বিচারক নিয়োগে হবে সুপ্রিম কাউন্সিল, গণবিজ্ঞপ্তি
Published: 18th, January 2025 GMT
হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা করার সাংবিধানিক নির্দেশনা ছিল। ৪৭ বছরেও এটা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। প্রত্যেকে পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছে। আইন করলে সেটা আর সম্ভব হবে না। এর আগে জুডিশিয়াল সার্ভিস পৃথক হয়েছিল আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ এবং প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা দিতে একটি স্থায়ী কাউন্সিল গঠন করা হবে। এর নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল। পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি। সাত সদস্য হবেন কর্মে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং বিচার কর্ম-বিভাগে নিযুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের একজন করে মোট তিনজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি। এ ছাড়া চেয়ারম্যান মনোনীত আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদাধিকার বলে কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সাবেক জেলা জজ শাহজাহান সাজু সমকালকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত নয়। এ জন্য এই আইন অনুমোদন করতে পারছে। এটা কার্যকর হলে নির্মোহ, দলনিরপেক্ষ ও মেধাবীরা নিয়োগ পাবেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে আইন সংশোধন করা যাবে। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও এমন আইন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিচারক নিয়োগের বিষয়ে ১৯৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল। এর পরও কোনো সরকার এই আইন তৈরি করেনি।
বিচারক নিয়োগে হবে গণবিজ্ঞপ্তি
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে কাউন্সিল। এ ছাড়া আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেবে। সংগৃহীত তথ্য এবং জমা পড়া আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। কাউন্সিলের বিবেচনায় যথাযথ প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে। নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক প্রার্থীর নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন ও প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করবে।
যেভাবে নিয়োগ হবে বিচারক
অতিরিক্ত বিচারকদের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক নিয়োগ করা হবে। এ জন্য কাউন্সিল সুপারিশ প্রণয়ন করে তা প্রধান বিচারপতির কাছে দেবে। চাইলে কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করতে পারবে। আবার কোনো অতিরিক্ত বিচারক স্থায়ী নিয়োগে অনুপযুক্ত হলে কাউন্সিল তাঁকে সুপারিশে বিরত থাকতে পারবে।
শূন্যপদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত জ্যেষ্ঠদের আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগে করা হবে। এ জন্য নির্ধারিত নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন ও প্রধান বিচারপতির কাছে দেবে। প্রধান বিচারপতি সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁর পরামর্শ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। এর ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেবেন। কোনো ক্ষেত্রে এই পরামর্শের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে রাষ্ট্রপতি তথ্য এবং কারণ উল্লেখ করে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন। পুনঃনিরীক্ষণের অনুরোধপ্রাপ্ত হলে প্রধান বিচারপতি যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিলে উপস্থাপন করবেন। বিষয়টি পুনঃনিরীক্ষণ করে সংশোধিত আকারে পুনঃসুপারিশ করতে পারবেন। যথাযথ তথ্য ও কারণ উল্লেখ করে আগে পাঠানো সুপারিশ কোনো সংশোধন ছাড়া পুনরায় বহাল রাখতে পারবেন। সংশোধিত অথবা সংশোধন ছাড়া গৃহীত সুপারিশ প্রধান বিচারপতি তাঁর পরামর্শ আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে পুনরায় পাঠাবেন। ১৫ দিনের মধ্যে পরামর্শ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন রাষ্ট্রপতি।
কাউন্সিলের সভায় নির্ধারণ হবে বিচারকের সংখ্যা
সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনুরোধ পেলে প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের সভা ডাকবেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে কাউন্সিলের সভা ডাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে আপিল, হাইকোর্ট বা উভয় বিভাগের বিচারক পদে সম্ভাব্য শূন্যতা অথবা বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা অথবা নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অথবা এই সব বিষয় সম্মিলিতভাবে বিবেচনাক্রমে কাউন্সিলের সভায় সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এটা প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে জানাবেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করে নিয়োগ সুপারিশ দিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ চাইবেন। উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের সভা ডাকা ও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবেন। হাইকোর্ট বিভাগের কোনো অতিরিক্ত বিচারককে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউন্সিলের সভা ডাকতে হবে না।
কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠান এবং কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ধারা ৯-এর আওতায় হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যূন পাঁচজন, ধারা ১০-এর আওতায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যূন তিনজন এবং ধারা ১১-এর আওতায় আপিল বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে অন্যূন দু’জন সদস্যের উপস্থিতি পর্যাপ্ত বলে গণ্য হবে। কাউন্সিল সাধারণত সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত না হলে সভায় উপস্থিত সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য করবেন। তবে সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বা ক্ষেত্রবিশেষে সভাপতি নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
বয়স হতে হবে ৪৫ বছর
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ ও ৯৮-এর অধীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ দিতে কাউন্সিল সংবিধানে বর্ণিত ন্যূনতম যোগ্যতার অতিরিক্ত হিসাবে থাকবে– প্রার্থীর বয়স কোনোক্রমে ৪৫ বছরের নিচে হবে না, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারবে না, পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।
প্রাধান্য পাবে দক্ষতা-সততা
সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫(২)-এর (ক) দফায় উল্লেখ আছে, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে ন্যূনতম যোগ্যতাসহ প্রার্থীর পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫(২)-এর (খ) দফায় উল্লিখিত বিচার-কর্মবিভাগের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম যোগ্যতাসহ প্রার্থীর বিচারিক আদেশ ও সিদ্ধান্তের মান, আদালত ব্যবস্থাপনা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম যাচাই করতে হবে।
সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে তাঁর নিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা, আদেশ ও সিদ্ধান্তের মান, আদালত ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, সততা ও সুনাম; এবং সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে জ্যেষ্ঠতা, নিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা, আদেশ ও সিদ্ধান্তের মান, আদালত ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, সততা ও সুনামসহ আনুষঙ্গিক বিষয় যাচাই করতে হবে।
সাবেক জেলা জজ ড.
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আইন হওয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ হবে। আইনটি প্রকাশ হলে স্পষ্টভাবে মতামত দেওয়া যাবে। আশা করি, জেলা জজদের মধ্যে অনেকে উচ্চ আদালতে নিয়োগ পাবেন। কারণ, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক ভালো। অধস্তন আদালতে দীর্ঘদিন বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন। উচ্চ আদলতে নিয়োগ পেলে তাদের অভিজ্ঞতা আরও কাজে লাগবে। ন্যায়বিচারে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত ব যবস থ র জন য য গ যত উপস থ সরক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]