 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পর এবার বিশ্বব্যাংকও কমাল বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে গত জুন মাসে সংস্থাটি বলেছিল, এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। এমন পরিস্থিতি এবং নীতি অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।
অর্থনীতির গতি দুর্বল হওয়ার কারণ হিসেবে আরও সমস্যার কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, দেশে জ্বালানি ঘাটতিসহ সরবরাহ-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং আমদানিতে বিধিনিষেধ শিল্প কার্যক্রমকে দুর্বল করেছে। চাপ বেড়েছে মূল্যস্ফীতির। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে মন্থর হয়ে গেছে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি। দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমে এলেও বাংলাদেশে তা উচ্চ পর্যায়ে স্থির রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও সংকোচনমূলক করা হয়েছে মুদ্রানীতি। তবে চলতি বছরও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হতে পারে। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে তা কমেছে। এটি মুদ্রাবাজার চাপে থাকার প্রতিফলন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোসহ বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেলে তা রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবেচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। আর দেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই হয় ইউরোপে।
গত মাসে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমায় আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে। এর আগে গত অক্টোবরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ দেয় সংস্থাটি। এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাঁর প্রথম বাজেট বক্তৃতায় এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন।
গতকাল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কারণে এ বছর গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমাতে হয়েছে। কারণ অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়ানো হলেও কমানো হয়েছে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের নীতি অনিশ্চয়তা এর বড় কারণ।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রম নিকট ভবিষ্যতে মন্থর থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ফের বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতশীলতা ফিরে আসার পাশাপাশি আর্থিক খাতের সংস্কার সফল হলে, ব্যবসা পরিবেশের উন্নতি হলে ও বাণিজ্য বাড়লেই এটি সম্ভব হবে। মূল্যস্ফীতি কমে এলে সেটিও বেসরকারি ভোগ্যব্যয় বাড়াতে সহায়তা করবে।
তবে আগামী অর্থবছরেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দুর্বল অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বেকারত্ব এখনও উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশে এটি বেড়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সার কেনাসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুই প্রস্তাব অনুমোদন
কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয় ও ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কারিগরি সহায়তা দিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ২১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৫ টাকা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা যোগ দেন। সরকারি কাজে অর্থ উপদেষ্টা বিদেশে অবস্থান করা তিনি সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৫তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১৫তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৫তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৯০.৩৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ইউরিয়া সার ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ক্রয় করা হবে।
সভায় ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কারিগরি সহায়তা দিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী কারখানা ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৮০০ মেট্রিক টন। কারখানার সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও কর্মরত জনবলের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে ওয়ারান্টি প্রিয়ড ২০২৫ সালের ১১ মার্চ তারিখ পরবর্তী টেকনিক্যাল সার্ভিসের জন্য একক উৎসভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য কারখানার সাধারণ ঠিকাদার মেসার্স এমএইচআই, জাপানকে প্রস্তাব করা হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
প্রস্তাবটি কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচআই, জাপানের কাছ থেকে পরামর্শ সেবা এক বছরের জন্য ৭৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
দৈনিক উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ২২ জন বিশেষজ্ঞ ১ বছরের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। এর মধ্যে ৫ জন টোকিও সাইট ও ১৭ জন জিপিএফপিএলসি সাইটে কাজ করবে।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ